Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ইংল্যান্ডে জুডোর লড়াইয়ে নরেন্দ্রপুরের দৃষ্টিহীন ছাত্র

ইংল্যান্ডে পাড়ি দেওয়াটা সহজ ছিল না বুদ্ধদেবের। হেঁড়িয়ার নয়াচরা গ্রামের বাসিন্দা। লড়াই ছোট থেকেই। সেই লড়াই আর্থিক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে। বাবা লক্ষ্মীকান্ত চাষবাস করেন।

বুদ্ধদেব জানা

বুদ্ধদেব জানা

দীপক দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪৬
Share: Save:

ধীরে ধীরে কমছিল চোখের আলো। পড়তে অসুবিধা হত। বাধ্য হয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে আসতে হয় কলকাতায়। ভর্তি হতে হয় দৃষ্টিহীনদের স্কুলে। শুরু নতুন লড়াই। সেই লড়াই জয় করেছেন বুদ্ধদেব জানা। এখন নতুন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত তিনি। পূর্ব মেদিনীপুরের পড়ুয়াটি চলতি মাসেই যোগ দিতে চলেছেন ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত প্যারা জুডো কমনওয়েলথ গেমসে।

ইংল্যান্ডে পাড়ি দেওয়াটা সহজ ছিল না বুদ্ধদেবের। হেঁড়িয়ার নয়াচরা গ্রামের বাসিন্দা। লড়াই ছোট থেকেই। সেই লড়াই আর্থিক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে। বাবা লক্ষ্মীকান্ত চাষবাস করেন। বুদ্ধদেবরা চার বোন এক ভাই। বাড়ির সব থেকে ছোট তিনি। সাত জনের সংসার চালাতে বাবা-মা হিমশিম। এ দিকে বুদ্ধদেবের চোখের সমস্যা ছোটবেলা থেকেই। মা জ্যোৎস্না জানা বললেন, ‘‘মাত্র তিন মাস বয়সে সমস্যা ধরা পড়ে। ছেলে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। কিন্তু চোখের সমস্যা বাড়ছিল।’’ বাবা-মা চিন্তায় পড়লেন।

সমস্যার সমাধান হল প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকার পরামর্শে। তিনি বুদ্ধদেবকে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করতে বলেন। বুদ্ধদেবদের এক আত্মীয় নরেন্দ্রপুর কলেজের কর্মী। তিনিই খোঁজখবর এনে দেন। ২০১০ সালে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি হন বুদ্ধদেব। দ্বিতীয় শ্রেণিতে। এখান থেকেই মাধ্যমিক দিয়েছে। ব্লাইন্ড স্কুলের প্রিন্সিপাল বিশ্বজিৎ ঘোষ বললেন, ‘‘এখন বুদ্ধদেবের বয়স ২০ বছর। জন্ম থেকেই চোখ খারাপ। প্রায় দৃষ্টিহীন। এখানে ব্রেইলে পড়াশোনা। মাধ্যমিক পাশ করেছে মিশন থেকেই। এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে।’’ মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছিলেন বুদ্ধদেব। ৮৭ শতাংশ নম্বরও পেয়েছিলেন। কলা বিভাগে পড়েন এখন। প্রিন্সিপাল জানালেন, খেলাধুলোতেও বেশ ভাল বুদ্ধদেব। আগে ক্রিকেট খেলতেন। সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। বুদ্ধদেব বললেন, ‘‘আগে সুইমিং করতাম। ২০১৭ সালে সুইমিংয়েও গোল্ড পেয়েছি। ন্যাশনাল প্রতিযোগিতায় আটটি সোনা আছে।’’

বছর তিনেক আগে নরেন্দ্রপুরে শুরু হয় জুডো শেখার ব্যবস্থা। বেঙ্গল প্যারা জুডো অ্যাসোশিয়েশন থেকে দিব্যেন্দু হাটুয়াকে প্রশিক্ষক হিসেবে পাঠানো হয়। বুদ্ধদেব জুডো শিখতে শুরু করেন। পরপর সাফল্য আসতে থাকে। প্রথম সাফল্য এল দু’বছর আগে। ওয়েস্ট বেঙ্গল প্যারা জুডো অ্যাসোসিয়েশনের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপে বুদ্ধদেব জয়ী হন। লখনউয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পারেননি বুদ্ধদেব। কারণ সে বছর মাধ্যমিক ছিল। মাস ছয়েক আগে গোরক্ষপুরে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সেখানে সোনা পান। এর পরে ইংল্যান্ডের প্রতিযোগিতার নির্বাচনের জন্য মহড়ায় ডাকা হয়েছিল চেন্নাইয়ে। নির্বাচিত হন বুদ্ধদেব।

কিন্তু নির্বাচনের পরে দেখা গেল অন্য সমস্যা। ইংল্যান্ডে যাওয়ার জন্য অর্থ লাগবে। প্রিন্সিপাল বিশ্বজিৎ জানালেন, জাতীয় প্যারা জুডো সংস্থার সম্পাদক মনোহর আনজার জানিয়েছিলেন, এক লক্ষ ১৩ হাজার টাকা জোগাড় করতে হবে। পাসপোর্ট-সহ নানা খরচের জন্য ওই অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু এত টাকা বুদ্ধদেবের পরিবারের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। বাবার অসুস্থ শরীর। বেশি কাজ করতে পারেন না। বুদ্ধদেবের এক কাকা সাহায্য করেন। আরও কয়েক জনের সহায়তায় পড়াশোনা এবং সংসার চলে। সমস্যার সমাধান হয় বেসরকারি একটি সংস্থা এগিয়ে আসায়। ২৩ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডে যাবেন বুদ্ধদেব। ২৫ তারিখ থেকে চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু। এখন জোরকদমে অনুশীলন চালাচ্ছেন। দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টা অনুশীলন চলছে।

প্রথম বিদেশ সফরের আগে কী মনে হচ্ছে?

বুদ্ধদেব বললেন, ‘‘সকলে এত কষ্ট করে পাঠাচ্ছেন। তাতে যদি কোনও পদক পেতে পারি ভাল হয়।’’ এর মধ্যে পড়াশোনাও তো রয়েছে? বুদ্ধদেব বললেন, ‘‘আমাদের পড়াশোনা, খেলাধুলো সব কিছুর সময় ভাগ করে দেওয়া আছে। তাই অসুবিধে হয় না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Judo Student England
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy