বিজয়ী: বুদ্ধদেব জানা। নিজস্ব চিত্র
লড়াইটা অনেক দিনের। সেই ছোটবেলা থেকেই। দারিদ্রের সঙ্গে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে। কিন্তু সে সব বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি বুদ্ধদেব জানার। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত প্যারা জুডো কমনওয়েলথ গেমসে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন বুদ্ধদেব। এটাই ছিল বুদ্ধদেবের প্রথম বিদেশ সফর।
প্যারা জুডো প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল বার্মিংহামের ওয়ালসালে। ভারত থেকে ২০ জনের দল যোগ দিয়েছিল। বুদ্ধদেব ৬০ কিলোগ্রামের কম ওজনের বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন। ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁর প্রথম লড়াই ছিল আলেবেনিয়ার খেলোয়াড়ের সঙ্গে। আড়াই মিনিটের মধ্যেই বুদ্ধদেব জয় পান। প্রতিপক্ষদের মধ্যে স্কটল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিরাও ছিলেন। যদিও কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিলেন দেশীয়। এর আগে বুদ্ধদেব দেশের মাটিতে মুখোমুখি হয়েছিলেন সেই প্রতিপক্ষের। গোরক্ষপুরে জাতীয় জুডো চাম্পিয়নশিপে রোহিত নামের ওই প্রতিপক্ষকে হারিয়েছিলেন।
কিন্তু সেমিফাইনালে ঘটে গেল বিপর্যয়। সেই প্রতিপক্ষও ছিলেন দেশের। মধ্যপ্রদেশের কপিল পারমার। তিন মিনিটে ম্যাচ হেরে যান বুদ্ধদেব। পরে ব্রোঞ্জ ফাইনালের জন্য আর একটি ম্যাচ খেলতে হয়। সেই ম্যাচে বিপরীতে ছিলেন শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়। লড়াই বেশ হাড্ডাহাড্ডি হয়। পাঁচ মিনিটের খেলায় দু’জনের পয়েন্ট সমান হয়। ফলে ম্যাচ চলে যায় গোল্ডেন স্কোরে। এই পর্যায়ে প্রথম যে স্কোর করতে পারেন, জেতেন তিনিই। বুদ্ধদেব শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করেন।
জাতীয় প্রতিযোগিতায় বুদ্ধদেব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। একাধিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য রয়েছে। দেশের বাইরে এই প্রথম কোনও প্রতিযোগিতায় যোগ দিলেন। বুদ্ধদেব বললেন, ‘‘প্রথম ভারতের বাইরে খেলা ছিল। ফল আর একটু ভাল করতে পারলে হত। আমি আরও চেষ্টা করব।’’ বুদ্ধদেব পূর্ব মেদিনীপুরের হেঁড়িয়ার নয়াচরা গ্রামের বাসিন্দা। সাতজনের সংসার চালাতে বাবা-মা হিমসিম। ছোট থেকেই অত্যন্ত ক্ষীণ দৃষ্টি বুদ্ধদেবের। সব মিলিয়ে কঠিন লড়াই। বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘সরকার যদি পাশে দাঁড়ায় তাহলে লড়াইটা একটু সহজ হয়।’’ কমনওয়েলথ গেমসের জন্য এক বেসরকারি সংস্থা স্পনসর করেছিল। কিন্তু অনুশীলন, পড়াশোনার খরচও তো আছে। জানালেন বুদ্ধদেব।
বুদ্ধদেব নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্লাইন্ড অ্যাকাডেমির ছাত্র। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক দেবেন। ছাত্রের সাফল্যে জুডো কোচ দিব্যেন্দু হাটুয়া এবং প্রিন্সিপাল বিশ্বজিৎ ঘোষ খুশি। বিশ্বজিৎ বললেন, ‘‘নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক সাফল্য। আগে দু’তিন জন করে জাতীয় স্তরে যোগ দিত। বর্তমানে ২১ জনের দল যাচ্ছে হায়দরাবাদের প্রতিযোগিতায়। সকলেই রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করছেন।’’
তবে অর্থাভাব একটা বড় সমস্যা। প্রিন্সিপাল চাইছেন, প্রতিযোগীদের রাজ্য সরকার উৎসাহ দিক। তাতে বুদ্ধদেবদের মতো প্রতিযোগীদের লড়াইটা
সহজ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy