Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ

ব্রাত্য তীর্থঙ্করই ডোবালেন নৌকা

বিপক্ষের রক্ষণ ছারখার করে দেওয়ার মতো পাস দিতে পারেন। ময়দানে সেট পিস মাস্টার নামে পরিচিত তিনি। মাঝমাঠের ইঞ্জিন হওয়ার সবরকম গুণ আছে তাঁর।

উল্লাস: ম্যাচের পরে নায়ক তীর্থঙ্কর সরকারের (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়) সঙ্গে সতীর্থদের উচ্ছ্বাস। বৃহস্পতিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

উল্লাস: ম্যাচের পরে নায়ক তীর্থঙ্কর সরকারের (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়) সঙ্গে সতীর্থদের উচ্ছ্বাস। বৃহস্পতিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৩২
Share: Save:

মোহনবাগান ২ • মহমেডান ৩

পুনর্জন্ম শব্দটা এখন সম্ভবত তাঁর জন্য আর খাটে না।

বরং বারবার বাতিল হয়েও যে ফিনিক্স পাখির মতোই নিজের উত্থান ঘটানো যায়, বেলঘরিয়ার তীর্থঙ্কর সরকার বৃহস্পতিবার তা প্রমাণ করে ছাড়লেন। কিবু-বাহিনীর লিগের দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়ার পিছনে তো তাঁরই দুটি পায়ের জাদু। মহমেডান মিডিয়ো পঁচিশ গজ দূর থেকে বাঁক খাওয়ানো ফ্রি-কিকে নিজে তো গোল করলেনই, দলের বাকি দুটি গোলও হল তাঁর ঠিকানা লেখা পাস থেকে।

যাঁর সৌজন্যে এ দিন যুবভারতীতে পালতোলা নৌকো ডুবল, সেই তীর্থঙ্করকে দু’দুবার ছেঁটে ফেলেছিলেন মোহনবাগান কর্তারা। একবার, তিন বছর আগে সনি নর্দের জমানায় এবং শেষ বার গত মরসুমে। কিবুর দলে এ বার জায়গা না পাওয়ায় এ দিনের নায়ক বেছে নেন সাদা-কালো জার্সি। ‘প্রতিশোধ’ শব্দটা ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ছাব্বিশ বছরের তীর্থঙ্করের মুখ থেকে বেরোয়নি। তবে স্প্যানিশ আমার্ডা ধ্বংস করে আসার পর বুদ্ধিমান তীর্থঙ্কর বলে দিলেন ‘‘সামনে মোহনবাগানকে পেয়ে যে বাড়তি উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম সেটা বলতেই হবে। নিজেকে প্রমাণ করার একটা ব্যপার তো ছিলই। তবে এই ম্যাচ জিতে বেশি আনন্দ করতে চাই না। কারণ খেতাব জিততে হলে আরও দুটো ম্যাচ জিততেই হবে।’’

বিপক্ষের রক্ষণ ছারখার করে দেওয়ার মতো পাস দিতে পারেন। ময়দানে সেট পিস মাস্টার নামে পরিচিত তিনি। মাঝমাঠের ইঞ্জিন হওয়ার সবরকম গুণ আছে তাঁর। তা সত্ত্বেও কখনও চোট-আঘাত, কখনও শারীরিক সক্ষমতার ঘাটতি তীর্থঙ্করের ফুটবল জীবনকে বারবার ধাক্কা দিয়েছে। এ দিন দেখা গেল সেই ফুটবলারটির রং-মশাল হওয়ার মুহূর্তের সঙ্গে অদ্ভুত ভাবেই মিলে গিয়েছে তাঁর দল মহমেডানের সাফল্যের ছবি। লিগের শুরুতে যে ক্লাবকে দেখে মনে হচ্ছিল অবনমনে চলে যেতে পারে, এখন তারাই লিগ খেতাব জয়ের রাজপথে। লিগ টেবলের পরিস্থিতি যা তাতে লিগের বাকি দুটি ম্যাচ (পিয়ারলেস ও ইস্টবেঙ্গল) জিততে পারলে দীপেন্দু বিশ্বাসের দলের সামনে খুলে যেতে পারে কলকাতা লিগ জয়ের সিংহ দরজা। কারণ এখন পিয়ারলেসের পরেই দ্বিতীয় স্থানে দীপেন্দু বিশ্বাসের দল।

পুলিশ বেশি টিকিট বিক্রির অনুমতি না দেওয়ায় যুবভারতী এ দিন কার্যত ছিল ফাঁকা। কিন্তু যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা একটি উপভোগ্য ম্যাচ দেখলেন। দেখলেন, পাঁচ -পাঁচটি গোল, যাঁর মধ্যে আবার দুটো দুর্দান্ত ফ্রি-কিক থেকে। দেখলেন, একদল বঙ্গসন্তানের কাছে আত্মসমর্পণ করছেন একসময় বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের ‘বি’ দলের জার্সি পরে খেলে আসা স্প্যানিশরা। শেষ কবে কোনও বড় দলের বঙ্গ বিগ্রেড এ রকম চোখ ধাঁধানো ফুটবল খেলেছে মনে করা যাচ্ছে না। মহমেডানের সাত ফুটবলারই তো কেউ রাজারহাটের, কেউ হাওড়া বা বেলঘরিয়ার বাসিন্দা।

শুরুর এগারো মিনিটের মধ্যেই ২-০ এগিয়ে গিয়েছিল মহমেডান। করিম ওমোলোজাকে দিয়ে গোল করিয়ে নিজে গোল করেন তীর্থঙ্কর। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি ২-১ করে দিলেন মোহনবাগানের জোসিবো বেইতিয়া। দুর্দান্ত একটি ফ্রি-কিক থেকে গোল করেন স্প্যানিশ মিডিয়ো। বিরতির পর মনে হয়েছিল মহমেডানের একতরফা আধিপত্যে থাবা বসাবে কিবু-বাহিনী। সেটা তো হলই না, উল্টে মহমেডান এগিয়ে গেল ৩-১ গোলে। তীর্থঙ্করের পাস থেকে গোল করেন জন চিডি। ছ’মিনিট পর ৩-২ করেন সালভা চামোরো। মোহনবাগানের কোচ কিবু স্বীকার করে নিলেন, ‘‘আমরা সব বিভাগেই ব্যর্থ হয়েছি। মরসুমের সবথেকে খারাপ ম্যাচ খেলেছি।’’ আর মহমেডানের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর উচ্ছ্বসিত দীপেন্দুর মন্তব্য, ‘‘৬-২ গোলে জিততে পারতাম। খেলার চেয়েও কোচিং করানো কঠিন কাজ। দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকল।’’ ফুটবলার-বিধায়ক দীপেন্দুর জীবনে সত্যিই তো আজ সোনালি দিন।

মহমেডান: প্রিয়ন্ত সিংহ, ফিরোজ আলি, করিম ওমোলোজা, প্রসেনজিৎ পাল, সুজিত সাঁধু, সফিকুল রহমান, মুদে মুসা, তীর্থঙ্কর সরকার, সত্যম শর্মা, ভ্যানলাল ছাংতে, জন চিডি (আর্থার কোসি)।

মোহনবাগান: দেবজিৎ মজুমদার, লালরাম চুলোভা (ব্রিটো), কিমকিমা, গুরজিন্দর কুমার, শেখ সাহিল, নংদাম্বা নওরেম, ফ্রান গঞ্জালেস (সালভা চামোরো), রোমারিয়ো জেসুরাজ (শুভ ঘোষ), জোসেবা বেইতিয়া, সুহের ভিপি।

অন্য বিষয়গুলি:

CFL 2019 Mohun Bagan Mohammedan SC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy