ঝুঁকি নিতে গিয়ে দেবজিৎ মজুমদারকে পেল না আটলেটিকো দে কলকাতা!
আন্তোনিও হাবাসের নির্দেশে যখন চার নম্বর রাউন্ডে মোহনবাগান কিপারকে নেওয়ার কথা ভাবলেন কর্তারা, ঠিক তখনই মোহনবাগানের কিপারকে তুলে নেয় রণবীর কপূরের মুম্বই। শেষ পর্যন্ত পুণের অমরিন্দর সিংহের সঙ্গে শিলং লাজংয়ের তিন নম্বর কিপার কুঞ্জং ভুটিয়াকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল গতবারের চ্যাম্পিয়নদের।
বৃহস্পতিবার রাতের তৈরি স্ট্র্যাটেজি কেন শুক্রবারের ব্রেকফাস্ট টেবলে বসে বদলে ফেললেন স্প্যানিশ কোচ। মাদ্রিদের বিমান ধরতে যাওয়ার আগে হাবাস বললেন, ‘‘দু’টো কারণে। প্রথমত আমার অনূর্ধ্ব-তেইশ কোটার ফুটবলার দরকার ছিল। তা ছাড়া অমরিন্দরের ভাল উচ্চতা আমাকে সারা রাত ভাবিয়েছিল। তাই ওকে প্রথমে তুলে নিয়ে পরে দেবজিৎ-কে ভেবেছিলাম। সমস্যা নেই। আমার তো স্প্যানিশ কিপার আছে।’’
কলকাতার কর্তারা অবশ্য দেবজিতকে না পেয়ে কিছুটা হলেও হতাশ। তবে তাঁরা খুশি অন্য কারণে। দেবজিতের জন্য নির্ধারিত টাকায় (পনেরো লাখ) দু’জন কিপারকে পেয়ে যাওয়ায়।
কলকাতারই একটা ক্লাব মোহনবাগান তেরো বছর পর এ বার আই লিগে ভারতসেরা হয়েছে। অথচ আইএসএলে আটলেটিকো দে কলকাতা টিমে ওই দলের একজনেরও জায়গা হল না। কেরল ব্লাস্টার্স, নর্থইস্ট, চেন্নাইয়ান যখন বিপণনের স্বার্থে স্থানীয় ফুটবলার নেওয়ার দিকে ঝুঁকেছে তখন কলকাতায় তেরো ফুটবলারের মধ্যে মাত্র দু’জন বঙ্গসন্তান-অর্ণব মণ্ডল আর জুয়েল রাজা।
অর্ণব জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চলে যাবেন বলে প্রথম চারটি ম্যাচে তাঁকে পাবেন না হাবাস। সে জন্য তাঁর জায়গায় বড় চেহারার ভাল স্টপারের খোঁজে ছিলেন। নিলামে আনাসের জন্য ঝাঁপিয়েও স্ট্র্যাটেজির ভুলের জন্য পায়নি কলকাতা। সেটা পরে সামাল দেন তাঁরা সালগাওকরের অগাস্টিন ফার্নান্ডেজকে তুলে নিয়ে। সাইড ব্যাক সমস্যা মেটাতে রিনো অ্যান্টোকে অবশ্য যে কোনও মূল্যেই চেয়েছিলেন হাবাস। সেটা পেয়েছেন। সঙ্গে নিয়েছেন রয়্যাল ওয়াহিংডোর লেফট ব্যাক লালচাঁদ কিমাকে। তবে নিলাম থেকে জাপানি বংশোদ্ভূত মিডিও আরাতা ইজুমিকে তাঁর দলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত তাই অনেককেই চমকে দিয়েছে। কারণ গত দু’টো আই লিগে পুণের হয়ে জঘন্য খেলেছেন আরাতা ওরফে নীলকণ্ঠ। কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছেও ইউজিনসন লিংডোকে না পাওয়াতেই আরাতা ছাড়া কোনও রাস্তা ছিল না। মনে হল ক্লাব পেয়ে এবং সেটা আটলেটিকো হওয়ায় হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন বছর বত্রিশের আরাতা। বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলে খেলা শুরু করেছিলাম। আবার কলকাতায় ফিরে আসছি। দারুণ অনুভুতি। ভাবতেই পারিনি চ্যাম্পিয়ন টিমে খেলব। মাদ্রিদে ট্রেনিং করতে যাব। ওখানেই নিজেকে আরও ফিট করব।’’ আর রিনো অ্যান্টোর মন্তব্য, ‘‘মোহনবাগান আমাকে সাত বছর আগে তাড়িয়ে দিয়েছিল। দলে রাখেনি। তখন এত তৈরিও ছিলাম না। কলকাতায় খেলার উত্তেজনাটাই অন্য রকম। গতবার আইএসএল খেলতে পারিনি। এ বার পেলাম তো পেলাম চ্যাম্পিয়ন টিমে খেলার সুযোগ।’’
দু’জন কিপার, দু’জন সাইড ব্যাক, একজন করে স্টপার আর মিডিও নিয়েছে কলকাতার কর্তারা। সব কিছুই নাকি হয়েছে কোচের স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী। তাঁকে রেখেই। তা সত্ত্বেও বড় চেহারাকে গুরুত্ব দিয়ে দল তৈরি করা কলকাতার কোচ সংশয়ে রয়েছেন মনে হল। নিলাম শেষ হওয়ার পর হাবাস হোটেলের লবিতে বসে জানতে চাইছিলেন, এ দিন দলে নেওয়া আরাতা দুই উইং-এ খেলতে পারেন কিনা? বললেন, ‘‘সুশীল সিংহ, নাদং ভুটিয়াদের দেখতে হবে। কতটা ফিট। কতটা ভাল।’’ যা শুনে আশ্চর্য-ই লাগল।
২৫ অগস্ট থেকে মাদ্রিদে তিন সপ্তাহের ট্রেনিং হবে কলকাতার। মার্কি ফুটবলার তাঁর মধ্যেই বেছে নেবেন জানিয়ে গেলেন হাবাস। চ্যাম্পিয়ন টিমের ফিকরু, বেটে, শুভাশিস রায়চৌধুরী, লোবো এমনকী ফাইনালের গোলদাতা মহম্মদ রফিককে ছেঁটে ফেলেছেন হাবাস। লোবোকে এ দিন নিল ট্রেভর মর্গ্যানের কেরল। রফিক তো দলই পাননি।
আই লিগ চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগানের শেহনাজকে নিল দিল্লি। আর অধিনায়ক শিল্টন পাল তো বিক্রিই হলেন না। ইস্টবেঙ্গলের অভ্র মণ্ডলেরও একই অবস্থা। দল পেলেন না লালকমল ভৌমিক-সহ অনেক বঙ্গসন্তানই।
আইএসএলের আট ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে সাতটি দলই স্থানীয় ফুটবলারদের প্রাধান্য দিয়েছে। ফলে অনেক অনামী ফুটবলারের জায়গা হয়েছে নিলামের পর। কলকাতাই শুধু ব্যতিক্রম।
কঠোর আন্তোনিও হাবাসের আবেগের অ্যাড্রিনালিনটা হয়তো মাদ্রিদেই ক্ষরণ হয়। কলকাতায় নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy