Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ইতিহাস গড়তে হবেই, দলকে বললেন ক্রোমা

বারাসতে রেনবোকে হারিয়ে শুক্রবার রাতে বাড়ি ফিরেই চোখের সমস্যায় কাবু স্ত্রী সাদিয়াকে নিয়ে ছুটেছিলেন হাসপাতালে। শনিবার সকালেও হাওড়ায় অনুশীলন সেরে কালিকাপুরের ফ্ল্যাটে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন স্ত্রীর শুশ্রূষায়। 

 ফুরফুরে: সতীর্থ উলফের সঙ্গে ক্রোমা। শনিবার নিজের বাড়িতে।

ফুরফুরে: সতীর্থ উলফের সঙ্গে ক্রোমা। শনিবার নিজের বাড়িতে।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৭
Share: Save:

ছয় দশক পরে কলকাতা ময়দানে তিন প্রধানের বাইরে কলকাতা লিগ জিতে রবিবার ইতিহাস গড়ার হাতছানি তাঁর সামনে। কিন্তু পিয়ারলেস অধিনায়ক আনসুমানা ক্রোমা তার ২৪ ঘণ্টা আগে ব্যস্ত পারিবারিক সমস্যা নিয়েই।

বারাসতে রেনবোকে হারিয়ে শুক্রবার রাতে বাড়ি ফিরেই চোখের সমস্যায় কাবু স্ত্রী সাদিয়াকে নিয়ে ছুটেছিলেন হাসপাতালে। শনিবার সকালেও হাওড়ায় অনুশীলন সেরে কালিকাপুরের ফ্ল্যাটে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন স্ত্রীর শুশ্রূষায়।

রাত পোহালেই আজ, রবিবার বারাসতে জর্জ টেলিগ্রাফের বিরুদ্ধে লিগের শেষ ম্যাচ পিয়ারলেসের। যে ম্যাচ জিতলেই ১৯৫৮ সালের ইস্টার্ন রেলের পরে ময়দানের তিন প্রধান মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডানের বাইরে কলকাতা লিগ জিতবে ক্রোমার দল। তাই পারিবারিক ব্যস্ততা থাকলেও মনোনিবেশে খামতি নেই কলকাতা ময়দানের স্বঘোষিত ‘মেসি’র। বলছেন, ‘‘লিগ এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, সেখানে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে সবার আগে দরকার মনঃসংযোগ। সকালে অনুশীলনের পরে জিতেন মুর্মু, লক্ষ্মীকান্ত মাণ্ডি, অনিল কিস্কুর মতো দলের জুনিয়র ছেলেদের সেটাই বোঝালাম। লিগ জয়ের এত কাছে এসে ট্রফিহীন ভাবে মরসুম শেষ করতে চাই না। ইতিহাস গড়তেই

হবে আমাদের।’’

তাঁর সঙ্গেই এক ফ্ল্যাটে থাকেন ব্রায়ান লারার দেশ ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগো থেকে পিয়ারলেসে খেলতে আসা অ্যান্টনি উলফ। এ দিন সকালে অনুশীলন থেকে ফিরে চিকিৎসকের সঙ্গে কথাবার্তা বলে স্ত্রী সাদিয়াকে প্রথমে ওযুধপত্র খাওয়ালেন। তার পরে অ্যান্টনির সঙ্গে ডুবে গেলেন জর্জ ম্যাচ নিয়ে নানা আলোচনায়। সঙ্গে দু’জনের পছন্দের পানীয়।

আধ ঘণ্টার সেই বৈঠক সেরে উঠে অ্যান্টনির হুঙ্কার, ‘‘লিখে নিন, লিগ জিতব আমরাই। জর্জ টেলিগ্রাফকে রবিবার হারাবোই।’’ আর ক্রোমা বলেন, ‘‘কাজটা খুব সোজা নয়। জর্জ বেশ ভাল দল। ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছে। তবে আমরা জিতলে কলকাতা ময়দানের পক্ষে ভাল। লিগের লড়াই আর ত্রিপাক্ষিক বা দ্বিপাক্ষিক থাকবে না।’’ যোগ করেন, ‘‘মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের স্পেনীয় কোচ এই কারণেই তো বলছেন কলকাতা লিগ দেশের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন প্রতিযোগিতা। এতে কলকাতার ফুটবল উৎকর্ষই বাড়ছে।’’

১০ ম্যাচে পিয়ারলেসের পয়েন্ট ২০। গোলপার্থক্য ১১। সমসংখ্যক ম্যাচে সমান পয়েন্ট ইস্টবেঙ্গলের। কিন্তু তাদের গোলসংখ্যা ৭। পিয়ারলেসের লিগ জয়ের অঙ্ক তাই একটাই। জর্জ টেলিগ্রাফকে হারাতে হবে। কলকাতা লিগে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল দুই দলের বিরুদ্ধেই গোল করে দলকে জিতিয়েছেন ক্রোমা। ১১ গোল করে তিনিই সর্বোচ্চ গোলদাতা। এ বার জর্জের বিরুদ্ধে প্রত্যাশার চাপ খেতাব জয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো? জবাবে ক্রোমা ও উলফ দু’জনেই বলে ওঠেন, ‘‘বড় দলে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কাজেই এই চাপ কোনও প্রভাব ফেলবে না।’’ ক্রোমা বলে দেন, ‘‘রবিবার বারাসতে নিশ্চয়ই ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা থাকবেন জর্জ টেলিগ্রাফকে সমর্থন করার জন্য। আমাদের উদ্দেশে নেতিবাচক স্লোগান দেবেন। ছেলেদের সেই ফাঁদে পা না দিতে বলেছি।’’ সঙ্গে এটাও বলে দেন, ‘‘আমাদের দলে কোনও চোট-আঘাত নেই। নেই কার্ড সমস্যা। দলের শীর্ষ কর্তারা সকলের বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছেন। লিগ জিতলে আকর্ষণীয় বোনাসও দেবেন। এই প্রেরণাটাও আমাদের রবিবার বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে।’’

পিয়ারলেস অধিনায়কের কথায়, রেনবো ম্যাচ ছিল সেমিফাইনাল। আর ফাইনাল রবিবার। এ বার তারকাখচিত দল তৈরি করেও লিগের শুরুটা ভাল হয়নি পিয়ারলেসের। কিন্তু মোহনবাগানকে হারানোর পরেই লিগ খেতাবের দিকে ছুটছে ক্রোমার দল। কোন ম্যাচ থেকে বুঝলেন এ বার চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন? ক্রোমা বলেন, ‘‘ভবানীপুরকে হারানোর পরেই মনে হয়েছে, এ বার আমরা কলকাতা লিগ জিততে পারি। এ বার দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়।’’

শনিবার সকাল থেকেই ক্রোমার মোবাইলে উপচে পড়ছে মেসেজ। যে কথা জানিয়ে হাসতে হাসতে ‘ময়দানের মেসি’ বলেন, ‘‘মোহনবাগান সমর্থকেরা বলছেন জিততেই হবে। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা বলছেন, আমরা নয়। লিগ পাবে ওঁদের দল। আমার কিন্তু ব্যাপারটা বেশ লাগছে।’’ দলের ম্যানেজার শুক্রবারেই গিয়েছেন পুরীতে পুজো দিতে। সে তথ্য দিয়ে ক্রোমাই গড়গড় করে বলে দেন, ‘‘সবার প্রার্থনাই আমাদের শক্তি, মনোবল বাড়িয়ে দেবে।’’

লিগ জিতে ইতিহাস তৈরি করতে গেলে আপনার দলের ‘এক্স ফ্যাক্টর’ তা হলে কী? ক্রোমা এ বার দেখিয়ে দেন তাঁর বাঙালি স্ত্রীকে। বলেন, ‘‘ও আমার এক্স ফ্যাক্টর। প্রথম সম্পর্ক তৈরি হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই মোহনবাগানে খেলার ডাক পেয়েছিলাম। গত মাসে বিয়ের পরে রবিবার আমাকে কলকাতা লিগ ও সর্বোচ্চ গোলদাতার ট্রফিটাও এনে দেবে আমার স্ত্রী-ভাগ্য। এটাই আমার বিশ্বাস।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ansumana Kromah Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy