হুঙ্কার: মুঠোয় ম্যাচ। জয়ের শট নিয়ে উল্লাস মুশফিকুর রহিমের। হতাশ এ দিনই অভিষেক ঘটানো ভারতের শিবম দুবে। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: এপি
এই ম্যাচ আর পাঁচটা ম্যাচের মতো ছিল না বাংলাদেশের কাছে। ভারত সফরে আসার আগে চূড়ান্ত ডামাডোলে ডুবে গিয়েছিল ও দেশের ক্রিকেট।
শাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটারকে শাস্তির কোপে হারানো। তামিম ইকবাল বা বিশ্বকাপে ভাল খেলা মহম্মদ সইফুদ্দিনের শেষ মুহূর্তে না আসা। মুশফিকুর রহিম বা মাহমুদুল্লা ছাড়া বড় নাম আর কোথায়! তার উপরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারত-বাংলাদেশের রেকর্ডটার দিকে চোখ রাখুন। এর আগে আটটা ম্যাচ খেলে আটটাতেই বাংলাদেশকে হারিয়েছিল ভারত। এই প্রথম প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জিতল বাংলাদেশ।
এ রকম একটা ভাঙাচোরা দল নিয়ে এসে বাংলাদেশ সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারিয়ে দিয়ে গেল এমন একটা দেশকে, যেখানে আইপিএলের হাত ধরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিপ্লব ঘটেছে বলা যায়। দু’দলেই বেশ কয়েক জন অনভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছিল। বিশেষ করে বোলিংয়ে। সেখানে দাঁড়িয়ে বাজিমাত করল বাংলাদেশই।
দীপাবলির পরে দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল, যে এই ম্যাচের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রবিবার সন্ধ্যা সাতটাতেই ভারত-বাংলাদেশ প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ শুরু হল। কিন্তু দেখা গেল, দিল্লির পরিবেশ খেলার উপরে একটা প্রভাব ফেলেছে। সেই প্রভাব দেখা যায় কোটলার (যার নাম এখন অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম) বাইশ গজে।
গত পাঁচ-ছয় দিন দিল্লিতে সূর্য ওঠেনি সে ভাবে। আমার মনে হয়, মাঠকর্মীরাও সাহস করে পিচে জল দিতে পারেননি। যার ফলে পিচ বেশ মন্থর লাগছিল। বলও দেখলাম থমকে থমকে ব্যাটে আসছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশ বোলারদের আঁটসাঁট বোলিং ভারতের রান ২০ ওভারে ১৪৮-৬ স্কোরে আটকে যায়। কেউ কেউ তখন বলছিলেন, এই পিচে ওই রান তোলা কিন্তু সহজ হবে না।
Bangladesh win by seven wickets!
— ICC (@ICC) November 3, 2019
A fabulous 60* from 43 by Mushfiqur Rahim guides the visitors to victory.#INDvBAN | SCORECARD 👇 https://t.co/qBFzQDJ3Bs pic.twitter.com/rPd8KV8uMX
রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ কিন্তু কখনও সে রকম চাপের মুখে পড়েনি। এমনকি প্রথম ওভারে লিটন দাস আউট হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও। তামিমের বদলে ওপেন করতে নামা মহম্মদ নইম কিন্তু সৌম্য সরকারকে নিয়ে দলকে লড়াইয়ের জায়গায় নিয়ে যায়। যেখান থেকে খেলাটা ধরে নেয় অভিজ্ঞ মুশফিকুর।
বাংলাদেশের এই দলটায় অবশ্যই সেরা ব্যাট মুশফিকুর। খুব ঠান্ডা মাথার ছেলে। ধারাবাহিকতা আছে। সে রকমই ফিল্ডারদের মধ্যে জায়গা বার করে শট খেলতে পারে। ৪৩ বলে ৬০ রান করে অপরাজিত থাকায় ওকে ছাড়া ম্যাচের সেরা কাউকে বাছা সম্ভব ছিল না।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে ভারত বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে দল নিয়ে। এই দলটার বোলিং আক্রমণ প্রায় সব নতুন মুখদের নিয়েই তৈরি। তাই অনভিজ্ঞতার ছাপটা ধরা পড়েছে বারবার। যেমন শেষ দিকে খলিল আহমেদ খেই হারিয়ে ফেলছিল। কোন ব্যাটসম্যানকে কোন লাইনে বল ফেলতে হবে, সেটাই যেন বুঝতে পারছিল না। ১৯তম ওভারে মুশফিকুর ওকে নিয়ে প্রায় ছেলেখেলা করে পরপর চারটে চার মেরে ম্যাচটা নিয়ে চলে গেল। খলিল বাঁ-হাতি পেসার বলে এখনও সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু কত দিন পাবে, সেটাই প্রশ্ন।
ভারতের হাত থেকে ম্যাচটা বেরিয়ে গেল আরও একটা কারণে। যখন ১৮তম ওভারে মুশফিকুরের হাতের ক্যাচটা ফেলে দিল ক্রুণাল পাণ্ড্য। ওই সময় বাংলাদেশের রান ছিল ১১৭-৩। মুশফিকুরের মারা স্লগ সুইপটা সোজা ডিপ মিডউইকেটে দাঁড়ানো ক্রুণালের হাতে চলে যায়। কিন্তু হাতের ক্যাচ গলিয়ে চারটে রান দিয়ে দিল ও। পাশপাশি ডিআরএস নেওয়ার ক্ষেত্রেও ভুল করেছে ভারত। যুজবেন্দ্র চহালের বলে দু’বার এলবিডব্লিউ ছিল মুশফিকুর। কিন্তু ঋষভের কথায় বিভ্রান্ত হয় রোহিত। ফলে ডিআরএস নেয়নি। এখানেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অভাবটা বোঝা গেল।
দু’দলের বোলিংটাই বেশ অনভিজ্ঞ ছিল। ওদের মুস্তাফিজুর রহমান থাকলে ভারতের অভিজ্ঞ বলতে ছিল শুধু চহাল। কিন্তু বাংলাদেশের তরুণ বোলাররা রীতিমতো চাপে রেখে গেল ভারতীয় ব্যাটিংকে। বছর কুড়ির লেগব্রেক বোলার আমিনুল ইসলাম (২-২২), বা ২২ বছরের অফস্পিনার আফিফ হোসেন (১-১১) কিন্তু মাঝের ওভারগুলোয় রান আটকে দেয়। মুস্তাফিজুরকে মাত্র দু’ওভার বল দিয়েও ম্যাচ জিতে নিল বাংলাদেশ। অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের আগ্রাসনে এল জয়।
সকাল দেখে যেমন সব সময় দিনটা বোঝা যায় না, তেমনই ভারতের শুরুটা দেখেও এ দিন বোঝা যায়নি স্কোরটা দেড়শোর কমে আটকে যাবে। ম্যাচ শুরুর মুখে বেশ কয়েক জন বিশেষজ্ঞকে টিভি-তে বলতে শুনলাম, ভারতের রান ১৮০-র উপরে চলে যেতেই পারে। রোহিতও প্রথম বলে চার মেরে বড় রানেরই ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু শইফুল ইসলামের ওই ওভারের শেষ বল ভিতরে ঢুকে এসে রোহিতের পা পেয়ে যায় উইকেটের সামনে। বিরাট কোহালির জায়গায় দলকে নেতৃত্ব দেওয়া রোহিত রিভিউ নিয়েও নিজেকে বাঁচাতে পারেনি।
উল্টো দিকে শিখর ধওয়ন রান পেলেও সে রকম বিধ্বংসী মেজাজে ছিল না। ও আউট হল ঋষভের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে। ঋষভকে নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ওর ব্যাটিং অর্ডারও মনে হচ্ছে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কখনও চারে নামছে, কখনও পাঁচে। এ দিন যেমন পাঁচ নম্বরে নামল। তাও ঋষভের হাতে প্রায় ১০ ওভার ছিল। কিন্তু বলার মতো কিছু করতে পারল না।
তবে ভারতীয় ব্যাটিংয়ে নজর কাড়ল ওয়াশিংটন সুন্দর। আট নম্বরে নেমে পাঁচ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকল। ওয়াশিংটনকে শুধু অফস্পিনার বললে ভুল করা হবে। তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে ও কিন্তু মাঝে মাঝে ওপেনও করে। যেমন সুনীল নারাইনকে আইপিএলে বা ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ওপেন করতে দেখেছি। শেষ দু’ওভারে ৩০ রান উঠল ওয়াশিংটন আর ক্রুণালের সৌজন্যে। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হল না।
স্কোরকার্ড
ভারত ১৪৮-৬ (২০)
বাংলাদেশ ১৫৪-৩ (১৯.৩)
ভারত
রোহিত এলবিডব্লিউ বো শইফুল ৯•৫
ধওয়ন রান আউট ৪১•৪২
রাহুল ক মাহমুদুল্লা বো আমিনুল ১৫•১৭
শ্রেয়স ক নইম বো আমিনুল ২২•১৩
ঋষভ ক নইম বো শইফুল ২৭•২৬
শিবম ক ও বো আফিফ ১•৪
ক্রুণাল ন. আ. ১৫•৮
ওয়াশিংটন ন. আ. ১৪•৫
অতিরিক্ত ৪
মোট ১৪৮-৬ (২০)
পতন: ১-১০ (রোহিত, ০.৬), ২-৩৬ (রাহুল, ৬.৩), ৩-৭০ (শ্রেয়স, ১০.২), ৪-৯৫ (ধওয়ন, ১৪.৫), ৫-১০২ (শিবম, ১৫.৬), ৬-১২০ (ঋষভ, ১৮.২)।
বোলিং: শইফুল ইসলাম ৪-০-৩৬-২, আল-আমিন হুসেন ৪-০-২৭-০, মুস্তাফিজ়ুর রহমান ২-০-১৫-০, আমিনুল ইসলাম ৩-০-২২-২, সৌম্য সরকার ২-০-১৬-০, আফিফ হোসেন ৩-০-১১-১, মোসাদ্দেক হোসেন ১-০-৮-০, মাহমুদুল্লা ১-০-১০-০।
বাংলােদশ
লিটন ক রাহুল বো চাহার ৭•৪
নইম ক ধওয়ন বো চহাল ২৬•২৮
সৌম্য বো খলিল ৩৯•৩৫
মুশফিকুর ন. আ. ৬০•৪৩
মাহমুদুল্লা ন. আ. ১৫•৭
অতিরিক্ত ৭
মোট ১৫৪-৩ (১৯.৩)
পতন: ১-৮ (লিটন, ০.৫), ২-৫৪ (নইম, ৭.৫), ৩-১১৪ (সৌম্য, ১৬.৬)।
বোলিং: দীপক চাহার ৩-০-২৪-১, ওয়াশিংটন সুন্দর ৪-০-২৫-০, খলিল আহমেদ ৪-০-৩৭-১, যুজবেন্দ্র চহাল ৪-০-২৪-১, ক্রুণাল পাণ্ড্য ৪-০-৩২-০, শিবম দুবে ০.৩-০-৯-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy