ফাইল চিত্র।
সত্যি বলতে কী, একটা টেস্ট যে দু’দিনেরও আগে শেষ হয়ে যেতে পারে, এতটা ভাবতে পারিনি। ভারত জিতবে জানতাম, কিন্তু তা বলে দেড় দিনে? এই টেস্ট আরও একটা ব্যাপার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ঘূর্ণি উইকেটে স্পিন খেলার ব্যাপারে ব্যাটসম্যানদের দৈন্যদশা। ইংল্যান্ডের তো বটেই, কিছুটা ভারতেরও।
প্রথম দিনের খেলা যখন শেষ হয়, ইংল্যান্ডের ১১২ রানের জবাবে ভারত ৯৯-৩। মনে হচ্ছিল, অন্তত ২৫০-৩০০ রান তুলে দেবে ভারত। কিন্তু বৃহস্পতিবার, দ্বিতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টায় জো রুটের অফস্পিনের সামনে ভারত ভেঙে পড়ে ১৪৫ রানে! অনেকের মতো আমিও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, রুট আট রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়েছে! ৩৮ বছর পরে কোনও ইংল্যান্ড অধিনায়ক টেস্টে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিল। শেষ নিয়েছিল বব উইলিস। চোখ কচলে টিভির সামনে বসতেই আবার ধাক্কা। এ বার ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের শোভাযাত্রা। দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম বলেই জ্যাক ক্রলির স্টাম্প ছিটকে দিল অক্ষর পটেল। ইনিংস শেষ হল ওয়াশিংটন সুন্দরের নেওয়া উইকেটে। এর পরে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৪৯ রান তুলতে কোনও সমস্যাই হয়নি ভারতের। তখনও দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হতে প্রায় দু’ঘণ্টা বাকি! তিন টেস্টের পরে ভারত সিরিজে এগিয়ে ২-১।
ক্রিকেট মহল এবং সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তর্ক শুরু হয়েছে, এই পিচ কতটা খারাপ। দেখুন, পিচ যে খারাপ ছিল, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। একটা পরিসংখ্যান দেখলাম, ভারতের খেলা যে সব টেস্টে ফল হয়েছে, সেই তালিকায় এটাই সংক্ষিপ্ততম টেস্ট। এই টেস্টে খেলা হল ১৪০.২ ওভার। এর আগে সংক্ষিপ্ততম টেস্ট ছিল ভারত বনাম বাংলাদেশের দিনরাতের দ্বৈরথ। ইডেনে খেলা হয়েছিল ১৬১.২ ওভার। প্রথম দিন থেকেই মোতেরায় গোলাপি বল ঘুরেছে, ধুলো উড়েছে। বোলারদের ফুটমার্কের ওখানে গর্ত হয়ে যাচ্ছিল। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা এমনিতেই স্পিন খেলতে পারে না, এই উইকেটে তো স্রেফ আত্মসমর্পণ করে বসল। একটা কথা বলতে চাই। ভারত এখন এক নম্বর দল। এই ইংল্যান্ডকে হারাতে এ রকম পিচের কোনও দরকার নেই। অন্তত চার-সাড়ে চার দিন যাতে খেলা চলে, সেটা দেখা উচিত। আমি নিজে অনেক রকম ঘূর্ণি পিচে খেলেছি। কিন্তু এতটা কঠিন পরীক্ষা কখনও দিতে হয়নি। এই পিচের কাছাকাছি আসবে ১৯৮৭ সালে ভারত-পাকিস্তান সিরিজের বেঙ্গালুরু টেস্ট। যেখানে সুনীল গাওস্কর দেখিয়ে দিয়েছিল, স্পিন কী ভাবে খেলতে হয়। স্পিনের বিরুদ্ধে ভাল খেলতে গেলে শুধু ফ্রন্টফুট বা ব্যাকফুটে গেলেই চলবে না। কখনও পুরো স্টেপ আউট করতে হবে, কখনও ক্রিজের গভীরতাকে কাজে লাগাতে হবে। বলের উপরে ব্যাটটাকে নিয়ে গিয়ে স্পিন নির্বিষ করে দিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের শট খেলতে হবে। স্পিনারকে মাথায় চড়তে দিলে হবে না। এই ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সে রকম ব্যাটিং করার ইচ্ছা বা দক্ষতা দেখলাম না। এই পিচে বল না বুঝে আগে থেকে ব্যাকফুট বা ফ্রন্টফুটে চলে গেলে এলবিডব্লিউ বা বোল্ড প্রায় নিশ্চিত। এবং, সেটাই হল। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে সাতটাই হয় বোল্ড না হয় এলবিডব্লিউ।
এই রকম ঘূর্ণি পিচে সব চেয়ে ভয়ঙ্কর হয় সোজা হয়ে যাওয়া বল। অক্ষর বেশ ক’টা বল ঘুরিয়েছে। কিন্তু উইকেট পেয়েছে আর্মার বা সোজা বলে। রাউন্ড আর্ম অ্যাকশনের জন্য ও বলটাকে ভিতরে নিয়ে আসতে পারে। সেটাই ইংল্যান্ডকে শেষ করে দিল। অত্যন্ত বুদ্ধিমান ক্রিকেটার অক্ষর। এই উইকেটে যে ভাবে বল করতে হয়, সে রকমই করে গেল। দু’ইনিংস মিলিয়ে ১১ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার এই বাঁ-হাতি স্পিনার। অন্য দিকে আর অশ্বিনের চারশো টেস্ট উইকেট (৪০১) হয়ে গেল ৭৭ টেস্টে। মুথাইয়া মুরলীধরনের পরে দ্রুততম চারশো উইকেট। এই ভারতীয় দলে সেরা ম্যাচ উইনার অফস্পিনার অশ্বিনই। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে ম্যাচ উইনারের তালিকায় আমি ওকে অনিল কুম্বলের ঠিক পরেই রাখব। প্রশ্ন উঠতে পারে, বেদী-চন্দ্র-প্রসন্নদের মতো স্বর্ণযুগের স্পিনারদের নয় কেন? আমার মতে, বর্তমান ক্রিকেটে স্পিনারদের কাজ অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছে। শুধু ফ্লাইটে ভরসা করে থাকলে ব্যাটসম্যানরা মেরে বলের সুতো খুলে দেবে। দরকার বৈচিত্রের। আর সেখানেই একশোয় একশো পাবে অশ্বিন।
এই ভারতীয় দলের যা শক্তি, তাতে যে কোনও উইকেটই ওরা ইংল্যান্ডকে হারাতে পারে। এই ধরনের ঘূর্ণি পিচে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়ে যায়। রুটের স্পিনের সামনে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের আত্মসমপর্ণ সে কথাটাই প্রমাণ করে। এ দিন ৪৬ রান তোলার পথে সাতটি উইকেট হারায় বিরাট কোহালির দল। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরাও কিন্তু নিজেদের প্রয়োগ করতে ব্যর্থ। সেই ব্যাটিং বিপর্যয় যে বিশাল ক্ষতি করে দেয়নি, এটাই ভাগ্যের। তাই এই রকম ঘূর্ণি পিচ করার আগে দু’বার ভেবে নেওয়া উচিত ভারতের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy