স্বীকৃতি: অরুণ লালকে সম্মান রাহানের। রয়েছেন সৌরভও। নিজস্ব চিত্র
অরুণ লাল এমনই এক যোদ্ধার নাম, যিনি কখনও হারতে শেখেননি। বিধ্বংসী পেসার থেকে দূরারোগ্য ক্যানসার— সকলে তাঁর লড়াইয়ের সামনে হার মেনেছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৫৬ ম্যাচে তাঁর রানসংখ্যা ১০৪২১। সেঞ্চুরি ৩০টি। ভারতের হয়ে ১৬টি টেস্ট ও ১৩টি ওয়ান ডে খেললেও স্থায়ী হতে পারেননি যথেষ্ট সুযোগ না পাওয়ায়। যদিও ৬৪ বছর বয়সে তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই বাংলার কোচের। শনিবার সিএবি-র জীবনকৃতি সম্মান পেয়ে তিনি আবেগপ্রবণ, উত্তেজিত ও ভবিষ্যতে সাফল্যের জন্য একই রকম মরিয়া।
জীবনকৃতি হাতে পাওয়ার আগেই আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়ে গেলেন, ক্রিকেটার হিসেবে যেমন রঞ্জি ট্রফি জিতিয়েছেন, কোচ হিসেবেও তা ফিরে পাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরও বিশ্বাস, ‘‘১৯৮৯-৯০ মরসুমে পিগিদা (অরুণ লাল) অসাধারণ খেলেছিল। বাংলার হাতে রঞ্জি ট্রফি তুলে দিয়েছিল। এ বার ২০১৯-২০ মরসুম। পয়া ৯ নম্বরটি রয়েছে। সেই সঙ্গে কোচ অরুণ লালকেও পাচ্ছি। আশা করব, এই লাকি কম্বিনেশনই আমাদের হাতে ফের রঞ্জি ট্রফি তুলে দেবে।’’
অরুণ লালের মুখে যদিও বেশি করে শোনা গেল বঙ্গ ক্রিকেটের উন্নতি সাধনের কথা। বলছিলেন, ‘‘ক্রিকেটার হিসেবে বাংলায় আসার পরে দেখেছিলাম, এখানে সব ভাল। ব্যাটিং, বোলিংয়ে তুখোড়। কিন্তু ফিল্ডিংয়ের সময়েই গা-ছাড়া ভাব। এমনকি অনুশীলনেও ফিটনেস ট্রেনিংয়ে অনীহা। শেষ মরসুম পর্যন্ত সেই সংস্কৃতিই চলেছে। কিন্তু আর না। বাংলার ক্রিকেটারদের গলদ ধরে ফেলা গিয়েছে। কথা দিলাম, আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে বাংলায় রঞ্জি ট্রফি আসবেই।’’
ক্রিকেট জীবনের সেরা তিনটি ইনিংস বাছতে বলায় কিছুটা সময় নেন বাংলার কোচ। এত ম্যাচ জিতিয়েছেন যে, কোনটি ছেড়ে কোন ইনিংসের উল্লেখ করবেন! বেশ কিছুক্ষণ ভেবে অরুণ বললেন, ‘‘প্রথমেই রাখব দিল্লির বিরুদ্ধে বাংলার হয়ে ফাইনালের ইনিংসটি। এমন দলকে হারিয়েছিলাম যেখানে ৯জন ভারতীয় দলের ক্রিকেটার ছিল। দ্বিতীয় সেরা বলা যেতে পারে ভারতীয় দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচ। সবার কাছেই সেই মুহূর্তটি বিশেষ। তৃতীয় স্থানে অবশ্যই রাখব ভাঙা গোড়ালি নিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে জেতানো। শেষ উইকেটে ব্যাট করার সময়েও ৮০ রান বাকি ছিল। নন-স্ট্রাইকারকে সঙ্গে নিয়ে সেই ৮০ রানই আমি করি। সেখান থেকেই আমার উত্থান। এমনকি জীবনের শেষ ইনিংসে ইস্টবেঙ্গলকে ট্রফি জিততে সাহায্য করেছিলাম। তার পর থেকে আর কখনও খেলিনি।’’
ভারতের হয়ে টানা খেলতে না পারার আক্ষেপ যদিও তাঁর নেই। বলছিলেন, ‘‘কোনও আক্ষেপ নেই। সময় খারাপ গিয়েছে বলা যেতে পারে। ভারতের হয়ে প্রত্যাবর্তনের টেস্টে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ৫৬ করি। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭০। পরে তিন বছর জাতীয় দলে সুযোগ পাইনি। টানা খেলার সুযোগ না পেয়েই হয়তো স্থায়ী জায়গা করতে পারিনি।’’
বাংলার বর্তমান ক্রিকেট সংস্কৃতির খোলনলচে বদলে দিয়েছেন তিনি। আগের মতো ‘এলাম, নেট করলাম, বাড়ি গেলাম’ নীতিতে তিনি বিশ্বাসী নন। ভারতীয় দলের অধিনায়ক বিরাট কোহালির ভক্ত অরুণ। বাংলার ক্রিকেটারদের তাঁর নির্দেশ, ‘‘বিরাটের মতো অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘বিরাট নিজে জানে বিশ্ব ক্রিকেটে ও-ই সেরা ব্যাটসম্যান। তবুও কেন এত ফিটনেস ট্রেনিং করে? কেন দিনের পর দিন মাঠে নিজেকে নিংড়ে দেয়? কারণ, এখনকার ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গেলে ফিট না হলে চলবে না। বাংলার প্রত্যেক ক্রিকেটারকে বিরাটের উদাহরণ দিই। ও আসার পর থেকে ভারতীয় ক্রিকেট অনেক পরিণত হয়েছে।’’
বাংলার কোনও ক্রিকেটারের মধ্যে কি তিনি বিরাট-ছায়া খুঁজে পান? অরুণের উত্তর, ‘‘অভিমন্যু ঈশ্বরন অত্যন্ত পরিশ্রমী। কখনও ওকে ট্রেনিং করার জন্য বলতে হয় না। এ বার রঞ্জিতে বাংলার সর্বোচ্চ রান স্কোরার। আমার বিশ্বাস, আগামী মরসুমেও ও-ই সব চেয়ে বেশি রান করবে। কারণ, ট্রেনিংয়ের সঙ্গে কখনও আপস করে না।’’ রঞ্জিতে বাংলার হয়ে সর্বোচ্চ রান করার পুরস্কারের পাশাপাশি বর্ষসেরা ক্রিকেটারও হলেন অভিমন্যু। ত্রিমুকুট জয়ী মহিলা ক্রিকেট দলের দীপ্তি শর্মাকে দেওয়া হল বর্ষসেরা মহিলা ক্রিকেটারের পুরস্কার। বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হল ঝুলন গোস্বামীকেও। ফের বাংলার সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের পুরস্কার পেলেন অশোক ডিন্ডা।
তবুও কোনও কোনও মহলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, অরুণ লালকে কেন ৩৩ বছরের ছোট অজিঙ্ক রাহানের হাত থেকে জীবনকৃতি সম্মান নিতে হল? বাংলায় তাঁর সমসাময়িক কাউকে দিয়ে কি এই পুরস্কার দেওয়ানো যেত না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy