লক্ষ্য: লকডাউনেও নিজেকে ফিট রাখতে মাঠে নেমেছেন ভাইচুং।
ভারতীয় ফুটবলে নিয়মিত খেলা শেষ বাঙালি স্ট্রাইকারের নাম দীপেন্দু বিশ্বাস। তাও প্রায় বছর পনেরো আগে খেলছেন তিনি। তার পর থেকে শুধুই অন্ধকার। এমনকি, কলকাতার তিন প্রধানের প্রথম একাদশেও বাঙালি স্ট্রাইকারেরা নিয়মিত সুযোগ পান না। আর তাই স্ট্রাইকার অ্যাকাডেমি (আইএফএ স্ট্রাইকার্স স্কুল অব এক্সিলেন্স) গড়তে উদ্যোগী বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থা।
আইএফএ-র এই পরিকল্পনা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। কারণ, প্রস্তাবিত এই স্কুলে নেওয়া হবে শুধু স্ট্রাইকারদেরই!
ক্রিকেটে এই ধরনের অ্যাকাডেমি গড়ে তোলা কঠিন নয়। সেরা উদাহরণ চেন্নাইয়ের এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশন। কিংবদন্তি অস্ট্রেলীয় পেসার ডেনিস লিলির কোচিংয়ে সেখান থেকেই উঠে এসেছেন জাভাগল শ্রীনাথ, বেঙ্কটেশ প্রসাদ, জাহির খান, এস শ্রীসন্থের মতো একঝাঁক তারকা।
ফুটবলে তা কী করে সম্ভব? ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ভাইচুং ভুটিয়া রীতিমতো বিস্মিত। বললেন, ‘‘একেবারেই অবাস্তব পরিকল্পনা।’’ কেন? ভাইচুংয়ের প্রশ্ন, ‘‘ফুটবলারদের উন্নতির জন্য বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় খেলতেই হবে। সে ক্ষেত্রে কি এগারো জন স্ট্রাইকারকে নিয়ে দল গড়া হবে?’’ দক্ষিণ আমেরিকার উদাহরণ দিয়ে জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক যোগ করলেন, ‘‘রাস্তায় ম্যাচ খেলে বড় হয় দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলারেরা। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলা।’’ ভাইচুংয়ের মতে, শুধু স্ট্রাইকারদের অ্যাকাডেমি না করে তাদের জন্য বিশেষ অনুশীলনের ব্যবস্থা করা উচিত। বললেন, ‘‘আমার মনে হয়, সব পজিশনের ফুটবলারদের নিয়ে অ্যাকাডেমি গড়ার দিকে নজর দেওয়া উচিত। সেখানে স্ট্রাইকারদের জন্য বিশেষ অনুশীলনের ব্যবস্থা করতে হবে।’’
আইএফএ কর্তারা যদিও স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, স্ট্রাইকার স্কুলে শুধু স্ট্রাইকারেরাই থাকবে। অন্য কোনও পজিশনের ফুটবলার নেওয়া হবে না। স্ট্রাইকারদের দক্ষতা প্রমাণ হয় বিপক্ষের ডিফেন্ডার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ের নিরিখে। অ্যাকাডেমিতে যদি কেউ বাধা দেওয়ারই না থাকে, তা হলে স্ট্রাইকারেরা কতটা দক্ষ তা কী ভাবে বোঝা যাবে? বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থার কর্তারা জানালেন, টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী মাঝেমধ্যে শুধু অনুশীলনে ডাকা হতে পারে ডিফেন্ডার, গোলকিপারদের।
আইএফএ-র লক্ষ্য, ভবিষ্যতের জন্য স্ট্রাইকার তৈরি করা। যারা বিভিন্ন ক্লাবে খেলার সুযোগ পাবে। প্রস্তাবিত স্ট্রাইকার স্কুল কোনও প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেবে না। এই স্কুলের স্ট্রাইকারদের সুযোগ দেওয়া হবে আইএফএ-র প্রধান অ্যাকাডেমির হয়ে খেলতে। যা বারাসতে দীর্ঘ দিন ধরেই বন্ধ হয়ে রয়েছে! লকডাউন শেষ হওয়ার পরে সোনারপুরে এই অ্যাকাডেমি স্থানান্তরিত করে নতুন ভাবে শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আইএফএ-র প্রস্তাবিত স্ট্রাইকার স্কুলের দায়িত্বে রয়েছেন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, শিশির ঘোষ, দীপেন্দু বিশ্বাস, সঞ্জয় মাঝি ও রহিম নবির মতো তারকারা। ভাইচুংয়ের মতো দীপেন্দুও মনে করেন, শুধুমাত্র স্ট্রাইকারদের নিয়ে অ্যাকাডেমি গড়া সম্ভব নয়। তিনি বললেন, ‘‘আইএফএ-কে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, শুধু স্ট্রাইকারদের নিয়ে অ্যাকাডেমি হয় না। গোলকিপার, ডিফেন্ডার, উইঙ্গার নিতেই হবে। উইং থেকে বল না এলে স্ট্রাইকার গোল করবে কী করে? ডিফেন্ডার ও গোলকিপারকে পরাস্ত করে গোল করাটাই তো স্ট্রাইকারের আসল পরীক্ষা।’’ তিনি যোগ করলেন, ‘‘সব পজিশনের ফুটবলারই থাকতে হবে। তার মধ্যে স্ট্রাইকারের সংখ্যাটা বেশি রাখতে হবে।’’
প্রাক্তন তারকাদের প্রস্তাব মেনে বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থার কর্তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন কি না, তা সময়ই বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy