নায়ক: ভিনিসিয়াসের উল্লাস গোলের পরে। রবিবার। এএফপি
শাপমুক্ত রিয়াল মাদ্রিদ! ঘরের মাঠে সান্তিয়াগো বের্নাবাউতে বার্সেলোনার বিরুদ্ধে লা লিগায় শেষ বার রিয়াল জিতেছিল ২০১৪ সালে। শুধু তাই নয়। ২০১৬-র পর থেকে কখনওই লা লিগায় লিয়োনেল মেসিদের হারাতে পারেননি সের্খিয়ো র্যামোসেরা। রবিবার রাতে ঘরের মাঠে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সামনেই ভিনিসিয়াস জুনিয়র-মারিয়ানো দিয়াসের যুগলবন্দিতে বার্সেলোনাকে হারিয়ে লা লিগায় শীর্ষ স্থান পুনরুদ্ধার করল রিয়াল।
লা লিগায় রবিবাসরীয় এল ক্লাসিকোকে কেন্দ্র করে ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় প্রথম পর্বে নাপোলির বিরুদ্ধে হার বাঁচিয়েছিল বার্সা। আর ঘরের মাঠে রিয়াল হেরেছিল ম্যাঞ্চেস্টার সিটির বিরুদ্ধে। রবিবাসরীয় এল ক্লাসিকো দু’দলের কাছেই ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। কিন্তু জ়িনেদিন জ়িদানের রণনীতিতে জয়ের সরণিতে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল মেসিদের।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আগের ম্যাচে নাপোলি ম্যানেজার জেন্নারো গাত্তুসো প্রমাণ করেছিলেন, মেসিকে স্বাভাবিক খেলা খেলতে না দিলে বার্সাও আটকে যাবে। ঘরের মাঠে এল ক্লাসিকোয় জ়িদানও একই পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলেন। ম্যাচের শুরু থেকেই মেসির ছায়াসঙ্গী হয়ে গিয়েছিলেন কার্লোস কাজেমিরো। হতাশায় দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল মিডফিল্ডারকে মেরে হলুদ কার্ডও দেখলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। ম্যাচের পরে বার্সা ডিফেন্ডার জেরার পিকে বলেই ফেললেন, ‘‘প্রথমার্ধে রিয়াল মাদ্রিদকে এত খারাপ খেলতে কখনও দেখিনি।’’
এল ক্লাসিকো বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল বার্সা। ৫৬ শতাংশ বল ছিল মেসিদের পায়ে। কিন্তু বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেই যে ম্যাচ জেতা যায় না, আরও একবার প্রমাণ করে দিল রিয়াল। দ্রুত নিজেদের মধ্যে পাস খেলে শুরু থেকেই টোনি খোস, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, করিম বেঞ্জেমারা পৌঁছে যাচ্ছিলেন বার্সার পেনাল্টি বক্সের সামনে। এবং বার্সার আক্রমণের সময় দ্রুত নীচে আসছিলেন। ম্যাচের দশ মিনিটে নেলসন সেমেদোকে ফাউল করে হলুদ কার্ডও দেখেন ভিনিসিয়াস।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ২১ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বার্সা। অথচ রিয়ালের পেনাল্টি বক্সের মধ্যে থেকে অবিশ্বাস্য ভাবে বল ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন আঁতোয়া গ্রিজ়ম্যান। ৩৮ মিনিটে মেসির শট অসাধারণ দক্ষতায় বাঁচান রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কুর্তোয়া। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার মিনিট তিনেকের মধ্যে আরও একবার গোলের সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। এর পর থেকেই ছবিটা বদলাতে শুরু করে। ঘরের মাঠে জেতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন রিয়ালের ফুটবলারেরা। ভিনিসিয়াসকে আটকাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন পিকে। মাঠের মধ্য বিবাদেও জড়িয়ে পড়েন ব্রাজিল তারকার সঙ্গে।
শেষ পর্যন্ত ভিনিসিয়াসের কাছেই হার মানলেন পিকে। ৭১ মিনিটে টোনি খোসের পাস ধরে বার্সার বক্সে ঢুকে দূরূহ কোণ থেকে অসাধারণ গোল করেন রিয়ালের নতুন তারকা। সেই সঙ্গে গড়লেন নতুন কীর্তিও। লা লিগার এল ক্লাসিকোয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা এত দিন মেসি ছিলেন। ১৯ বছর ২৫৯ দিনে ২০০৭ সালে রিয়ালের বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তি। রবিবার রাতে বৃষ্টিস্নাত বের্নাবাউতে ১৯ বছর ২৩৩ দিনে গোল করে মেসির সেই রেকর্ড ভিনিসিয়াস ভাঙতেই। উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন ম্যাচ দেখতে আসা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। শুরু হয়ে যায় তাঁর রিয়ালে প্রত্যাবর্তন নিয়ে জল্পনাও। অভিভূত জ়িদান বলেছেন, ‘‘ভিনিসিয়াস অসাধারণ। অনবদ্য গোল করেছে।’’ ম্যাচের সংযুক্ত সময়ে পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে গোল করেন রিয়ালের আর এক নতুন তারকা মারিয়ানো।
১৯৫৪ দিন পরে বের্নাবাউতে লা লিগার এল ক্লাসিকোয় জিতে ২৬ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে এক নম্বরে রিয়াল। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বার্সেলোনা। ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে উচ্ছ্বসিত জ়িদান বলেছেন, ‘‘এই ম্যাচটা জেতার জন্য আমরা সব কিছু করেছি। তবে এখনও অনেক দূর যেতে হবে। ছন্দ ধরে রাখতে হবে।’’ বার্সেলোনা ম্যানেজার কিকে সেতিয়েন স্বীকার করে নিলেন, ফুটবলারেরা চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। বলেছেন, ‘‘চাপ কাটানোর জন্য আমরা দ্রুত পাস খেলার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy