উড়ন্ত: গোয়ায় এটিকে-মোহনবাগানের অনুশীলনেও এ ভাবেই নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন অরিন্দম। নিজস্ব চিত্র
আইএসএলে গত মরসুমে এটিকে-র চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে ফাইনালে ম্যাচের সেরাও হয়েছিলেন গোলরক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্য। এই মরসুমেও দুরন্ত ছন্দে তিনি।
আটটি ম্যাচে মাত্র তিনটি গোল খেয়েছেন। এখনও পর্যন্ত বাঁচিয়েছেন ২৪টি নিশ্চিত গোল। গত মঙ্গলবার চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে ৩১ বছর বয়সি ছ’ফুট দেড় ইঞ্চি উচ্চতার অরিন্দমের দু’হাতেই মানরক্ষা হয়েছিল সবুজ-মেরুনের। এটিকে-মোহনবাগানের ফুটবলারেরা বলেন, ‘‘অরিন্দম যখন আছে, তখন কোনও চিন্তা নেই। বিপক্ষে যত ভাল স্ট্রাইকার থাকুক, ওকে পরাস্ত করে গোল করা কঠিন।’’
টানা দু’মরসুম দুরন্ত পারফরম্যান্সের রহস্য কী? অরিন্দমের কথায়, ‘‘অনুশীলন ও শৃঙ্খলা। আমার ফুটবলজীবনে চড়াই-উতরাই কম ছিল না। জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে উপলব্ধি করেছি, পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। তাই অনুশীলনে কখনও ফাঁকি দিই না।’’
আরও পড়ুন: অনুশীলন শুরু রোহিতের, ফিল্ডিংয়ের ছবি সাড়া ফেলল নেটদুনিয়ায়
আরও পড়ুন: নতুন বছরের উপহার, এবার থেকে ‘স্যর’ লুইস হ্যামিল্টন
করোনা অতিমারির জেরে তখন দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে। সংক্রমণের ভয়ে মানুষ গৃহবন্দি। কিন্তু অরিন্দমকে দমিয়ে রাখা যায়নি। মাঠে নেমে অনুশীলন বন্ধ। তাই নিজেকে ফিট রাখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টালিগঞ্জের রাস্তায় দৌড়তেন, সাইকেল চালাতেন। সঙ্গী হতেন বাংলার প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটার সুমিত রজক।
ক্রিকেটারের সঙ্গে অনুশীলনের কী কোনও বিশেষ কারণ ছিল? এটিকে-মোহনবাগানের শেষ প্রহরীর ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের পাড়ায় খেলোয়াড় খুব বেশি নেই। সুমিতকে দৌড়তে দেখতাম। এক দিন নিজেই ওকে বললাম, চল আমরা একসঙ্গে দৌড়ই।’’ গোলরক্ষকের প্রধান অস্ত্র ফিটনেস। শুধু দৌড়েই কি ফিট থাকা সম্ভব? অরিন্দম বলছেন, ‘‘লকডাউনের সময় মাঠে নেমে বল নিয়ে অনুশীলন করা সম্ভব ছিল না। জিমও বন্ধ ছিল। সব চেয়ে বেশি চিন্তিত ছিলাম ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে।’’ আরও বললেন, ‘‘আমাদের পাড়ায় ক্লাবের দুর্গাপুজোর মঞ্চে তোয়ালে বিছিয়ে নানা ধরনের ফিটনেস ট্রেনিং করতাম। কী ধরনের অনুশীলন করতে হবে, সেই তালিকা এটিকে-মোহনবাগানের গোলরক্ষক কোচ অ্যাঙ্খেল পিনদাদো স্পেন থেকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ওঁর নির্দেশ মেনেই ট্রেনিং করতাম।’’
নিজেকে ফিট রাখার জন্য বিরাট কোহালি, সুনীল ছেত্রীর মতো অরিন্দমও আমিষ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। বলছিলেন, ‘‘সোদপুরে শৈশব কাটালেও আমাদের আদি বাড়ি টালিগঞ্জে। আমাদের বাড়ির দুর্গাপুজো এ বারই একশো বছর পূর্ণ করেছে। পুজোতে সকলে মাছ, মাংস খেলেও আমি ছুঁয়ে দেখিনি। স্বেচ্ছায় ভেগান হয়েছি। কারণ, এতে শরীর অনেক তরতাজা থাকে। ফিটনেস ভাল হয়।’’
গত ৪ অগস্ট প্রয়াত হন অরিন্দমের বাবা অসীম ভট্টাচার্য। পরেই দিনই অনুশীলনে নেমে পড়েছিলেন সবুজ-মেরুনের তারকা। বলছিলেন, ‘‘বাবা-মা আমার প্রেরণা। ওঁদের জন্যই এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি। বাবার হঠাৎ মৃত্যুতে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু অনুশীলন বন্ধ করিনি।’’ যোগ করেন, ‘‘বাবা সব সময় বলতেন, পরিস্থিতি যাই হোক, কখনও লক্ষ্যচ্যূত হবে না।’’
লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে গরফায় প্রাক্তন গোলরক্ষক অভিজিৎ মণ্ডলের কাছে অনুশীলন করতেন তিনি। ফিট থাকার জন্য যেতেন সাইকেল চালিয়ে। অনুশীলন করার জন্য গত বছরের জুলাই মাসে নিজেই কলকাতা থেকে গাড়ি চালিয়ে ভুবনেশ্বর চলে গিয়েছিলেন অরিন্দম। এক মাস ভাড়া বাড়িতে থেকে নিয়মিত ট্রেনিং করতেন সেই সময় অনূর্ধ্ব-১৬ ভারতীয় দলের গোলরক্ষক কোচ অভিজিতের কাছে।
অরিন্দমের উত্থানের নেপথ্যে মা অন্তরা ভট্টাচার্যেরও অবদান কম নয়। কেরিয়ারের শুরুর দিকে মাথা গরম করে মাঝেমধ্যেই বিতর্কে জড়াতেন সবুজ-মেরুনের গোলরক্ষক। তার জন্য মায়ের কাছে শাস্তিও কম পাননি তিনি। বলছিলেন, ‘‘তখন বয়স কম ছিল। অতটা পরিণত হইনি। প্রায়ই নানা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তাম। এর জন্য মায়ের কাছে প্রচুর মার খেয়েছি। এখন তার উপকার পাচ্ছি।’’
কী ভাবে নিজেকে বদলে ফেললেন? অরিন্দমের জবাব, ‘‘বয়স যত বেড়েছে, তত পরিণত হয়েছি। নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ এসেছে।’’ এটিকে-মোহনবাগানের পরের ম্যাচ নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে আগামী রবিবার। ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন অরিন্দম। গোলরক্ষকদের জন্য সব ম্যাচই তো অগ্নিপরীক্ষার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy