বিদায়ী টুর্নামেন্টে ওয়াটসন থাকলেন আফ্রিদির বিদায় ঘটিয়ে।
গর্দান যেতে বসেছে দু’জনেরই। ক্যাপ্টেন শাহিদ আফ্রিদি। কোচ ওয়াকার ইউনিস।
বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর কোন উইকেটটা আগে পড়বে, সেই জল্পনায় ব্যস্ত মোহালিতে উপস্থিত পাক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।
শোনা যাচ্ছে পার পাবে না সিলেকশন কমিটিও। তাদেরও নাকি দফা রফা করা হতে পারে।
ওয়াকারকে ছেঁটে ফেলে হয়তো আনা হবে আকিব জাভেদ বা কোনও বিদেশি কোচকে।
শুক্রবার মোহালিতে ২১ রানে হারিয়ে যে মুহূর্তে পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিলেন স্টিভ স্মিথরা, সেই মুহূর্ত থেকেই ওয়াঘার ও পারের ক্রিকেটে শুরু হয়ে গেল এই সব টালবাহানা।
পাক দলের অনেকে নাকি আজমেঢ় শরিফ যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সেটাও বাতিল করে শনিবারই এগারোটার বিমানে তুলে দেওয়া হচ্ছে তাদের। দুবাই হয়ে দেশে ফিরবেন আফ্রিদি-ওয়াকাররা। তার পর যে কত নাটক অপেক্ষা করে আছে, সেই নিয়ে এখন আলোচনায় ব্যস্ত এখানে পাক সাংবাদিককুল।
অনেকের ধারণা, আফ্রিদিরা দেশে ফেরার পরপরই একের পর এক উইকেট পড়তে শুরু করবে।
এ দিন অবসর ঘোষণা করলেন না পাক ক্যাপ্টেন। দু’দিন আগেই বলেছিলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই হয়তো আমার শেষ ম্যাচ’’। এ দিন বললেন অন্য কথা, ‘‘আগে দেশে ফিরি। তার পর চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্তটা নেব। দেশের মানুষকেই জানাব।’’ ওয়াকারও এ দিন বললেন, ‘‘ফিরে গিয়ে বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে বসব, তার পর ঠিক করব, ভবিষ্যতে আমার পক্ষে পাকিস্তানের কোচ থাকা সম্ভব হবে কি না।’’
তার পরই প্রশ্ন উঠে গেল সেই সুযোগ কি পাবেন ক্যাপ্টেন-কোচ? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ম্যাচের পর মোহালি ড্রেসিংরুমেই নাকি ‘ফেয়ারওয়েল’ দেওয়া হয়ে গিয়েছে দু’জনকেই।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নেমেছিলেন টুর্নামেন্টে নিজেদের টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে। কিন্তু হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায়। এই যন্ত্রণা আর লুকোবেন কী করে? ম্যাচের শেষ দিকে জায়ান্ট স্ক্রিন আর টিভিতে ভেসে ওঠা আফ্রিদির মুখে কষ্টটা স্পষ্ট প্রকাশ পেল। পাকিস্তানি সাংবাদিকরা যতটা চাঁচাছোলা ভাষায় তাঁদের ক্রিকেটারদের প্রশ্ন করেন, ভারতীয় মিডিয়া ধোনিদের সে রকম করলে সাংবাদিক বৈঠক ব্যাপারটাই হয়তো চিরতরে তুলে দিত বোর্ড। সাংবাদিক বৈঠকে সোজাসুজিই এ দিন ওয়াকারকে প্রশ্ন করা হয়, ‘‘আপনার দলের মধ্যে তো প্রচুর গোলমাল। প্লেয়ারের সঙ্গে প্লেয়ারের, আপনার সঙ্গে প্লেয়ারদের। এ জন্যই কি এই বেহাল দশা টিমের?’’ ওয়াকার মাথা ঠান্ডা রেখেই বললেন, ‘সব গুজব। আর গুজবে কান দেবেন না। এ সব আপনাদের মুখে শুনে আমারই অবাক লাগছে।’’ যদিও কোচের জবাব শুনে পাক সাংবাদিকদের অনেককে মুখ টিপে হাসতে দেখা গেল।
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাও শার্জিল খান একটা জেতার মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন। এ দিন পাকিস্তানকে বাঁচাতে তেমন কিছু কেউ করতে পারলেন না। অথচ আগের দিন মাঠে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছিলেন সবাই, জান লড়িয়ে দেবেন। বাস্তবে যার ধারেকাছেও যেতে পারলেন না কেউ। ওয়াকার অবশ্য বললেন, ‘‘আজকের হারের চেয়ে আগের দিনের হারটার জন্য অনেক বেশি আফসোস হয়েছিল।’’
শেষ দশ ওভারে ওয়াহাব রিয়াজ, মহম্মদ সামি, মহম্মদ আমের, ইমাদ ওয়াসিমদের পিটিয়ে ১১৬ রান তুললেন অজি ব্যাটসম্যানেরা। শেষ চার ওভারেই ৫৮। অস্ট্রেলিয়া নাকি টি-টোয়েন্টিতে তেমন যুতসই ক্রিকেটটা খেলতে পারে না— এই সমালোচকদের চুপ করিয়ে দিলেন ওয়াটসনরা। শহরে থাকা ধোনিরাও নিশ্চয়ই আরও নড়েচড়ে বসলেন।
রবিবারও অস্ট্রেলিয়া ব্যাটসম্যানরা এমন রুদ্রমূর্তি দেখালে ভারতের কপালে চিন্তা বাড়তেই পারে। মোহালি উইকেটে আগামী আটচল্লিশ ঘণ্টায় স্পিন ধরবে, গ্যারান্টি দিতে পারছেন না পিচ প্রস্তুতকারক দলজিত সিংহ। কিন্তু এ রকম রানে ভরা উইকেট পেলে যে ধোনিদের বিরুদ্ধেও রানের পিকনিক করতে পারেন অস্ট্রেলীয়রা। স্মিথ বলেই রাখলেন, ‘‘প্রথম দুটো ম্যাচে আমরা ভাল খেলতে না পারলেও দলটা এখন ভাল জায়গায় চলে এসেছে। ব্যাটসম্যানরা ভাল ফর্মে। জাম্পা বিপক্ষকে ভাল রিড করতে পারছে। এগুলো সবই আমাদের জন্য ভাল।’’ স্মিথের দলের এই আত্মবিশ্বাসটা চলে আসা মানে ভারতকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে রবিবার।
এ দিন শুরুতে খোয়াজা, ফিঞ্চ, ওয়ার্নারদের স্টাম্প ছিটকে দিয়েছিলেন রিয়াজ, ওয়াসিমরা। কিন্তু ইনিংসের বয়স যত বাড়ে, স্মিথ-ম্যাক্সওয়েলরা যত লড়াইয়ের রাশ ধরতে শুরু করেন, ততই পাকিস্তানকে অন্ধকারে তলিয়ে যেতে দেখা যায়। আফ্রিদি স্বীকার করে নেন, ‘‘শেষ চার ওভারে এত রান দিয়েছি যে ওখানেই ম্যাচ হাত থেকে অর্ধেক বেরিয়ে যায়।’’ পাক বোলাররা যখন ডেথে এত উদার, তখন অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের দেখুন। ফকনার শেষ দিকে ছ’বলে চার উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ জিতে নেন। আর যিনি এই কাণ্ডটা করলেন, ‘‘আগামী আটচল্লিশ ঘন্টা আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের সেরা দলকে হারানোর চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। এখন থেকেই সেই ম্যাচের জন্য ঝাঁপাতে হবে। সে যেমনই উইকেট পাই না কেন।’’
যা শুনলে ধোনিরা আরও চাপে পড়ে যেতে পারেন!
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া ২০ ওভারে ১৯৩-৪ (স্মিথ ৬১ ন.আ, ইমাদ ২-৩১),
পাকিস্তান ২০ ওভারে ১৭২-৮ (লতিফ ৪৬, ফকনার ৫-২৭)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy