ট্রেভর বেলিস।—ফাইল চিত্র।
গোলাপি বলের বিপ্লবের শুরুটা তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। ২০১৭ সালে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার দিনরাতের টেস্টে তিনিই ছিলেন জো রুটদের কোচ। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন কোচ ট্রেভর বেলিস একটা সতর্কবার্তা শুনিয়ে রাখছেন মহম্মদ শামিদের— ‘‘সুইং পাবে ঠিকই, কিন্তু সেই সুইংটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’’
বেলিসের যে শুধু অ্যাডিলেড টেস্টের সময়ই গোলাপি বলের অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা নয়। ইংল্যান্ডের মাটিতেও গোলাপি বলের ক্রিকেটের সঙ্গে জুড়ে ছিলেন তিনি। লাল এবং গোলাপি বলের মধ্যে পার্থক্য কী দেখেছেন? বলের রং বদল কতটা প্রভাব ফেলতে পারে খেলাটার উপরে?
এই মুহূর্তে আবু ধাবিতে টি-টেন লিগের কোচের দায়িত্বে রয়েছেন বেলিস। আনন্দবাজারের প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘‘এটা দেখেছি, লাল বলের চেয়ে গোলাপি বল বেশি সুইং করে। কিন্তু এখানেই পার্থক্যটা শেষ হয়ে যাচ্ছে না। আরও একটা বড় পার্থক্য আছে। গোলাপি বল একটু অন্য রকম সুইং করে।’’
সেই অন্য রকম সুইংটা কী? ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জেতানো কোচ বুঝিয়ে দিলেন, ‘‘গোলাপি বলে সুইংটা কিন্তু সব সময় হিসাব মেনে চলে না। মানে পেসাররা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না সুইংটা। ওরা নিশ্চিত করে বলতে পারে না, কোন দিকে বল সুইং করবে।’’ এর পরে আরও একটা অবাক করা কথা বললেন বেলিস। ‘‘আমি নিজে এমন কয়েকটা ঘটনা জানি, যেখানে পেসার ইনসুইং বল করতে চেয়েছিল, কিন্তু সেটা আউটসুইং হয়ে যায়। সুইং নিয়ন্ত্রণ করাটা তাই একটা সমস্যা। সেটা করতে পারলে, কিন্তু সুইং বোলাররা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।’’
ভারতীয় ক্রিকেট মহলে এখন সব চেয়ে আলোচিত বিষয়টি হল ২২ নভেম্বর থেকে শুরু ইডেনে ভারত-বাংলাদেশ দিনরাতের টেস্ট। দু’বছর আগে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের দিন রাতের টেস্টও এই ভাবে শিরোনামে উঠে এসেছিল। অ্যাডিলেডে মিচেল স্টার্ক এবং জিমি অ্যান্ডারসন বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন। দু’ইনিংস মিলিয়ে স্টার্ক আটটি, অ্যান্ডারসন ছ’টি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। স্টার্কদের দাপটের কাছে অবশ্য হার মানতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। সেই টেস্টের কথা উঠতেই বেলিস বলছেন, ‘‘অ্যাডিলেডে বল ভাল সুইং করেছিল। স্টার্ক আর অ্যান্ডারসন— দু’জনেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। জিমি এমনিতে খুব ভাল সুইং বোলার। নিজের সুইংটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরে ও সফল হয়েছিল।’’
সেই সুইংটা যদি ইডেনে পেসাররা পান, তা হলে কিন্তু সমস্যায় পড়বেন ব্যাটসম্যানেরা। বেলিস আরও একটা ব্যাপারে সতর্ক করে দিতে চান ব্যাটসম্যানদের। তিনি মনে করেন, দিনরাতের ম্যাচের একটা বিশেষ সময় বল বেশি সুইং করে। ‘‘আমি ঠিক কারণটা বলতে পারব না, তবে এটা দেখেছি ঠিক সন্ধ্যার মুখে বল বেশি সুইং করে। ওই সময় কিন্তু সমস্যায় পড়ে যায় ব্যাটসম্যানেরা। একে তো ফ্লাডলাইট জ্বলে উঠলে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। তার উপরে সুইং। তাই ওই সময়টা ব্যাটসম্যানদের পক্ষে সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়।’’
সন্ধ্যা হওয়ার মুহূর্তে যে কিছুটা সমস্যা হয়, তা দিন কয়েক আগেই বলেছিলেন চেতেশ্বর পুজারা। এই ব্যাটসম্যানের ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে গোলাপি বলে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে যে সব ব্যাটসম্যান গোলাপি বলের পরীক্ষায় বসতে চলেছেন, তাঁদের জন্য কী পরামর্শ থাকবে?
বেলিস যে যে পরামর্শ দিচ্ছেন, তা হল: এক, বলটা যতটা বেশি সম্ভব দেরিতে খেলতে হবে। ভাল ব্যাটসম্যানেরা সব সময়ই দেরিতে শট খেলার চেষ্টা করে। কিন্তু এখানে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ বেশি অপেক্ষা করতে হবে। দুই, শরীরের চেয়ে বেশি দূরের বলে প্রথম দিকে শট খেলতে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। যতটা সম্ভব শরীরের কাছে বলকে আসতে দিতে হবে। তিন, বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে যাতে ব্যাট ও প্যাডের মধ্যে খুব কম ফাঁক থাকে। চার, আড়াআড়ি ব্যাটের শট যতটা সম্ভব ছেঁটে ফেলতে হবে।
গোলাপি বল নিয়ে আরও একটা কথা উঠছে। বলা হচ্ছে, স্পিনারদের সমস্যা হয়ে যেতে পারে এই বলে। কতটা যুক্তিসঙ্গত এই বক্তব্য? নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বেলিস গোলাপি বল নিয়ে একটা কথা বলছেন। তাঁর মতে,‘‘গোলাপি আর লাল বল, এই দুটো দেখে আমার মনে হয়েছে, গোলাপিটা একটু নরম। ব্যাটে লাগার সময় একটু অন্য রকম শব্দ করে। শুধু আমারই নয়, কয়েক জন ব্যাটসম্যানেরও একই ধারণা।’’ এর পরেই হাসতে হাসতে যোগ করেন, ‘‘তবে বল প্রস্তুতকারকরা আমার কথা নিশ্চয়ই উড়িয়ে দিতে চাইবেন।’’
ইংল্যান্ডে খেলা হয় ডিউকস বলে। অস্ট্রেলিয়ায় কোকাবুরা। ভারতে গোলপি বল তৈরির দায়িত্বে আছে এসজি। পুজারাই কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, তিনি আশা করছেন এসজি বলের মান ভালই হবে। বেলিস বলছেন, ‘‘এটা ঠিক যে, বল নরম হয়ে গেলে স্পিনারদের গ্রিপ করতে একটু সমস্যা হয়। কিন্তু পাশাপাশি এটাও বলব, ভাল স্পিনারদের কাছে এই ছোটখাটো সমস্যা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।’’ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দিনরাতের টেস্টে সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নেথান লায়ন। দুই ইনিংস মিলিয়ে ছয় উইকেট নিয়ে।
সবার শেষে বেলিস এও বলে দিচ্ছেন, ‘‘যারা বিশ্বমানের, তাদের কোথাও কোনও সমস্যা হয় না। সে জন্যই তারা বিশ্বমানের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy