Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Ashok Malhotra

প্রভাকরকে মনে করাল শার্দূল, এই গভীরতা এসেছে আইপিএল থেকে

এই টেস্ট সিরিজে ভারত কুড়ি জন ক্রিকেটারকে খেলিয়েছে।

চমক: রেকর্ড ১২৩ রানের জুটি গড়ার পথে ওয়াশিংটন-শার্দূল। টুইটার

চমক: রেকর্ড ১২৩ রানের জুটি গড়ার পথে ওয়াশিংটন-শার্দূল। টুইটার

অশোক মলহোত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৪০
Share: Save:

অস্ট্রেলিয়া সফর শুরুর আগে কেউ যদি বলত, ভারতীয় দলে বিরাট কোহালি, কে এল রাহুল, যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, আর অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজারা থাকবে না, অথচ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন বেঁচে থাকবে, তা হলে তাকে নিশ্চয়ই উন্মাদ বলা হত। অথচ ঠিক তাই ঘটছে! ব্রিসবেনে ভারতের প্রায় তিন নম্বর দল খেলছে, অথচ আমরা এখনও সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছি। নিদেন পক্ষে সিরিজ ১-১ করে ফিরে আসার সম্ভাবনাটা তো খুবই উজ্জ্বল।

এই টেস্ট সিরিজে ভারত কুড়ি জন ক্রিকেটারকে খেলিয়েছে। যাদের মধ্যে ছ’জন একেবারেই নতুন মুখ। অভিষেক হয়েছে শুভমন গিল, মহম্মদ সিরাজ, নবদীপ সাইনি, ওয়াশিংটন সুন্দর, টি নটরাজনের। শার্দূল ঠাকুর খেলল জীবনের দ্বিতীয় টেস্ট। কিন্তু প্রত্যেক তরুণ ক্রিকেটার কিছু না কিছু ছাপ এই সিরিজে রেখে গিয়েছে।

রবিবার তৃতীয় দিনে যখন ঋষভ পন্থ আউট হয়ে গেল, ভারতের রান ছয় উইকেটে ১৮৬। মনে হচ্ছিল, প্রথম ইনিংসে অনেক বেশি রানে এগিয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়া। এবং, ম্যাচের রাশটাও নিজেদের হাতে তুলে নেবে। কিন্তু জীবনের দ্বিতীয় টেস্ট খেলা শার্দূল আর প্রথম টেস্টে নামা ওয়াশিংটন অন্য রকম ভেবেছিল। অসাধারণ একটা জুটি গড়ল ওরা। দু’জনেই হাফসেঞ্চুরি করল। সপ্তম উইকেটে তুলল রেকর্ড ১২৩ রান। অস্ট্রেলিয়ার ‘লিড’ কমিয়ে আনল মাত্র ৩৩ রানে। দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া বিনা উইকেটে ২১। এগিয়ে ৫৪ রানে।

চলতি সিরিজে একটা ব্যাপার গোটা ক্রিকেট বিশ্ব বুঝে গেল। ভারতের রিজার্ভ বেঞ্চ কতটা শক্তিশালী। ব্রিসবেন টেস্টে ভারতের দু’নম্বর নয়, তিন নম্বর দল খেলছে। এবং তারাই নাজেহাল করে দিচ্ছে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণকে। মনে রাখবেন, শেষ দুই টেস্টে অস্ট্রেলিয়া কিন্তু পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই নেমেছে।

ভারতীয় দলের এই তরুণদের সব চেয়ে বড় শক্তি, ওরা উল্টো দিকে কত বড় নাম খেলছে, তা মাথায় রাখে না। একেবারে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে। যার মানে শুধু স্ট্রোক খেলাই নয়। বুক চিতিয়ে ফাস্ট বোলারের বল মুখের সামনে থেকে নামানো কী সোজা ব্যাটে ফরোয়ার্ড ডিফেন্সিভ খেলাও। শরীরে বল লাগলে কিস্‌সু হয়নি ভাব দেখিয়ে আবার গার্ড নেওয়া। যেটা এ দিন বার বার ধরা পড়েছে সুন্দর এবং শার্দূলের ব্যাটিংয়ে।

এই ভয়ডরহীন ক্রিকেটের নেপথ্যে রয়েছে আইপিএল। আগে ভারতের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রবেশ করতে হত। যেটা অনেকের কাছেই এক অচেনা-অজানা জায়গা থাকত। এখন আইপিএলের দৌলতে সেই প্রতিবন্ধকতাটা মুছে গিয়েছে। টি-টোয়েন্টি হলেও বিশ্বের সেরা সব ক্রিকেটারের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করে নিচ্ছে তরুণরা। সেরাদের বিরুদ্ধে খেলছে। ফলে প্রতিপক্ষ যতই হেভিওয়েট হোক না কেন, ভয় বা অতিরিক্ত সমীহ এই ভারতীয় তরুণরা কাউকে করে না।

এই দলে যে সব নবীন ক্রিকেটার আছে, তাদের থেকে সেরাটা বার করে আনার জন্য আমি কোচ রবি শাস্ত্রী এবং অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানেকে ধন্যবাদ দেব। ছেলেদের মধ্যে একটা হার-না-মানা জেদ ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে ওরা। নটরাজন, সুন্দর, গিল, শার্দূল— এদের সবাইকে সফরের শুরু থেকে সাদা বলের ক্রিকেট খেলিয়ে তৈরি করে রাখা হয়েছে। আর মাঠে অধিনায়ক রাহানে ঠান্ডা মাথায় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে। অনভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের উপরে কোনও চাপ তৈরি হতে দেয়নি।

ব্রিসবেনের দল দেখে প্রথমে মনে হয়েছিল, ব্যাটিংয়ে গভীরতা নেই। সাতে অফস্পিনার সুন্দর আর আটে পেসার শার্দূল কতটা সামাল দেবে! ওরা সবাইকে ভুল প্রমাণিত করেছে। শার্দূলের মধ্যে কিছুটা হলেও মনোজ প্রভাকরের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাটটা খারাপ করছে না। সুইংটা করাতে পারে। তবে প্রভাকর অনেকটাই এগিয়ে। ও দু’দিকেই বল সুইং করাতে পারত। ব্যাট হাতে ইনিংসেও ওপেন করেছে। শার্দূলের হাতে ইনসুইংটা তেমন নেই। রিভার্স সুইংটা আছে। আর প্রভাকরের মতোই লড়াকু ছেলে।

ভারতের রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তি এখন বিশ্বের সেরা। এ রকম একটা শক্তিশালী ‘ব্যাক আপ গ্রুপ’ তৈরি করার জন্য ভারতীয় বোর্ডকেও ধন্যবাদ দিতে হবে। নিয়মিত ‘এ’ দলের বিদেশ সফর। রাহুল দ্রাবিড়কে একটা সময় উদীয়মান প্রতিভাদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া। সব কিছুরই ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy