অগ্নিগর্ভ: রেফারিকে আক্রমণ মেহতাবের (ডান দিকে)। মাটিতে পড়ে পিয়ারলেস গোলরক্ষক। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ইস্টবেঙ্গল ০ • পিয়ারলেস ১
ক্রোমা-আতঙ্কে থরহরিকম্প ইস্টবেঙ্গল!
গত বছর তাঁর গোলেই পিয়ারলেসের বিরুদ্ধে হেরে কলকাতা লিগ হাতছাড়া হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের। আই লিগেও চলতি বছরের শুরুতে সেই আনসুমানা ক্রোমার গোলেই আইজল এফসি-র কাছে পয়েন্ট নষ্ট করে আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দল।
সোমবার সেই ক্রোমাই ফের কাঁটা হয়ে বিঁধলেন ইস্টবেঙ্গলে। পেনাল্টি থেকে তাঁর গোলেই ০-১ হেরে কলকাতা লিগে পাঁচ নম্বরে নেমে এল ইস্টবেঙ্গল। ৬ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকায় শীর্ষে পিয়ারলেস। তাঁদের কোচ জহর দাস বলছেন, ‘‘ওদের ব্যক্তিগত দক্ষতায় জেতানোর কেউ নেই। আমার ক্রোমা আছে। তফাত সেটাই।’’
খেলা শেষে বৃষ্টির মতো জলের বোতল উড়ে আসছিল মাঠে। যার সূচনা ৬৪ মিনিটে ক্রোমার পেনাল্টি থেকে গোলের পরেই। ইস্টবেঙ্গল বক্সে বাঁ দিক থেকে ঢুকে পড়েছিলেন পিয়ারলেসের পঙ্কজ মৌলা। তাঁকে পিছন থেকে ধাক্কা মারেন রাইটব্যাক কমলপ্রীত সিংহ। রেফারি দীপু রায় পেনাল্টি দিতেই উত্তপ্ত হয় গ্যালারি। এর পরেই ক্রোমা-সহ পিয়ারলেস দল মাটিতে শুয়ে স্বাভাবিক ভাবেই জেতার জন্য সময় চুরির পথে হাঁটতে শুরু করে। যা দেখে আরও তেতে ওঠে রেড রোডের দিকের লাল-হলুদ গ্যালারি। পিয়ারলেসের ক্রোমা-এডমন্ডদের নিশানা করে ছুটে আসতে থাকে জলের বোতল।
লাল-হলুদ শিবিরের হতাশা আরও বাড়ে শেষ পনেরো মিনিটে কোলাদোর হেড ও ব্রেন্ডনের প্রয়াস ব্যর্থ হতে। সংযুক্ত সময়ে পিয়ারলেস গোলকিপার অরূপ দেবনাথের তৎপরতায় পরিবর্ত হিসেবে নামা ইস্টবেঙ্গলের খাইমে সান্তোস কোলাদোর গোলমুখী প্রয়াস ব্যর্থ হয়। অরূপ শুয়ে পড়েন মাটিতে। তাঁকে তুলে ধরে মাটিতে ফেলে দেন কোলাদো। ধাক্কাধাক্কিতে যোগ দেন বোরখা গোমেস পেরেসও। দু’জনেই লাল কার্ড দেখতে পারতেন। রেফারি খেলা শেষ করতেই তাঁর দিকে তেড়ে যান ইস্টবেঙ্গল ম্যানেজার, অধিনায়ক ডিকা ও মেহতাব সিংহ।
পুলিশ শেষমেশ গ্যালারিতে উঠে লাঠি চালালে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ইস্টবেঙ্গল মাঠ। পুলিশের বেপরোয়া লাঠির ঘায়ে আহত হন এক মহিলা-সহ চার সমর্থক। পরে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যায় ক্লাব। খেলা শেষে তাঁবুর সামনে কর্তাদের ঘিরে ধরে সমর্থকরা প্রশ্ন তোলেন, কেন পুলিশ নির্বিচারে লাঠি চালাল? শতবর্ষে লিগ হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে কেন?
ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস যার উত্তরে বলেন, ‘‘এই মাঠ ভাল খেলার যোগ্যই নয়। তাও আমরা শেষের দিকে গোলের দরজা প্রায় খুলে ফেলেছিলাম!’’ লাল-হলুদ শিবিরের কোচ ক্ষুব্ধ পিয়ারলেসকে পেনাল্টি দেওয়া নিয়েও। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা দলের এই পারফরম্যান্সে অন্য গন্ধ পাচ্ছেন। কলকাতা লিগে দ্বিতীয় হারের দিনে ক্লাবের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে, কেউ বা কারা শতবর্ষের বছরে ইস্টবেঙ্গলকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছেন। শুক্রবারের মধ্যেই কর্মসমিতির বৈঠক ডাকছি।’’
গত দু’দিন অনুশীলন না করিয়ে ইস্টবেঙ্গল কোচ ভিডিয়ো বিশ্লেষণে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু তাতেও ক্রোমাকে রোখা যায়নি। প্রথমার্ধে ৩৫ মিনিটে লালরিনডিকার ফ্রি-কিক থেকে মার্কোসের শট বারে লেগে ফেরে। দ্বিতীয়ার্ধে আর ইস্টবেঙ্গলকে খেলার জায়গাই দেননি পিয়ারলেস কোচ। দ্বিতীয়ার্ধে শূন্যে বল ভাসিয়ে খেলতে গিয়ে বিপক্ষের ফাঁদেই পা দিয়ে ফেলেন কোলাদোরা। জিতেন মুর্মুর দু’টি শট বারে না লাগলে ব্যবধান আরও বাড়ত। ৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরে চলে যাওয়ায় সমর্থকেরা প্রশ্ন তুলছেন, কেন কোলাদো-বিদ্যাসাগর শুরু থেকে নয়? কেন উইং থেকে আক্রমণ গড়ে উঠছে না? কেন জবি, জনি আকোস্তা, চুলোভাদের ধরে রাখা গেল না?
এ দিন কোচের দিকে উড়ে এল ঢিল। উঠল ‘গো ব্যাক’ ধ্বনিও। আলেসান্দ্রো মুখে কিছু না বললেও লাল-হলুদে শঙ্কা, ক্রোমাই না লিগের স্বপ্ন ভঙ্গ করেন।
ইস্টবেঙ্গল: লালথুম্মেউইয়া রালতে, মেহতাব সিংহ, বোরখা গোমেস, অভিষেক আম্বেকর, কমলপ্রীত সিংহ, কাশিম আইদারা, লালরিনডিকা রালতে, পিন্টু মাহাতা (সামাদ আলি), ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা, রোনাল্ডো অলিভিয়েরা (বিদ্যাসাগর সিংহ), মার্কোস খিমেনেস দে লা এস্পারা (খাইমে সান্তোস কোলাদো)।
পিয়ারলেস: অরূপ দেবনাথ, অভিনব বাগ, মনতোষ চাকলাদার, ভার্নি কালন, ফুলচাঁদ হেমব্রম, দিপেন্দু দোয়ারি (লক্ষ্মীকান্ত মান্ডি), এডমন্ড পেপরাহ, দীপঙ্কর দাস (পঙ্কজ মৌলা), প্রদীপ মোহনরাজ, ক্রোমা, জিতেন মুর্মু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy