Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
আর অপরিহার্য নও, কঠোর বার্তা দিল সৌরভদের বোর্ড

শ্রীনির সওয়াল উপেক্ষা করে চুক্তিপত্র থেকে ছাঁটাই ধোনি

এ দিন আসমুদ্র হিমাচল তাঁর ভক্তদের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ বইয়ে দিয়ে বোর্ড যে ক্রিকেটারদের চুক্তিপত্র ঘোষণা করেছে, তাতে নেই ধোনির নাম।

জল্পনা: ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই কিছু বলছেন না সৌরভেরা। ফাইল

জল্পনা: ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই কিছু বলছেন না সৌরভেরা। ফাইল

সুমিত ঘোষ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:২২
Share: Save:

ভারতের দু’জন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের এক জন তিনি। একটা সময় ছিল যখন টিমলিস্টে সবার আগে তাঁর নাম লেখা হত। ভারতীয় ক্রিকেটে কি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যুগের শেষের শুরু হয়ে গেল বৃহস্পতিবার?

এ দিন আসমুদ্র হিমাচল তাঁর ভক্তদের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ বইয়ে দিয়ে বোর্ড যে ক্রিকেটারদের চুক্তিপত্র ঘোষণা করেছে, তাতে নেই ধোনির নাম। তার পর থেকেই ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। এমনও জানতে চায় জনতা যে, ধোনির ক্রিকেটজীবন শেষই হয়ে গেল কি না? ম্যাঞ্চেস্টারে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পরাভূত সেই ছবিই কি শেষ দৃশ্য হয়ে থাকল? টুইটারে হ্যাশট্যাগ চালু হয়ে যায় ‘থ্যাঙ্ক ইউ ধোনি’।

ও দিকে, চুক্তিপত্র থেকে বাদ পড়ার দিনে ঝাড়খণ্ডে প্র্যাক্টিস করতে দেখা গিয়েছে ধোনিকে। যে ঘটনা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ মনে হচ্ছে অনেকের। বোর্ড থেকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হল, আর তুমি অপরিহার্য নও। তোমাকে ছাড়াই ভাবছি আমরা। ধোনিও হয়তো পাল্টা বলতে চাইলেন, আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নের নিষ্পত্তি করবে আমার ব্যাটই।

আরও পড়ুন: ‘ধোনি কোথায়!’ টুইটারে হাহাকার ক্যাপ্টেন কুল-কে নিয়ে

বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে হারের পর থেকে ধোনি আর ভারতের হয়ে খেলেননি। দেশের নীল জার্সিতে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে তীব্র জল্পনাকল্পনা চলছে। তার মধ্যে জীবনে এই প্রথম বোর্ডের চুক্তিপত্র থেকে বাদ পড়লেন তিনি। বোর্ডের অন্দরমহলে কেউ কেউ ব্যাখ্যা করছেন, ‘‘ধোনি সেই জুলাইয়ের পরে আর খেলেননি ভারতের হয়ে। এর পরে কবে খেলবেন, কেউ জানে না। প্রায় সাত মাস ধরে মাঠের বাইরে কাউকে কী করে বোর্ডের সেন্ট্রাল কনট্র্যাক্টের অংশ করা যায়? শুধুমাত্র জল্পনার আশ্রয়ে কী ভাবে পাঁচ কোটি টাকার চুক্তিতে কাউকে নেওয়া যায়?’’

প্রস্তুতি: ঝাড়খণ্ডের নেটে হাজির ধোনি। বৃহস্পতিবার। টুইটার

ঘটনার গুরুত্ব এর চেয়েও অনেক বেশি। এই প্রথম ধোনির পাশে ‘বাদ’ শব্দটি বসানো হল। এত দিন মানা হত, ভারতীয় ক্রিকেটে দু’জনকে কখনও বসানো সম্ভব হয়নি। এক সচিন তেন্ডুলকর, দুই মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কবে খেলবেন, কবে যাবেন, তা এঁরা নিজেরাই ঠিক করবেন। সেই মতবাদ ধাক্কা খেয়েছে বৃহস্পতিবার। হতে পারে দল থেকে বাদ যাননি ধোনি, গিয়েছেন চুক্তিপত্র থেকে। কিন্তু প্রভাবের দিক থেকে ‘ইলেকট্রিক শক’ লাগার মতোই।

এর আগে এমন মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর এক বারই তাঁর জন্য অপেক্ষা করে থেকেছে। যখন আইপিএলে পুণের দলের অধিনায়কত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে স্টিভ স্মিথকে আনা হয়। তাতে ধোনির জীবনে খুব ফারাক ঘটেনি কারণ, পরের বছরই নির্বাসন ওঠা চেন্নাই সুপার কিংসে ফিরে যান তিনি এবং তাঁর নেতৃত্বে দু’বছর পরে ফিরে সিএসকে-ই চ্যাম্পিয়ন হয়।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, ধোনিকে চুক্তিতে রাখা হবে কি হবে না, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বোর্ডের শীর্ষ মহলে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সচিব জয় শাহ এবং অন্যান্য প্রভাবশালী কর্তারাও সেই আলোচনায় অংশ নেন। শোনা যাচ্ছে, মুম্বইয়ে দিন দুই আগে হওয়া সেই বৈঠকে বোর্ডের প্রাক্তন সর্বময় কর্তা এবং দীর্ঘদিনের ধোনি-সমর্থক এন শ্রীনিবাসনও উপস্থিত ছিলেন। শ্রীনি কি ধোনিকে চুক্তিতে রাখার জন্য সওয়াল করেননি? ওয়াকিবহাল মহল জোরের সঙ্গে বলছে, হতেই পারে না। এখনও সিএসকে মহলে প্রশাসক হিসেবে শেষ কথা শ্রীনি। ক্রিকেট নিয়ে শেষ কথা ধোনি।

ভারতীয় ক্রিকেটেও এক সময় এই জুটি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিল। যখন শ্রীনি ছিলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট এবং ধোনি ভারত অধিনায়ক। সময় পাল্টেছে, ক্ষমতার সমীকরণ বদলেছে। এখন আর শ্রীনির উপস্থিতিও ধোনিকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট ঢাল নয়। মুম্বইয়ের বৈঠকে বোর্ডের গরিষ্ঠ অংশ একমত হয়, ধোনি যে-হেতু সাত মাস খেলেননি আর কবে খেলবেন সেটাও পরিষ্কার নয়, তাঁকে চুক্তিপত্রের বাইরে রাখা হোক। কেউ কেউ বলেন, ‘‘যদি ধোনি খেলতে শুরু করে, তখন আবার ওকে ঢুকিয়ে নেওয়া যাবে।’’ বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ এবং সচিব জয় দু’জনেই এই ভাবনাকে সমর্থন করেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর। পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, ভারতীয় বোর্ডে আর শ্রীনিই শেষ কথা বলছেন না।

জাতীয় নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলেও দেখা হয়, তাঁদের কী মতামত। দেখা যায়, তাঁদের কাছে পরিষ্কার কোনও ধারণা নেই, ধোনি কবে মাঠে ফিরতে পারেন বা আদৌ ফিরবেন কি না। নির্বাচকেরা জানান, তাঁরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে। সব শুনেটুনে বোর্ড ঠিক করে, যত ক্ষণ না ধোনি আবার ভারতের হয়ে খেলছেন, তাঁকে চুক্তির বাইরেই রাখা হোক।

ধোনি কী ভাবে নিতে পারেন এই বাদ পড়াকে? তাঁর ঘনিষ্ঠমহল থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, মাথায় বজ্রাঘাত ঘটার মতো কোনও প্রতিক্রিয়া নাকি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এমনও শোনা গেল যে, ‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর মতোই তিনি সব ভেবে রেখেছেন। কোহালিরা যদি নতুন কাউকে গড়ে তুলতে চান, সেই সুযোগ দিয়ে যাবেন ধোনি। মনে করা হচ্ছিল, সেই নতুন প্রতিভা ঋষভ পন্থ। কোনও কারণে ‘মিশন পন্থ’ ব্যর্থ হলে দলের প্রয়োজনে ফিরে আসতেও পারেন ধোনি। তবে সেটা ঘটতে পারে একমাত্র যদি তিনি আইপিএলে ভাল খেলতে পারেন তবেই।

পন্থের যে রকম শনির দশা যাচ্ছে, কারও কারও মনে হচ্ছে, ধোনি-যুগ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। তাঁর ভক্তরা আশায় রয়েছেন, ঠিক আইপিএলে নাটকীয় কিছু ঘটবে, গর্জে উঠবে তাঁর ব্যাট এবং রাজকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটবে মাহির। এ নিয়েও সন্দেহ নেই যে, পন্থের উপরে সম্পূর্ণ ভরসা করতে পারছে না ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি। তাঁর কিপিং নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে। ব্যাট হাতেও ম্যাচ জেতানো ইনিংস পাওয়া যাচ্ছে না অনেক দিন ধরে। ওয়াংখেড়েতে প্যাট কামিন্সের বলে মাথায় লেগে ছিটকে গিয়েছেন রাজকোট থেকে। যে ভাবে ভারতের ব্যাটিং পিচেও মাথায় লাগল, প্রশ্ন আরও বাড়তে বাধ্য। ভুলে গেলে চলবে না, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে কামিন্সের দেশে।

আইপিএল এবং অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে গিয়ে কোহালিরা এশিয়া কাপ খেলবেন। অস্ট্রেলিয়ায় তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ রয়েছে। যদি পন্থ-ফর্মুলা মুখ থুবড়ে পড়ে এই দু’টি জায়গায় ধোনিকে ফিরিয়ে আনার রাস্তা খোলা থাকছে। তত দিন মনে হচ্ছে, এই ধোনি-নাটক শেষ হবে না।

ঠিক সেই ‘ফিনিশারের’ ব্যাটিংয়ের মতোই যেন চলছে। শেষ ওভারের শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা। শেষ না হওয়া পর্যন্ত হয় না শেষ!

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket India BCCI Mahendra Singh Dhoni
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy