স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্নভঙ্গের উপক্রম হয়েছে ভিসার জন্য দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে!
এমনই অবস্থা বাংলার সাঁতারু আর্মি পালের। এ মাসের শেষ দিকে হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নামার কথা তাঁর। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে ১৮-১৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে এই প্রতিযোগিতা। যেখানে বিশ্ব সাঁতার সংস্থা আয়োজিত এই বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে বিভিন্ন দেশের ২৫০০ প্রতিযোগী অংশ নেবেন সাঁতার, লম্বা দৈর্ঘ্যের সাঁতার, ডাইভিং, ওয়াটার পোলো ও আর্টিস্টিক সুইমিংয়ে। সেখানে বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি আর্মি। তিনি নামবেন ৫ কিমি ইভেন্টে। যা হবে খোলা আকাশের নীচে।
কিন্তু চূড়ান্ত সময়ে অনুশীলনের চেয়েও তাঁকে বেশি মনোনিবেশ করতে হচ্ছে ভিসার জন্য দৌড়ঝাঁপে। এক এক সময়ে বদলে যাচ্ছে দূতাবাসে গিয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য সময়ের স্থান। শ্রীরামপুরের ২০ বছরের ছেলে এই মুহূর্তে বেঙ্গালুরুতে প্রশিক্ষণরত। শনিবার ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, ‘‘বুদাপেস্টে ১৮ জুন-৩ জুলাই হবে এই বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ। কিন্তু এখনও ভিসা পাইনি। প্রথমে বলা হয়েছিল বেঙ্গালুরুতে ১৭ জুন হাঙ্গেরির উপদূতাবাসে সাক্ষাৎকারের জন্য যেতে। কিন্তু আমার ইভেন্ট ২৮ জুন। ১৭ জুন সাক্ষাৎকার হলে, তার পরে সাতটি কর্মদিবস পরে আমার ভিসা হবে। এ দিকে বিমানের টিকিট ২০ জুনের।’’ যোগ করেন, ‘‘বিষয়টি জানানোর পরে সাক্ষাৎকারের তারিখ এগিয়ে আনা হয় ১৫ জুন। কিন্তু বলা হয় কোচিনে গিয়ে সাক্ষাৎকার দিতে। কিন্তু তাতেও ২০ তারিখ বিমান ধরা যাবে না। শুক্রবার জানিয়েছে সোমবার (৬ জুন) দিল্লি যেতে। সেখানে গিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়ে আসতে। কিন্তু ভিসা ২০ জুনের আগে হবে, তা নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। বুঝে উঠতে পারছি না কী করব। সুইমিং পুলে ও নদীতে সাঁতারের চেয়েও বেশি সময় ব্যয় করতে হচ্ছে ফোন, ই-মেল করা বা দূতাবাসে গিয়ে অনুরোধ করতে।’’
মামা বাড়িতে দাদু, মামারা সব ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। সে কারণে তাঁর জন্মের পরে নাম রাখা হয় আর্মি। তাঁর মা সীমা পালও অসহায়ের মতো বলছিলেন, ‘‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নামার সুযোগ সহজে আসে না। এই সুযোগ হাতছাড়া হলে আফশোসের সীমা থাকবে না। জানি না, কাকে ধরা গেলে ছেলের ভিসাটা ঠিকঠাক হয়ে যাবে।’’
মাস খানেক আগে ৫ ও ১০ কিলোমিটারের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে পুরুষ ও মহিলাদের প্রথম হওয়া চার জনকে এই বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে নামার জন্য অনুমতি দিয়েছিল জাতীয় সাঁতার সংস্থা। সেখানে ৫ কিমিতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীরামপুর সাঁতার ক্লাবের থেকে উঠে আসা এই বঙ্গপ্রতিভা। যে প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে আর্মি বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিযোগিতা হয়েছিল একটা বাঁধের সামনে বড় নদীতে। যা আরব সাগরে গিয়ে পড়ছে। ঢেউ ছিল প্রবল। সেখানে এক ঘণ্টা ছয় মিনিটে সাঁতার শেষ করে প্রথম হয়েছিলাম। তার পরেই বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা অর্জন করি।’’ যোগ করেন, ‘‘পাঁচ কিমি সাঁতারে বিশ্বরেকর্ড এক ঘণ্টা। কিন্তু বুদাপেস্টে যারা নামবে আমার সঙ্গে তাদের সেরা সময় ৫৩ মিনিট। আমি এখন ৫ কিমি পার হচ্ছি ৫৭ মিনিটে। সময় ভাল করেছি। কিন্তু এই ভিসার জন্য দৌড়তে গিয়ে মনোনিবেশ করতে পারছি না। যদি এই সমস্যা না হত, তা হলে আর এক-দেড় মিনিট কমিয়ে আনতে পারলে পদকের স্বপ্ন দেখা যাবে। তবে যদি ভিসা পাই, তা হলে ত্রুটি থাকবে না চেষ্টার। হাঙ্গেরিতে তেরঙ্গা পতাকা তুলে ধরারচেষ্টা করব।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy