Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

স্মিথের আঘাতে লর্ডসে মুহূর্তের জন্য ফিরেছিল হিউজ-আতঙ্ক

বছর পাঁচেক আগে ওই দুঃস্বপ্নের দিনটায় সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এক হাজার লোকও ছিল না। পেসার সন অ্যাবটের বাউন্সারটা ফিল হিউজের ঘাড়ে লাগার পরে তিনি কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পেরেছিলেন, তার পরেই লুটিয়ে পড়েন।

উৎকণ্ঠা: আর্চারের বলের আঘাতে মাটিতে পড়ে স্মিথ। বাটলার, রুট, বেয়ারস্টোদের চোখেমুখে উদ্বেগ। লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনে। গেটি ইমেজেস

উৎকণ্ঠা: আর্চারের বলের আঘাতে মাটিতে পড়ে স্মিথ। বাটলার, রুট, বেয়ারস্টোদের চোখেমুখে উদ্বেগ। লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনে। গেটি ইমেজেস

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০৪:০৬
Share: Save:

ক্রিকেট যেন মুহূর্তের মধ্যে থেমে গিয়েছিল লর্ডসে। যখন জোফ্রা আর্চারের বিষাক্ত একটা বাউন্সার এসে লাগে স্টিভ স্মিথের ঘাড়ে। আঘাত লাগার সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন স্মিথ।

বছর পাঁচেক আগে ওই দুঃস্বপ্নের দিনটায় সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এক হাজার লোকও ছিল না। পেসার সন অ্যাবটের বাউন্সারটা ফিল হিউজের ঘাড়ে লাগার পরে তিনি কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পেরেছিলেন, তার পরেই লুটিয়ে পড়েন। স্ট্রেচারে করে বার করে নিয়ে যেতে হয় হিউজকে। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে যান তিনি।

শনিবার লর্ডসে ২৮ হাজার দর্শকের সামনে আর্চারের বাউন্সারে আহত হওয়ার পরে স্মিথ যখন লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে, ক্রিকেট যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল কয়েক মুহূর্তের জন্য। ফিরে এসেছিল হিউজের মৃত্যুর সেই অভিশপ্ত স্মৃতি। স্মিথেরও আঘাত লাগে প্রায় একই জায়গায়।

শর্ট লেগ থেকে স্মিথের কাছে সব চেয়ে আগে পৌঁছন ইংল্যান্ডের জস বাটলার। তার পরে স্লিপে দাঁড়ানো ফিল্ডাররা। যাঁর বলে প্রথমে হাতে, তার পরে ঘাড়ে আঘাত পান স্মিথ, সেই আর্চারকে কাছাকাছি দেখা যায়নি। স্মিথ অবশ্য সেই আঘাতের ধাক্কা কাটিয়ে আবার মাঠে নেমে ৯২ করে আউট হন।

বিপন্ন: আর্চারের বাউন্সার আছড়ে পড়ল স্মিথের কানের পাশে। রয়টার্স

স্মিথ আঘাত পাওয়ার পরে কয়েক জন ইংল্যান্ড ক্রিকেটারকে অবশ্য হাল্কা হাসতে দেখা গিয়েছিল। এর মধ্যে এক জন ছিলেন স্বয়ং আর্চার। যে কারণে টুইটারে তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েন প্রথম টেস্ট খেলতে নামা ইংল্যান্ডের এই পেসার। কিন্তু লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের মুখে হাসির চিহ্ন ছিল না।

যেখানে দেখা গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সহকারী কোচ ব্র্যাড হাডিন, মিচেল স্টার্ক, নেথান লায়ন, ডেভিড ওয়ার্নারকে। দুশ্চিন্তার পাশাপাশি ওই মুখগুলোয় যেন ফুটে উঠছিল অভিশপ্ত এক ঘটনার স্মৃতিও। ২০১৪ সালের নভেম্বরে, শেফিল্ড শিল্ডের ওই ম্যাচে এঁরা চার জনই খেলেছিলেন। ওয়ার্নাররা যেন প্রাণপণে চেষ্টা করছিলেন সেই দুঃসহ স্মৃতিকে ভুলে যেতে।

সেই ম্যাচে স্মিথ খেলেননি। লর্ডসে সেই স্মিথকে ঘিরেই সাময়িক ভাবে ফিরে এসেছিল আতঙ্কের স্মৃতি। স্মিথ অবশ্য সামান্য পরেই উঠে পড়েন। জানা গিয়েছে, দলের ডাক্তার, রিচার্ড স-কে বলেন, ‘‘আমি ঠিক আছি।’’ এর পরে হেঁটেই বেরিয়ে যান। পরে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘ঘাড়ে, বাঁ কানের নীচে চোট লাগে স্মিথের। মাটিতে শুয়ে থাকা অবস্থায় তাঁর চোট পরীক্ষা করেন ডাক্তার। তার পরে ডাক্তারের নির্দেশেই মাঠ ছাড়েন স্মিথ। পরে ডাক্তারের পরীক্ষায় পাশ করে যান তিনি। এ বার রুটিন মাফিক স্মিথের উপরে নজর রাখা হবে।’’

হিউজের ঘটনার পরে নতুন ধরনের এক হেলমেট নিয়ে আসা হয়েছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য। যেখানে বলের আঘাত থেকে বাঁচার জন্য কানের নীচেও আস্তরণ ছিল। কিন্তু স্মিথ সেই ধরনের হেলমেট ব্যবহার করেননি। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কেউ কেউ বলেছেন, ‘‘এখন তো নতুন ধরনের হেলমেটে কানের পিছনটা ঢাকা থাকে। যাতে বলের আঘাত না লাগে। স্মিথ কেন ওই রকম হেলমেট পরে খেলল না?’’

স্মিথ ফিরে এসে আর ১২ রান যোগ করে আউট হয়ে যান। মাত্র আট রানের জন্য অ্যাশেজে টানা তিন নম্বর সেঞ্চুরি ফস্কে গিয়েছে তাঁর। কিন্তু এই লড়াকু ৯২-কে অনেকেই মনে করছেন, সেঞ্চুরির চেয়েও দামি ইনিংস। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের ২৫৮ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া থামে ২৫০ রানে। এর পরে চতুর্থ দিনে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের রান চার উইকেটে ৯৬।

স্মিথের এই ইনিংসে শুধু ক্রিকেটাররাই নন, মুগ্ধ গ্যারি লিনেকারের মতো প্রাক্তন ফুটবলারও। চোট পাওয়ার পরে স্মিথকে আবার ব্যাট করতে নামতে দেখে বিস্মিত লিনেকার টুইট করেন, ‘‘অবিশ্বাস্য! স্মিথ আবার ব্যাট করতে নামছে।’’ স্মিথ যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, লর্ডসের দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি যখন আবার ব্যাট করতে নামেন, তখন সেই দর্শকেরই একাংশ বিদ্রুপ করতে শুরু করে। যা ভালভাবে নেননি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। মাইকেল ভন টুইট করেন, ‘‘যে ইনিংসটা স্মিথ খেলে গেল, তার জন্য ওর অভিনন্দন প্রাপ্য, বিদ্রুপ নয়। স্মিথকে ব্যঙ্গ করা বন্ধ করুন। ওর এই ইনিংসটায় যেমন দক্ষতা, চূড়ান্ত শৃঙ্খলার ছাপ ছিল, সে রকমই ধরা পড়েছে চূডা়ন্ত সাহসী মনোভাবও।’’ অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন পেসার ড্যামিয়েন ফ্লেমিং বলেন, ‘‘চোট পেয়ে ফিরে আসার সময় স্মিথকে বিদ্রুপের মুখে পড়তে হল, ভাবা যায়!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy