উদ্বিগ্ন: বাংলার সাঁতারে সংস্কার চান প্রাক্তন সাঁতারু বুলা। নিজস্ব চিত্র
বিশ্বের দীর্ঘতম সাঁতার প্রতিযোগিতার সাংবাদিক সম্মেলন। আর সেখানে বসেই তাঁর বক্তব্য জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন রাজ্যের অর্জুন ও পদ্মশ্রী সম্মানপ্রাপ্ত সাঁতারু বুলা চৌধুরী।
সোমবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে অনুষ্ঠিত মুর্শিদাবাদ সাঁতার সংস্থার এই সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির ছিলেন বেঙ্গল অ্যামেচার সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের (বাসা) সচিব ও সভাপতিও। ছিলেন রাজ্যের ইংলিশ চ্যানেল জয়ী মহিলা সাঁতারু রুশমি শর্মা ও তেহরিনা নাসরিনও। তাঁদের সামনেই বুলা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘সাঁতারের জন্য চারটে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু এই রাজ্য থেকে আগামী দিনের এমন চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু তৈরি করতে পারলাম কোথায়, যারা গোটা দেশ দাপিয়ে ভারতের জন্য বড় সম্মান আনতে পারে।’’
বর্ষীয়ান এই সাঁতারু সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘অন্য রাজ্যের প্রস্তাব থাকলেও সেখানে কখনও যাইনি। পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড বা মহারাষ্ট্রে একই ছাদের তলায় সুইমিং পুল, জিম-সহ সুন্দর পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমার রাজ্যে কিছুই হচ্ছে না। যদি পরবর্তী প্রজন্মের সাঁতারুদের জন্য কিছু না-ই করে যেতে পারি, তা হলে রাষ্ট্রপতি সম্মান ঘরে সাজিয়ে রেখে লাভ কী? প্রয়োজনে সেগুলোকে ফিরিয়ে দিতে হবে।’’ বুলার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এর আগে তিনি বামফ্রন্ট সরকারের সময় রাজ্যের বিধায়ক ছিলেন। তখন বাংলার সাঁতারের পরিকাঠামো বৃদ্ধির জন্য কী পদক্ষেপ করেছিলেন? বুলার উত্তর, ‘‘বিধানসভায় বার বার অ্যাকাডেমির কথা বলা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে তখন কর্ণপাতই করেননি কেউ।’’
বুলার অভিযোগ, ‘‘জেলায় প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু আধুনিক সুইমিং পুল, প্রশিক্ষিত ট্রেনার, জিমন্যাসিয়াম-সহ তাদের গড়ে তোলার পরিকাঠামো পর্যাপ্ত নয়।’’ রাজ্য ক্রীড়া দফতরকে এক হাত নিয়ে তিনি যোগ করেন, ‘‘বর্তমান রাজ্য সরকারের ক্রীড়া দফতর সাঁতারের উৎকর্ষ বৃদ্ধি ও অ্যাকাডেমির জন্য অনেক বার ডেকেছে। কিন্তু ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে সেই বৈঠকে আলোচনা ও পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছুই হয়নি। এই রাজ্যে কি দু’টো আন্তর্জাতিক মানের অ্যাকাডেমি তৈরি করা যায় না?’’
বাসা-র সভাপতি দেবাশিস কুমার যা শুনে বলেন, ‘‘সদ্য দায়িত্ব পেয়েছি। কাজ করতে গিয়ে দেখছি অনেক ঐতিহ্যপূর্ণ সুইমিং ক্লাবেই আমাদের সংস্থার জারি করা নিয়ম মেনে সাঁতার হয় না। তাই সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। বেলেঘাটার সুভাষ সরোবরে অ্যাকাডেমি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।’’ মুর্শিদাবাদ সাঁতার সংস্থা আয়োজিত এ বারের গঙ্গাবক্ষে বিশ্বের দীর্ঘতম ৮১ কিলোমিটার সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে আগামী রবিবার ২৫ অগস্ট। আহিরন ব্যারেজ ঘাট থেকে শুরু হয়ে যা শেষ হবে গোরাবাজার ঘাটে। সেই দিনেই হবে একই সংস্থা আয়োজিত ১৯ কিমি সাঁতারও।
আয়োজক সংস্থার সচিব দেবেন্দ্রনাথ দাস বলেন, ‘‘এ বার ৮১ কিলোমিটার নামবেন ১০ জন পুরুষ ও তিন জন মহিলা। এই ১৩ জনের মধ্যে রয়েছেন রিচা শর্মা-সহ বাংলার ছয় সাঁতারু। এ ছাড়াও বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস, গুজরাত, কর্নাটক ও মহারাষ্ট্র থেকেও সাঁতারুরা আসবেন। ১৯ কিলোমিটারে অংশ নেবেন ৩৫ জন পুরুষ ও ৯ জন মহিলা সাঁতারু।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘৭৬ বছরের এই প্রতিযোগিতা। অথচ সুইমিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া প্রচুর টালবাহানা করে দেরিতে অনুমোদন দিয়েছে। না হলে, ভারতের অন্য রাজ্য ও বিদেশ থেকে আরও প্রতিযোগী যোগ দিতেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy