জাভেদ মিয়াঁদাদের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে রোহিতের।
১৮ এপ্রিল, ১৯৮৬। শারজা। শেষ বলে চার রান দরকার পাকিস্তানের। চেতন শর্মার ফুলটস উড়িয়ে দিয়ে দু’ হাত উঁচিয়ে দৌড়তে শুরু করেন জাভেদ মিয়াঁদাদ।
২৯ জানুয়ারি, ২০২০। হ্যামিল্টন। শেষ বলে ভারতের দরকার চার রান। টিম সাউদিকে গ্যালারিতে ছুড়ে ফেলে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালির আলিঙ্গনে ধরা দেন ‘হিটম্যান’।
হ্যামিল্টনের সুপার ওভারে অবিকল শারজারই চিত্রনাট্য। ৩৪ বছর আগের সেই ম্যাচে শেষ দু’ বলে মিয়াঁদাদ নিয়েছিলেন ১০ রান। বুধবার ‘হিটম্যান’ নেন ১২।
শেষ বলে ভারতের রুদ্ধশ্বাস জয়ে বাঁধনহারা দেশের ক্রিকেটভক্তরা। তাঁদের চোখে হ্যামিল্টনের রোহিত হয়ে উঠছেন শারজার ‘জাভেদ মিয়াঁদাদ’।
প্রাক্তন পাক অধিনায়ক আসিফ ইকবাল।
পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক আসিফ ইকবাল অবশ্য দু’ প্রজন্মের দুই তারকার কীর্তিকে এক বন্ধনীতে ফেলতে রাজি নন। লন্ডন থেকে আনন্দবাজার ডিজিট্যাল-কে দূরভাষে তিনি বলেন, ‘‘ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচটা আমি দেখেছি। ভাল লেগেছে। আমি জানি অনেকেই রোহিত শর্মার ছক্কার সঙ্গে জাভেদের তুলনা টানতে শুরু করে দিয়েছেন। তবে দুটোর মধ্যে কোনও তুলনাই হয় না।’’
আরও পড়ুন: সুপার ওভারে ইনি ধারাভাষ্য দিলেই হারছে নিউজিল্যান্ড!
কেরিয়ারের শুরুর দিকে সুইং বল করতেন। পরে প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান হয়ে উঠেছিলেন আসিফ ইকবাল। পাকিস্তানের হয়ে ৫৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলা প্রাক্তন অধিনায়ক বলছেন, ‘‘ওয়ানডে ম্যাচে জাভেদ শেষ বলে ছক্কা মেরেছিল। রোহিত কিন্তু ছক্কা মারে টি টোয়েন্টিতে। দুটো দুই ফরম্যাটের খেলা। প্রেক্ষিতও ভিন্ন। তাই দু’ জনের মধ্যে তুলনা করা ঠিক নয়।’’
তিন দশকেরও বেশি সময় আগের সেই ম্যাচে ভারত ৫০ ওভারে করেছিল সাত উইকেটে ২৪৫ রান। রান তাড়া করতে নেমে মিয়াঁদাদের অপরাজিত ১১৬ রানের সৌজন্যে ম্যাচ জেতে পাকিস্তান। মিয়াঁদাদের সেই ছক্কা মিথে পরিণত হয়েছিল। ওই ম্যাচ ভারতীয় ক্রিকেটকে এতটাই নাড়া দিয়ে গিয়েছিল যে তার পর থেকে শারজায় ভারত-পাকিস্তান খেলা হলে অবধারিত ভাবে জিতত ইমরান খানের দেশ। থুড়ি, শুধু শারজা নয়, ক্রিকেট মাঠে পাকিস্তানকে দেখলেই কেমন কুঁকড়ে যেত ভারত। এখন অবশ্য সেই ছবিটা বদলে গিয়েছে। চাপের মুখে ভারত এখন আর ভেঙে পড়ে না। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকেও ম্যাচ বার করে নিতে পারে। হ্যামিল্টনেই যেমন ঘটল। ইডেন গার্ডেন্সে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখা আসিফ ইকবাল বলছিলেন, ‘‘জাভেদ ও রোহিতের উপরে মারাত্মক চাপ ছিল। আর দু’জনেই দারুণ ভাবে চাপ সামাল দিয়েছে।’’
সময়ের ব্যবধানে প্রায় তিন যুগ আগে-পরে মারা দুটো ছক্কার মধ্যে কি কোনও তুলনাই হয় না? সামান্য ভেবে আসিফ বলেন, ‘‘রোহিত আর জাভেদের ইনিংসের মধ্যে পার্থক্য এক জায়গাতেই। পরিস্থিতির বিচার করলে জাভেদের শটটাকেই আমি এগিয়ে রাখব। কারণ ভারতের বিরুদ্ধে শেষ বলে ছক্কাটা মেরেছিল জাভেদ। রোহিতের ছক্কাটা কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছিল না। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের চাপ কতটা, তা আমার আর বলার দরকার নেই। তবে যে কোনও দলের বিরুদ্ধেই শেষ বলে ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতানো কিন্তু মোটেও সহজ নয়।’’
প্রথম দিকে তুলনা করতে না চাইলেও ম্যাচের পরিস্থিতি, প্রতিপক্ষের বিচার করে আসিফ ইকবাল কিন্তু জাভেদ মিয়াঁদাদের ছক্কাকেই এগিয়ে রাখছেন।
তখন তিনি পাক জাতীয় দলের সদস্য। ইউনিস খানের সঙ্গে কানেরিয়া।
রোহিতের ছক্কা নিয়ে অবশ্য দু’ মেরুতে পাক ক্রিকেটের দুই প্রজন্ম। ব্যাটসম্যান আসিফ ইকবাল যখন মিয়াঁদাদকে এগিয়ে রাখছেন, তখন বোলার দানিশ কানেরিয়ার ভোট ‘হিটম্যান’-এর দিকে। পাকিস্তান থেকে কানেরিয়া বললেন, ‘‘রোহিতের ছক্কাকেই আমি এগিয়ে রাখব। ক্লাসিক্যাল শট বলতে যা বোঝায় রোহিত সে রকমই একটা শট খেলেছিল। এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে ছক্কা মারা কঠিন ছিল। আমার কাছে রোহিতের ছক্কাটাই সেরা।’’
আরও পড়ুন: সেক্রেড গেমস-এর নওয়াজউদ্দিনের স্টাইলে রোহিতের প্রশংসা করলেন সহবাগ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy