আনুষ্ঠানিক ভাবে এক হয়ে গেল এটিকে-মোহনবাগান। —নিজস্ব চিত্র।
মোহনবাগান আর শুধু মোহনবাগান থাকল না।
পরের মরসুম থেকে ফুটবলের সব টুর্নামেন্টে একশো তিরিশ বছরের ক্লাব খেলবে এটিকে-মোহনবাগান নাম নিয়ে। বৃহস্পতিবার এটিকে-র সঙ্গে মোহনবাগান গাঁটছড়া বাঁধল। আইএসএল এবং আই লিগে বর্তমানে খেলা দুই ক্লাবের যে কোম্পানি হচ্ছে, তাতে এটিকে-র শেয়ার থাকছে আশি শতাংশ, সবুজ-মেরুনের কুড়ি। ডিরেক্টর বোর্ডে মোহনবাগানের দু’জন প্রতিনিধি থাকবেন।
ক্লাবের নাম বদল হয়ে গেলেও জার্সির রং বা প্রতীকের কোনও বদল হচ্ছে না। সবুজ-মেরুন জার্সি পরেই খেলবেন ফুটবলাররা। পালতোলা নৌকাই থাকছে জার্সিতে। তবে সিনিয়র থেকে জুনিয়র, সব পর্যায়ের কোচ থেকে ফুটবলার বাছার ক্ষমতা থাকবে এটিকে-র হাতে। কারণ সব সিদ্ধান্তই নেবে বোর্ড। সেখানে এটিকে-র প্রতিনিধি থাকবেন আট জন। মোহনবাগানের পরিকাঠামো অর্থাৎ মাঠ, তাঁবু, ড্রেসিংরুম সবই ব্যবহার করবে এটিকে। তবে সেটা কোচের পছন্দ হলে তার পরেই।
পরের মরসুমে এটিকে-মোহনবাগান কলকাতা লিগ ছাড়াও খেলবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে। আন্তোনিও লোপেস হাবাসই দলের কোচ থাকছেন। সহকারী হিসেবে থাকবেন সঞ্জয় সেন। দু’জনের সঙ্গেই পরের মরসুমের চুক্তি করে ফেলেছে এটিকে। ফলে কিবু ভিকুনা এ বারের আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হলেও কোচ হিসেবে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই। এটিকে এবং মোহনবাগান দু’দলে খেলা এ বারের ফুটবলারদের মধ্যে পরের মরসুমে কাদের রাখা হবে, কোচ হাবাসই তা ঠিক করবেন। এটিকে-র বেশির ভাগ ভারতীয় ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তি দু’-তিন বছরের। পরের মরসুমের জন্য মুম্বই থেকে শুভাশিস বসুকে নিয়েছে এটিকে। শোনা যাচ্ছে, কিবুর বর্তমান দলের শেখ সাহিল বা শুভ ঘোষদের মতো তরুণ ফুটবলারদের নেওয়া হতে পারে নতুন নামের ক্লাবে।
গত এক বছর ধরেই মোহনবাগানের সঙ্গে এটিকে-র আলোচনা চলছিল। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গেও তাদের কথা হয়েছিল। কেন সবুজ-মেরুন জার্সিকেই বেছে নিলেন? এটিকে প্রধান সঞ্জীব গোয়েনকা বলে দিলেন, ‘‘দু’পক্ষ সমান ভাবে এগিয়ে এসেছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’’ তিনি জানিয়ে দেন, ‘‘মোহনবাগানের ঐতিহ্য নষ্ট হয়, এ রকম কিছু আমরা করব না।’’ আর মোহনবাগান সচিব টুটু বসু বলে দিলেন, ‘‘নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, মোহনবাগান আইএসএল খেলবে। সেটা হচ্ছে। তা ছাড়া এটিকে ফুটবলটা জানে। সমর্থকদের আবেগ বুঝবে। মাঝপথে চলে যাবে না।’’ কত দিনের জন্য চুক্তি, তা অবশ্য জানায়নি কোনও পক্ষই। এটিকে-র প্রধান কর্তা বললেন, ‘‘সারা জীবনের জন্য।’’ বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, পয়লা বৈশাখ থেকেই নতুন কোম্পানি কাজ শুরু করবে। জানা গিয়েছে, মোহনবাগান সদস্যেরা কলকাতা লিগে খেলা দেখবেন বিনা পয়সায়। আইএসএলের টিকিটও তাঁরা পাবেন কম দামে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, মোহনবাগান কর্তারা কেন এটিকে-কে আশি শতাংশ শেয়ার ছেড়ে ফুটবল দলের ক্ষমতা হারাতে রাজি হলেন? এর প্রধান কারণ মূলত আর্থিক। ২০২০-২১ মরসুমে আইএসএলে খেলতে হলে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি-সহ অন্তত চল্লিশ কোটি টাকা দরকার ছিল। দেশ-বিদেশ ঘুরে অন্তত দশটি কোম্পানির সঙ্গে কথা হলেও এর অর্ধেক টাকার স্পনসরও জোগাড় করতে পারেননি টুটুবাবুরা। ফলে বাধ্য হয়েই তাঁরা ক্লাবের ফুটবল দলের নাম বদলে সায় দেন।
এটিকে-মোহনবাগান গাঁটছড়া বাঁধার পর ক্লাব সদস্যদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্লাব তাঁবুতে এ দিন হাজির ছিলেন প্রায় শ’খানেক সদস্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠেছে সমালোচনার ঝড়। ক্লাব-কর্তাদের তীব্র ভাষায় গালমন্দ করার পাশাপাশি উঠেছে ক্লাবকে ‘বিক্রি করে দেওয়া’-র মতো গুরুতর অভিযোগও।
তবে মোহনবাগানের দুই ঘরের ছেলে চুনী গোস্বামী এবং সুব্রত ভট্টাচার্য ক্লাবের এই পদক্ষেপকে কার্যত সমর্থনই করেছেন। অসুস্থ চুনী ফোনে বলে দেন, ‘‘যা হয়েছে ভালই হয়েছে।’’ আর সুব্রত বলেন, ‘‘ক্লাবের আর্থিক অবস্থা খারাপ। ফুটবলারদের মাইনে দেওয়া যাচ্ছে না। এটা করতেই হত। তবে দেখতে হবে, এই চুক্তিতে সদস্য-সমর্থকদের কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি না। ক্লাবের ঐতিহ্য যেন বজায় থাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy