অনুশীলনে একাগ্র আয়ুষী। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য মিটে এক ইভেন্টের তিন বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন গত বার। আজারবাইজানে জুনিয়র বিশ্বকাপে টিম ইভেন্টের ব্রোঞ্জ জিতে ফিরেছেন মাসখানেক আগে। এর আগে জার্মানিতে একই টুর্নামেন্টে জিতেছিলেন সোনা। দলগত বিভাগে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সোনা, রুপো, ব্রোঞ্জ জিতছেন হামেশাই। করে ফেলেছেন নতুন কয়েকটা রেকর্ডও।
কিন্তু যে ‘অস্ত্র’ ব্যবহার করে তাঁর এই ধারাবাহিক সাফল্য, সেটা নিজের নয়! ‘‘জানেন, আমার নিজের কোনও রাইফেল নেই। বাধ্য হয়ে বাবার রাইফেল ব্যবহার করি। কিন্তু ওটা বড্ড ভারী। কিন্তু কী করব? সেটা কাঁধে নিয়েই টুর্নামেন্টে নামছি। নইলে আরও ভাল স্কোর করতাম,’’ বলার সময় দেশের অন্যতম সেরা শ্যুটার আয়ুষী পোদ্দারের গলায় হতাশা। ষোলো বছরের মেয়ে আরও যোগ করেন, ‘‘চার বছর পরের টোকিও অলিম্পিক্সে নামার লক্ষ্যে তৈরি হচ্ছি। কিন্তু একটা মেয়েদের শ্যুটিং রাইফেল দরকার আমার। টাকার অভাবে এখনও কিনতে পারিনি। বাবা সবার কাছে হাত পাতছেন। চিঠি দিচ্ছেন অনেককে। কিন্তু এখনও তো কিছু পেলাম না।’’
আয়ুষীর বাবা পঙ্কজ পোদ্দারও শ্যুটার। অলিম্পিয়ান জয়দীপ কর্মকারদের চেয়ে সিনিয়র। মেয়ের সঙ্গেও তিনটে রাজ্য মিটে নেমেছেন। শ্যুটিং অ্যাকাডেমি তৈরি করেছেন ভদ্রেশ্বরে। নাম ‘বুলস আই’। সেখানে অন্য অনেকের সঙ্গে বছর দুয়েক আগে গুলি ছুড়তে শুরু করেছিলেন বর্তমানে ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী আয়ুষী। তার পরে রেল কর্মীর মেয়ে মাত্র এগারো মাসের অনুশীলনেই বুঝিয়ে দেন আপন প্রতিভা। পেয়ে যান চেক প্রজাতন্ত্রে এক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এয়ার রাইফেলে নামার জন্য ভারতীয় দলে সুযোগ। যিনি কয়েক দিন আগেই আসানসোলে পূর্বাঞ্চলীয় মিটে জোড়া সোনা জিতেছেন।
সাফল্যের স্বাদ শ্যুটিং জীবনের গোড়া থেকেই পেয়ে আসছেন আয়ুষী। প্রথম বার নর্থ ক্যালকাটা রাইফেল ক্লাবে রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপে নেমেই ৪০০-র মধ্যে ৩৮৫ পয়েন্ট তুলেছিলেন আয়ুষী। নিজের প্রিয় ইভেন্ট ৫০ মিটার রাইফেল প্রোনে একটা সোনা ও ব্রোঞ্জ আছে। এ ছাড়াও এয়ার রাইফেলে জুনিয়র ও যুব বিভাগে চ্যাম্পিয়ন ছোটখাটো চেহারার মেয়েটি। গত বছর আন্তঃ স্কুল শ্যুটিংয়ে নেমে তো রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দেন আয়ুষী। নতুন মিট রেকর্ড করে। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে শুরু করে জুনিয়র বিশ্বকাপে পদক। তবুও যেন স্বস্তি নেই হুগলির মেয়ের। ‘‘সাফল্য পেতে গেলে তো নিজের রাইফেল দরকার। ভাল স্ট্যান্ডার্ডের গুলি দরকার। সেটাই ঠিকমতো পাচ্ছি না,’’ দিল্লিতে জাতীয় শিবিরে যোগ দিতে যাওয়ার আগে বললেন দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় শ্যুটার। শিবিরের পরেই জাতীয় প্রতিযোগিতা রয়েছে পুণেয়। সেখানেও বাবার সাড়ে ছয় কেজি রাইফেলই ভরসা আয়ুষীর। অথচ দরকার আরও এক কেজি কম ওজনের রাইফেল।
আয়ুষীর বাবা এবং কোচ পঙ্কজবাবু যা হিসেব দিলেন, তাতে মেয়েদের ব্যবহারের জন্য যে রাইফেল দরকার তা নিজের মেয়ের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দরকার। একটা গুলির দাম তেত্রিশ টাকা। প্রতি দিন অনুশীলন করতে লাগে শ’খানেক গুলি। প্রচুর খরচ জেনেও কেন এই খেলায় এলেন? জানতে চাইলে আয়ুষীর জবাব, ‘‘বাবাকে দেখে। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে।’’
কুহেলি গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ কর্মকারের পরে শ্যুটিংয়ে বেশ কয়েকজন প্রতিশ্রুতিমান উঠে এসেছেন এ রাজ্যে। যাঁদের ভেতর আয়ুষী আন্তর্জাতিক মানের প্রতিভা। আন্তর্জাতিক মঞ্চ আরও অনেক পদক জেতার সম্ভাবনাময় শ্যুটার। অপেক্ষা শুধু নিজস্ব একটা রাইফেলের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy