ফিরবে কি সেই জার্সি? —ফাইল চিত্র।
স্রেফ একটি জয়! তাতেই লেখা হয়ে গিয়েছিল নতুন ইতিহাস। ১৯১১ সালের ২৯ জুলাই ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে ২-১ গোলে হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জিতেছিল মোহনবাগান। দীর্ঘ দিনের অতৃপ্তির খরায় একফোঁটা বৃষ্টির মতোই তৃপ্তি এনেছিল এই জয়।
শিবদাস ভাদুড়ি, অভিলাষ ঘোষরা যে জার্সি পরে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন ১০৯ বছর আগে, আর এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে ফিরিয়ে আনা হোক সেই জার্সি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ‘অমর একাদশ’-এর ছবি পোস্ট করে একটি টুইট করেছেন। কেউ তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করছেন আবার কেউ বল ঠেলে দিচ্ছেন এটিকে-মোহনবাগান কর্তাদের দিকে।
টুইটে কী বলেছেন বাবুল সুপ্রিয়? “ইতিহাসে নাম খোদাই করে রাখার থেকে গর্বের আর কিছু হয় না। এটিকে-মোহনবাগানের কাছে আমার অনুরোধ, এই শুভারম্ভকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯১১ সালের আইএফএ শিল্ড জয়ী যোদ্ধাদের জার্সি আবার ফিরিয়ে আনা হোক। দেখতে খুব সুন্দর ছিল সেই জার্সি। আজকের কাপড়ে এবং নিখুঁত ফিনিশিংয়ে দারুণ দেখতে লাগবে জার্সিগুলো”, লিখেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: কোভিডে আক্রান্ত লক্ষ্মীরতন শুক্লর স্ত্রী, রয়েছেন কোয়রান্টিনে
শিবদাস ভাদুড়ির প্রপৌত্রী দেবিকা রায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য শুনে আবেগাপ্লুত। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বললেন, ‘‘সে রকমটা যদি হয়, তা হলে আমাদের কাছে তা অভাবনীয় ব্যাপার হবে। আমরা স্বচক্ষে তো ১৯১১ সালের জার্সি কেউই দেখিনি। শুধু ছবিতে দেখেছি। ফলে সেই সময়ের জার্সি নতুনদের গায়ে যদি দেখতে পাই, তা হলে শিবদাস ভাদুড়ির প্রপৌত্রী হিসেবে আমার বেশ ভাল লাগবে। একটা অন্য আবেগ কাজ করবে মনের ভিতরে।’’ এত দিন ধরে যে মোহনবাগানকে হৃদয়ে রেখে শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ে এসেছেন ভাদুরি পরিবারের সদস্যরা, শিবদাস-অভিলাষদের জার্সি রয় কৃষ্ণদের পিঠে দেখলে একই আবেগে ভাসবেন তাঁরা।
There is nothing more cool than embracing history & I wud request ATK-MohunBagan to celebrate this new beginning by replicating the iconic jersey of 1911 IFA SHIELD winning Hero's•And kind you, it was a pretty cool looking jersey& wil look great in today's finishing&material https://t.co/qbyF9Ar8M2 pic.twitter.com/OKlYoUnzx3
— Babul Supriyo (@SuPriyoBabul) July 10, 2020
দুই ক্লাব মিলে যাওয়ার পরে শুক্রবারই প্রথম বোর্ড মিটিং হয়। মোহনবাগানের ঐতিহ্য ও সমর্থকদের আবেগকে সম্মান দেখিয়ে রেখে দেওয়া হয় জার্সির সবুজ ও মেরুন রং। দুটো রং অপরিবর্তিত রেখে জার্সির ডিজাইন হয়তো নতুন করা হবে। ঐতিহাসিক শিল্ড জয়ের পুরনো জার্সি যদি নতুন সময়ে ফেরানো হয়, তা হলে কেমন হবে?
মোহনবাগানের ‘ঘরের ছেলে’ বলে পরিচিত সুব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘১৯১১ সালে ঢিলেঢালা জার্সি পরে খেলা হত। এখন তো আর সে রকম জার্সি পরে খেলা হয় না। অবশ্য সেই সময়ে ঢিলেঢালা জার্সি পরে খেলার অন্য কারণও ছিল। পা স্ট্রেচ করতে হলে বা মাঠে পা ছুড়ে ট্যাকল করতে হলে শরীর ছড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকত। সেই কারণেই সেই সময়ে ঢিলেঢালা, হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা প্যান্ট পরে খেলত ফুটবলাররা। এখন স্টাইল বদলে গিয়েছে। বিজ্ঞানের ব্যবহার এসেছে। পুরনো সেই জার্সিকে নতুন করে যদি ফেরানো যায় এবং ফুটবলাররা যদি তা পরে স্বচ্ছন্দ বোধ করে, তা হলে তা ব্যবহার করা যেতেই পারে।’’
সুব্রত অবশ্য অতীত আর বর্তমানকে মিলিয়ে দিচ্ছেন অন্য ভাবে। তিনি বলছেন, ‘‘১৯১১ সালের ঐতিহ্য, মর্যাদা, সাফল্যকে অনুসরণ করতে হবে। আর আধুনিক সময়ের খেলার পদ্ধতিকে তুলে ধরতে হবে।’’
আট বছর মোহনবাগানে খেলেছেন গৌতম সরকার। ১৯৭৭ সালে পেলেকে রুখে দেওয়ার পরে স্বয়ং ফুটবল সম্রাটের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সময়ে ত্রিমুকুট জিতে নজির গড়েছিল মোহনবাগান। কলকাতা ময়দান তাঁকে ‘মাঝমাঠের বেকেনবাওয়ার’ বলেই চেনে। সেই গৌতম সরকার বলছেন, ‘‘নস্টালজিক হয়েই বাবুল এমন ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে। তবে সেটা কতটা সম্ভব, সেটা আমি বলতে পারব না। এ ব্যাপারে বর্তমান কর্তারাই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।’’
১৯৩১-’৩২ মরসুমে প্রথম বার লিগ জিতেছিল জার্মানির বিখ্যাত ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ। টমাস মুলারদের ক্লাবের জন্ম হয়েছিল তারও অনেক আগে ১৯০০ সালে। যে জার্সি পরে প্রথম বার লিগ জিতেছিল জার্মানির বিখ্যাত ক্লাব, সেই জার্সি ফেরানো হয় বায়ার্নের ১২০তম জন্মদিনে। পুরনো সেই জার্সিকে নতুন করে, নতুন ভাবে তৈরি করে একটি ম্যাচও খেলে বায়ার্ন মিউনিখ।
আরও পড়ুন: ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ অ্যাশেজের সমান, মত স্টিভের
মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার কম্পটন দত্ত বলছেন, ‘‘বায়ার্ন মিউনিখও ওদের ঐতিহ্যর কথা মাথায় রেখে একটা ম্যাচ খেলেছিল পুরনো জার্সি পরে। এটিকের সঙ্গে মোহনবাগান চুক্তি করে চমক দিয়েছে। তেমনই এই ধরনের চমক থাকলেও ভাল। এতে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মোহনবাগান সমর্থকদের কাছে ইমপ্রেসন ভাল হবে। এই ২০২০ সালে আমরা মোহনবাগানের গর্ব, ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করি। উঠে আসে শিল্ড জয়ের কথা। তা হলে বাবুলের কথামতো ফিরিয়ে এনে দেখাই যাক না সেই সময়ের জার্সি। অন্তত একটা সেট জার্সি তো রেখে দেওয়াই যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy