নির্লিপ্ত: ম্যাচ জিতিয়েও উচ্ছ্বাসহীন ক্রোমা। পিছনে হতাশ মোহনবাগানের বেইতিয়া। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মোহনবাগান ০ • পিয়ারলেস ৩
খেলার শুরুতেই ১৮ মিনিটে সালভা চামোরোর হেড অল্পের জন্য বাইরে। আর ৩৪ মিনিটে ফ্রান গঞ্জালেসের হেড পোস্টে লেগে ফেরা। তখনই মোহনবাগান গ্যালারিতে শোনা গিয়েছিল কলকাতা ময়দানের প্রচলিত সেই প্রবাদ— বল পোস্টে লেগে ফিরলে সে দিন আর গোল হবে না!
সেই প্রবাদের ফাঁদে জড়িয়েই যে কলকাতা লিগের প্রথম ম্যাচে পিয়ারলেসের কাছে ০-৩ হারের লজ্জা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে, তা বোধহয় মোহনবাগান সমর্থকেরা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। ম্যানেজার কম্পটন দত্তের গলায় ম্যাচ শেষে বিষ্ময়, ‘‘লিগের প্রথম ম্যাচে এ রকম ফল শেষ কবে হয়েছে, মনে করতে পারছি না। পুরো দলটা স্থবির হয়ে গেল!’’ কোচ কিবু ভিকুনার গলাতেও হতাশা, ‘‘প্রথমার্ধেই ম্যাচটা হেরে গিয়েছিলাম। রক্ষণে ভুলের সুযোগ নিয়ে গেল।’’ ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলার ও বর্তমানে পিয়ারলেস কোচ জহর দাসের মুখে তখন হাসি। বলে দিলেন, ‘‘লিগে দল বিপদে পড়লে সুরজিৎ সেনগুপ্ত, চিমা, ব্যারেটোরা ব্যক্তিগত দক্ষতায় ম্যাচ বার করতেন। কিন্তু সেই মানের ফুটবলার এই দলে কোথায়? ওদের একটা ক্রোমা থাকলে বোধ হয় ভাল হত।’’
ঠিকই বলেছেন পিয়ারলেস কোচ। মোহনবাগানকে এ দিন একাই হারিয়ে দিলেন লাইবেরিয়ার আনসুমানা ক্রোমা। দু’টো গোল করলেন। একটি করালেন লক্ষ্মীকান্ত মান্ডিকে দিয়ে। ম্যাচের সেরাও তিনি।
মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনার কৌশল ছিল, আক্রমণের সময় দুই সাইডব্যাক চলে যাবেন উইং হাফের জায়গায়। আর দুই উইঙ্গার শেখ ফৈয়াজ ও আজ়হারউদ্দিন তখন আক্রমণে যাবেন সালভা চামোরোর সঙ্গে। মাঝমাঠে নেমে আসবেন রোমারিয়ো। রক্ষণে দুই স্টপারের মাঝের জায়গায় দাঁড়াবেন গঞ্জালেস। মোহনবাগান তখন ৪-৪-২ থেকে হয়ে যাবে ৩-৪-৩। দ্বিতীয় রণনীতি হল, সেট পিস তুলবেন বেইতিয়া। আর তাতে মাথা ছুঁইয়ে গোল করবেন সালভা চামোরো।
কিবুর দ্বিতীয় রাস্তা পিয়ারলেস কোচ বন্ধ করে দিলেন সালভাকে ‘ডাবল কভারিং’ করে। ডুরান্ডের প্রথম ম্যাচ দেখেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, তাঁর প্রাক্তন দলের ঘাটতি ফিটনেসে। তাই জোর দিয়েছিলেন দ্রুত প্রতি-আক্রমণে। এতেই চূর্ণ মোহনবাগান রক্ষণ। ২১ মিনিটে মাঝমাঠে পঙ্কজ মৌলার সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে ক্রোমা যখন মোহনবাগান রক্ষণে, তখন কোথায় গঞ্জালেস? স্টপার গুরজিন্দরও জায়গায় নেই। ক্রোমা বল ধরে আগুয়ান শিল্টনকে কাটিয়ে কোণাকুণি শটে ১-০ করেন।
দ্বিতীয়ার্ধে স্টপার সুখদেবের পরিবর্তে নামলেন ইমরান। তিনি মাঝমাঠে আসায় গঞ্জালেস স্টপারে চলে যান। আজহারের জায়গায় নামেন নংদাম্বা নাওরেম। কিন্তু দু’ প্রান্ত দিয়ে ঝড় তোলার বদলে মোহনবাগান তখন ক্লান্তির শিকার। প্রচুর ভুল পাস, দুই স্টপারের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যাওয়া, মাঝমাঠে ‘ব্লকিং’ না হওয়ায় আরও সুবিধা হয়ে যায় ক্রোমা-উলফদের। সঙ্গে শিল্টনের অকারণে গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসে বল বিপন্মুক্ত করার প্রবণতা। এই সুযোগেই ৭৭ মিনিটে উলফের থেকে বল ধরে অরক্ষিত লক্ষ্মীকান্তকে দিয়ে গোল করান ক্রোমা।
এক মিনিট পরে মাঝমাঠে ক্রোমা যখন বল ধরছেন, তখন তাঁর গায়ে অরিজিৎ বাগুই। শিল্টন অকারণে গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন। বল শূন্যে উঠে ‘ব্যাক স্পিন’ করে ক্রোমার পায়ে পড়ছে দেখেও গঞ্জালেস ট্যাকল করেননি। ক্রোমাও ফাঁকা গোলে বল ঠেলে ৩-০ করেন। অ্যান্থনি ও অনিল কিস্কু ফাঁকা গোলে বল ঠেলতে পারলে ব্যবধান আরও বাড়তে পারত।
সংযুক্ত সময়ে পেনাল্টি পেয়েছিল মোহনবাগান। কিন্তু চামোরোর সেই পেনাল্টি বাঁচান পিয়ারলেস গোলকিপার জেমস। ম্যাচ শেষে সবুজ-মেরুন গ্যালারিতে চিন্তা— লিগ খেতাব ধরে রাখা যাবে তো? মোহনবাগান কোচ বলছেন, ‘‘৩০-৩১ পয়েন্ট পেলেই চ্যাম্পিয়ন হব। ছেলেদের সেটাই বলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy