Advertisement
E-Paper

সেরিনাকে দেখে টেনিস শুরু, বার বার খালি হাতে ফেরা কিজ়ের অবশেষে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়

বার বার কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালে শেষ হয়েছে দৌড়ে। এক বার ফাইনালেও হেরেছেন। তার পরেও হাল ছাড়েননি ম্যাডিসন কিজ়। অবশেষে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন তিনি।

tennis

অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ট্রফি হাতে ম্যাডিসন কিজ়। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:২২
Share
Save

২৯ বছর ৩৪৩ দিন। প্রায় ৩০ বছর সময় লেগে গেল তাঁর প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে। বার বার কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালে শেষ হয়েছে দৌড়ে। এক বার ফাইনালেও হেরেছেন। তার পরেও হাল ছাড়েননি ম্যাডিসন কিজ়। অবশেষে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন তিনি। সেরিনা উইলিয়ামসকে দেখে টেনিস শুরু করেছিলেন কিজ়। সেরিনার পর আর এক আমেরিকান খেলোয়াড় হিসাবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতলেন তিনি।

রড লেভার এরিনায় শনিবার স্থানীয় সময় তখন রাত ১০টা। সামনে এরিনা সাবালেঙ্কা। গত দু’বার এই কোর্ট শাসন করেছেন তিনি। বিশ্বের এক নম্বর মহিলা টেনিস তারকার সামনে কিজ়ের জয়ের আশা করেছিলেন কতিপয় সমর্থকই। তাঁরা কিজ়ের দল। অর্থাৎ, তাঁর স্বামী তথা কোচ, ফিজ়িয়ো ও দলের বাকিরা। সঙ্গে আমেরিকা থেকে আসা কয়েক জন সমর্থক। বাকি গোটা গ্যালারি সাবালেঙ্কার দিকে। সেই গ্যালারিকেই প্রথম সেটে চুপ করিয়ে দিলেন কিজ়। তাঁর পাওয়ার টেনিসের কাছে হার মানতে হল সাবালেঙ্কাকেও। সেই সাবালেঙ্কা, যাঁকে আধুনিক টেনিসে অন্যতম পাওয়ার হিটার বলা হয়।

দ্বিতীয় সেটে আবার চিৎকার ফিরল রড লেভার এরিনাতে। সেই সেটে কিজ়কে উড়িয়ে দেন সাবালেঙ্কা। দেখে মনে হচ্ছিল, ছন্দ ফিরে পেয়েছেন বেলারুসের খেলোয়াড়। এক বার তিনি ছন্দ পেয়ে গেলে তাঁকে হারানো কঠিন। সেই কঠিন কাজটাই করলেন কিজ়। তৃতীয় সেট ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল টাইব্রেকারের দিকে। কিন্তু ১২তম গেমে কিজ়ের একের পর এক নিখুঁত রিটার্ন চাপে ফেলল সাবালেঙ্কাকে। চাপে ভুল করলেন তিনি। যেমনটা করেছিলেন প্রথম সেটে। সেই ভুল কাজে লাগিয়ে জিতলেন কিজ়। তাঁর ফোরহ্যান্ড লাইনের ভিতর পড়ে বাইরে বেরিয়ে যেতেই ছুটে গেলেন কিজ়। ছুটলেন তাঁর দলের দিকে।

রড লেভার এরিনায় তখন দুটো আলাদা দৃশ্য। এক দিকে স্বামী বিয়র্ন ফ্র্যাটানগেলোকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন কিজ়। তাঁদের জড়িয়ে দলের বাকিরা। অন্য দিকে তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে বসে সাবালেঙ্কা। তোয়ালের ফাঁক দিয়ে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, সাবালেঙ্কাও কাঁদছেন। তিনি হয়তো সকলের সামনে তা দেখাতে চাইছেন না। কিছু ক্ষণ পরে কোর্ট থেকে বেরিয়ে যান সাবালেঙ্কা। যখন ফেরেন, তখন তিনি স্বাভাবিক। কথা বলতে গিয়েও মজা করলেন। কিন্তু কিজ়ের আবেগ বার বার ধরা পড়ল। ধরা পড়বে না কেন, যে পরিস্থিতি থেকে তিনি ফিরে এসেছেন তা এক কথায় অভাবনীয়। এক সময় ভেবেছিলেন, কেরিয়ারে আর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা হবে না। কিন্তু তাঁর দল তাঁর উপর ভরসা রেখেছিল। সেই ভরসার দাম দিয়েছেন কিজ়।

tennis

চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বামী তথা কোচকে জড়িয়ে ধরেছেন কিজ়। ছবি: রয়টার্স।

আমেরিকার রক আইল্যান্ডে জন্মানো কিজ়ের পরিবারের কারও টেনিসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। তিনিও টেনিসের প্রেমে পড়েছিলেন অন্য কারণে। কিজ়ের যখন চার বছর বয়স তখন উইম্বলডনে সেরিনার খেলা দেখেছিলেন তিনি। সেরিনার পোশাক তাঁর খুব পছন্দ হয়েছিল। বাবাকে বলেছিলেন, ওই রকম একটা পোশাক তাঁর চাই। বাবা মজা করে বলেছিলেন, তিনি টেনিস খেললে ওই রকম পোশাক কিনে দেবেন। সে কথা শুনেই তাঁর টেনিস শুরু। তবে পরবর্তী কালে উইলিয়ামস বোনদের খেলা দেখে শিখেছেন কিজ়। কেরিয়ারে কোনও দিন সেরিনাকে তিনি হারাতে পারেননি। তবে ভিনাসকে তিন বার হারিয়েছেন কিজ়।

১০ বছর বয়সে আরও ভাল ভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য মায়ের সঙ্গে ফ্লরিডায় যান কিজ়। সেখানে এভার্ট টেনিস অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। জুনিয়র স্তরে ভাল খেলায় মাত্র ১৫ বছরে পেশাদার সার্কিটে পা দেন কিজ়। তাঁকে আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রতিভা ধরা হত। কিন্তু পেশাদার সার্কিটে বার বার ব্যর্থ হয়েছেন কিজ়। তিনি এর আগে এক বারই কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠেছিলেন। ২০১৭ সালে ইউএস ওপেনের ফাইনালে স্লোয়ানে স্টিফেন্সের কাছে স্ট্রেট সেটে হারেন কিজ়। গোটা ম্যাচে মাত্র তিনটি গেম জিতেছিলেন তিনি। ফাইনালে দ্বিতীয় সেটে একটিও গেম জেতেননি। খেলা শেষে বিদ্রুপের মুখে পড়তে হয়েছিল কিজ়কে। অনেকে টেনিসের সবচেয়ে খারাপ ফাইনালিস্টের আখ্যা দিয়েছিলেন তাঁকে। দু’বার করে ইউএস ওপেন ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনাল খেলেছেন কিজ়। এক বার খেলেছেন ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনাল। কিন্তু সেখানেই দৌড় শেষ হয়ে গিয়েছে। অবশেষে হাসি ফুটল কিজ়ের মুখে।

বার বার চোট তাঁকে সমস্যায় ফেলেছে। পিছিয়ে পড়েছেন। ২০২১ সালে ক্রমতালিকায় প্রথম ৫০-এর বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই কথাই বললেন তিনি। কিজ় বললেন, “আমি বার বার চোটের কারণে পিছিয়ে গিয়েছি। এক সময় আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার দল আমার উপর ভরসা রেখেছিল। আমার স্বামী ও কোচ আমাকে ভরসা দিয়েছিল। ওদের জন্যই এই ট্রফি জিততে পেরেছি। এই পরিস্থিতিতে আবেগ ধরে রাখা কঠিন। আমি কিন্তু এ বার কেঁদে ফেলব।” কিজ় যখন এই কথাগুলি বলছেন, তখন তাঁর দলের প্রত্যেকের চোখে জল। স্বামী বিয়র্নের চোখ ছলছল করছে।

tennis

অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার পর উচ্ছ্বাস কিজ়ের। ছবি: রয়টার্স।

সাবালেঙ্কাও কিজ়ের খেলার প্রশংসা করেছেন। তাঁর নাছোড় মনোভাবের প্রশংসা করেছেন। হার না মানা লড়াইয়ের প্রশংসা করেছেন। প্রশংসা করাই উচিত। সাবালেঙ্কার মতো কঠিন প্রতিপক্ষকে চুপ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেমিফাইনালে বিশ্বের দ্বিতীয় বাছাই তথা চার বারের গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী ইগা শিয়নটেকের বিরুদ্ধে ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে জিতেছিলেন কিজ়। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, এ বার সহজে তাঁকে হারানো সম্ভব হবে না। ফাইনালে সাবালেঙ্কা সেটাই হাড়ে হাড়ে টের পেলেন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফিতে খোদাই হল কিজ়ের নাম। প্রায় ৩০ বছর বয়সে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন। কিজ় বুঝিয়ে দিলেন, স্বপ্ন সত্যি করার জন্য পরিশ্রম চালিয়ে গেলে তিনি সফল হবেনই। সে সামনে শিয়নটেক বা সাবালেঙ্কা, যে-ই থাকুন না কেন।

Australian Open 2025 Aryna Sabalenka Serena Williams

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।