দাপট: অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগোচ্ছেন নাদাল। গেটি ইমেজেস
মন্ত্রমুগ্ধ!
এই শব্দটাই মাথায় আসছে বৃহস্পতিবার রাফায়েল নাদালের খেলা দেখার পরে।
গত বছর সেপ্টেম্বরের পরে আর কোর্টে নামেননি। অস্ট্রেলীয় ওপেনের প্রস্তুতি প্রতিযোগিতা থেকে নাম তুলে নিয়েছেন। সেই লোকটাই কি না এত বড় একটা প্রতিযোগিতায় ফাইনালে পৌঁছে গেলেন এবং একটাও সেট না হারিয়ে। নাদালের এ রকম দুর্ধর্ষ ছন্দ দেখার পরে এ ছাড়া আর কী বলব!
শুধু আমিই নয় বৃহস্পতিবার রড লেভার এরিনায় নাদাল আর স্তেফানোস চিচিপাসের সেমিফাইনাল দেখতে হাজির হওয়া স্টেডিয়ামের দর্শকদেরও বোধহয় ম্যাচের পরে অনুভূতি একই রকম। কে বলবে নাদালের বিপক্ষে খেলছিলেন এমন এক জন, যিনি ফেডেরারকেও ছিটকে দিয়েছেন!
স্কোরলাইন বলছে নাদাল জিতেছেন ৬-২, ৬-৪, ৬-০ সেটে। গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালে এ রকম অনায়াস জয় সচরাচর দেখা যায় না। যেন এক জন শিক্ষক হাতেকলমে দেখিয়ে দিলেন শিক্ষার্থীকে কী ভাবে শিল্প ফুটিয়ে তুলতে হয়। তরুণ প্রজন্মকে নাদাল যেন বললেন, ওহে! তোমরা খুব ভাল খেলছ ঠিক আছে, তবে আমরা এখনও কম যাই না!
মেলবোর্নে গত দেড় সপ্তাহে ছ’টা ম্যাচ দেখার পরে আমার ব্যাখ্যা নাদালের সার্ভিস, ফোরহ্যান্ড আরও উন্নত হয়েছে। অস্ট্রেলীয় ওপেনে নামার আগেই নাদাল বলেছিলেন, সার্ভিসটা আরও ধারালো করে ফেলেছেন। সেটা কেন বলছিলেন বোঝা যাচ্ছে। নাদালের সার্ভিস অনেকটা মিডিয়াম পেসার বোলারের মতো। বলে বিরাট গতি না থাকলেও, সুইং আছে। কোনও বল ব্যাটসম্যানের শরীরের দিকে যাবে, কোনওটা বাইরের দিকে যাবে, বা কোনওটা শরীরের ভিতরের দিকে আসবে। মেলবোর্ন পার্কে এই সার্ভিসটাকেই আরও নিখুঁত করে তুলেছেন রাফা। ফলে প্রতিপক্ষের দিকে যখন সেটা ধেয়ে আসছে, আরও ভয়ঙ্কর লাগছে।
নাদালকে বলা হয় স্প্যানিশ বুল। কখনও ক্লান্ত হন না। পাঁচ সেট হোক, ১০ সেট হোক, একই তীব্রতায় খেলে যাবেন। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে দুরন্ত ভলি আর আগ্রাসী ফোরহ্যান্ড। আগে ওঁর কয়েকটা ফোরহ্যান্ড তবু ফস্কাতে দেখা যেত। এ বার মেলবোর্ন পার্কে একেবারে নিখুঁত ফোরহ্যান্ড দেখছি। আগের চেয়ে নেটেও উঠে আসছেন বেশি। প্রতিপক্ষকে যেটা নির্মম ভাবে হারাতে সাহায্য করছে।
জানি না শুক্রবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নোভাক জোকোভিচ না ২৮ নম্বর বাছাই লুকাস পুইয়া কে জিতবেন। তবে জোকোভিচ জিতলেও এই ছন্দে থাকা নাদালকে সামলানো সহজ হবে না। তাই ফরাসি প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বিশ্বের এক নম্বর জোকোভিচ ফাইনালে উঠতে পারলেও, আমার বাজি রাফাই।
তার কারণ দুটো। জোকোভিচ শুক্রবার শেষ চারে খেলছেন। নাদাল এক দিন আগেই ফাইনালে উঠে যাওয়ায়, বেশি বিশ্রাম পাবেন। তা ছাড়া নাদাল কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটাও সেট হারেননি। জোকোভিচ ইতিমধ্যে ডেনিস শাপোভালভ (তৃতীয় রাউন্ডে) এবং দানিল মিদভিদিভের (চতুর্থ রাউন্ড) বিরুদ্ধে একটা করে সেট খুইয়েছেন। অর্থাৎ ম্যাচে নাদালের মতো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন না জোকোভিচ।
আরও একটা ব্যাপার লক্ষ্য করার মতো। জোকোভিচকে কিন্তু তিন-চার সেটের ম্যাচের শেষের দিকে একটু ক্লান্ত লাগছে। মিদভিদিভের বিরুদ্ধে ম্যাচটার শেষ দিকে যেটা আরও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। জোকোভিচ সেটা স্বীকারও করে নিয়েছিলেন ম্যাচের পরে। তাই ওঁর ফিটনেস নিয়ে আমার কিছুটা আশঙ্কাই হচ্ছে।
অনেকেই ধরে নিচ্ছেন, শুক্রবার জোকোভিচই জিতছেন। তবে এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, এই পুইয়া ছেলেটা কিন্তু নাদালকে ২০১৬ যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে হারিয়ে দিয়েছিলেন। ভীষণ প্রতিভাবান। মাঝখানে যে কোনও কারণেই হোক, ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন। এখন আবার ভাল খেলছেন এবং শেষ চারে ওঠার পথে ওর চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দু’জনকে হারিয়েছেন (চতুর্থ রাউন্ডে একাদশ বাছাই বোর্না চোরিচ এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ১৬ নম্বর বাছাই মিওস রাওনিচ)। জোকোভিচকে তাই যথেষ্ট লড়াই করতে হতে পারে জিততে। আর এই ম্যাচটা যত বেশি সময় নেবে শেষ হতে, তত সুবিধে হবে নাদালের!
সব দিক বিচার করে তাই বলছি, ফাইনালে আমি এগিয়ে রাখব এই নির্মম নাদালকেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy