স্বাগত: নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ফিরলেন কলকাতায়। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে ইডেনের গেটে হাজির প্রয়াত বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার বিধায়ক কন্যা বৈশালী। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
তেইশ বছর আগে এমনই এক বিকেলে তিনি যখন কলকাতায় ফিরেছিলেন, স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল জনজীবন। মঙ্গলবার অনেকটা যেন সেই ছবি ফিরে আসার উপক্রম হয়েছিল। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে শুরু করে ইডেন—তাঁকে এক ঝলক দেখার জন্য উদ্বেল ক্রিকেটভক্তেরা।
সৌরভের গাড়ি এসে দাঁড়াতেই আতসবাজির রোশনাইয়ে সিএবি যেন আরও রঙিন হয়ে উঠল। গাড়ি থেকে তিনি নামতেই পুষ্পবৃষ্টিতে ঢেকে গেল চারপাশ। লাল কার্পেটে স্বাগত জানানো হল নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্টকে। প্রবল ভিড় ঠেলে সিএবির ভিতরে তাঁকে নিয়ে যেতে রীতিমতো নাজেহাল পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীরা। সিএবি আধিকারিকরা ফুলের তোড়ায় অভ্যর্থনা জানালেন তাঁকে। কেকও কাটলেন। কিন্তু দুই মুহূর্তকে মেলাতে পারলেন না সৌরভ। বললেন, ‘‘নিঃসন্দেহে এই যাত্রাটা খুবই সুখকর। খুব বড় একটা দায়িত্ব পেয়েছি। আশা করি, যত দিন সময় রয়েছে, তার মধ্যে প্রত্যাশামাফিক কাজ করতে পারব। তবে ১৯৯৬ সালের মুহূর্তটা আজকের চেয়ে তিরিশ গুণ বড়। জীবনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। ভারতের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলার মতো সুখস্মৃতি আর কিছু হয় না।’’
২৩ অক্টোবর সরকারি ভাবে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি কাজ শুরু করবেন। কিন্তু তার আগেই যেন তাঁর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, ‘‘ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব আর ক্রিকেট প্রশাসকের ভূমিকাটা সম্পূর্ণ দু’টো আলাদা ব্যাপার। অধিনায়ক হিসেবে চাপ, প্রত্যাশা, সমালোচনা ছিল অনেক বেশি তীব্র। গোটা ব্যাপারটাই ছিল মাঠের মধ্যে। আর এই দায়িত্বটা মাঠের বাইরের।’’
রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার যাবতীয় জল্পনাকে আবারও উড়িয়ে প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের মন্তব্য, ‘‘আমি গতকাল অমিত শাহ-র টুইট দেখেছি। উনি নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যকে সম্মান করা উচিত।’’ যোগ করলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমি যখন দেখা করেছিলাম, তখনও এ ধরনের রাজনৈতিক প্রশ্ন উড়ে এসেছিল। কিন্তু তার পরের ফলাফলও সকলে দেখেছেন। এই প্রথমবার অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করলাম। সেই অভিজ্ঞতা অবশ্যই অন্য ধরনের। তবে আমি যেমন এক বারের জন্য প্রশ্ন করিনি বোর্ডে কোনও পদ পাব কি না, তেমনই অন্য কোনও ব্যাপার নিয়ে এমন কোনও কথাবার্তা হয়নি যার সঙ্গে রাজনীতির যোগ থাকতে পারে।’’ কিন্তু তার পরেও অনেকে মনে করছেন, যেখানে অমিত শাহর পুত্র জয় শাহ সচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, তখন বোর্ডে প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক একটা প্রভাব থাকবেই। সৌরভের জবাব, ‘‘প্রথমত জয় শাহ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। আর প্রায়ই এটা শোনা যায় যে, বড় খেলোয়াড়ের ছেলে খেলতে পারে না আর বড় কোনও ব্যক্তিত্বের পুত্র ভাল প্রশাসক হতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল ধারণা।’’
বিরাট কোহালির নেতৃত্বে দেশের মাঠে টানা এগারো টেস্ট সিরিজ জয়ের কীর্তির মধ্যেও উঠে আসছে বড় মঞ্চে এখনও ট্রফি না জেতার খামতি। সৌরভ বলেছেন, ‘‘শুধু দেশেই নয়, বিদেশের মাটিতেও এই ভারতীয় দল দারুণ খেলছে। কিন্তু বড় মঞ্চেও ট্রফি জিততে হবে। আমি কখনওই বলব না, প্রত্যেক বারই ওদের চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। সেটা সম্ভব নয়। কিন্তু এই দলের যে ক্ষমতা রয়েছে সেখানে সাতটা বড় টুর্নামেন্টে কেন ট্রফি এল না, তা নিয়েও ভাবতে হবে। ক্রিকেটারদের মানসিক ভাবে আরও তৈরি হতে হবে।’’ যোগ করেন, ‘‘প্রতিভার অভাব এই দলে নেই। না হলে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল পর্যন্ত এত ভাল ক্রিকেট খেলা সম্ভব হত না। তবে এটা নিয়ে অধিনায়ক বিরাটকে সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। বোর্ডে এ নিয়ে কোনও কথা হবে না।’’
‘ফ্লাইংম্যান ঋদ্ধিমান’ প্রসঙ্গে সৌরভ বললেন, ‘‘উইকেটকিপার হিসেবে ঋদ্ধি অতুলনীয়। আমিও তো ওর সঙ্গে খেলেছি। তবে শুধু কিপিং করলেই হবে না। ভাল রানও করতে হবে। একশো টেস্ট খেলতে হলে বড় ইনিংস খেলাও প্রয়োজনীয়।’’ বঙ্গ-ক্রিকেটের দুই মুখ ঋদ্ধিমান এবং মহম্মদ শামিকে ভারতীয় দলে দেখে গর্বিত তিনি। বলেছেন, ‘‘ঋদ্ধি আর শামি খেলছে। খুব তাড়াতাড়ি অভিমন্যু ঈশ্বরনও ভারতের হয়ে খেলবে। এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে। আমি যখন খেলতাম, তখন তো বাংলা থেকে আর কেউই ছিল না।’’
ক্রিকেটজীবনে কোনও সফর থেকে ফেরার সময় তাঁকে নিয়ে যে ভাবে উদ্বেল হয়ে পড়তেন ভক্তেরা, এ দিন কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পরে সৌরভকে নিয়ে সেই উন্মাদনাই ফিরে এসেছিল। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে বার করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে ছিলেন তাঁর ছোটবেলার বন্ধু এবং সিএবি-র সঙ্গে এই মুহূর্তে যুক্ত সঞ্জয় দাস। ভিড় ঠেলে সৌরভকে বার করে আনার ফাঁকেই সঞ্জয় বলছিলেন, ‘‘সৌরভই আবার ভারতীয় ক্রিকেটকে পাল্টে দেবে। ও-ই যোগ্যতম ব্যক্তি।’’
বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর নতুন দলকে নিয়ে সৌরভ দিয়েছেন পরিবর্তনের বার্তা। বলেছেন, ‘‘যখন অধিনায়কত্ব পেয়েছিলাম, কঠিন সময়ের মধ্যে দাঁড়িয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট। এ বারও যখন দায়িত্ব পেলাম তখন ভারত ক্রিকেট প্রশাসনই প্রবল সঙ্কটে আক্রান্ত। সেই ছবি পাল্টাতে হবে। মনে রাখতে হবে ক্রিকেটবিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাশক্তি ভারতই। আমাদের কাজ হবে, সেই অবস্থা ফিরিয়ে আনা। শুধু বোর্ডের অন্দরে নয়, বিশ্বক্রিকেট মানচিত্রেও।’’
আইসিসি যে ভাবে তিন বছর অন্তর ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ এবং প্রত্যেক বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে, তা নিয়ে সৌরভের জবাব, ‘‘আমার মনে হয়, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ এগিয়ে আনা নিয়ে আইসিসি-র আরও ভাবতে হবে। ফুটবল বিশ্বকাপ প্রতি চার বছর অন্তর হয়। তাকে নিয়ে উন্মাদনা কতটা, তা সকলেই জানেন। ফলে আইসিসিকে তা নিয়ে ভাবতে হবে।’’
গোলাপি বলের দিন-রাতের টেস্ট ক্রিকেট চালু করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন সৌরভ, ‘‘ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলার আগে বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, টেস্টের জনপ্রিয়তা বাড়াতে হলে গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট হওয়া দরকার।’’ নতুন ইনিংসেও চমক দেখানোর জন্য তৈরি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy