জুটি: প্রবীর (বাঁ দিকে) ও প্রীতম ফের এটিকে জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন। ফাইল চিত্র
ইন্ডিয়ান অ্যারোজে খেলার সময় প্রীতম কোটালের জন্য মিডফিল্ডার থেকে রাইট ব্যাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রীতমের জন্যই আবার মাঝমাঠে ফিরে এসেছেন প্রবীর দাস। কারণ, আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস তাঁকে রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি, আক্রমণ গড়ে তোলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
মাঠের বাইরেও দুই বঙ্গ তারকার বোঝাপড়া দুর্দান্ত। গোয়ার দর্শক-শূন্য ফতোরদা স্টেডিয়ামে চেন্নাইয়িন এফসিকে চূর্ণ করে তৃতীয় বার এটিকের জার্সিতে আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উচ্ছ্বসিত প্রীতম বলছিলেন, ‘‘অসাধারণ অনুভূতি। এই মরসুমে আমরা শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে। তাই লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়া।’’ ট্রফি জয়ের উৎসবের আবহেও প্রীতম-প্রবীরের মনে কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে গ্রুপ লিগে যুবভারতীতে চেন্নাইয়িনের কাছে হারের যন্ত্রণা। বলছিলেন, ‘‘ঘরের মাঠে ওদের কাছে ১-৩ হারটা আমরা কিন্তু ভুলিনি। তাই ফাইনালে চেন্নাইয়িনকে হারিয়েই মাঠ ছাড়ার শপথ নিয়েছিলাম আমরা।’’ এটিকের হয়ে দু’বার আইএসএল জিতেছেন প্রীতম। মোহনবাগানের জার্সিতে এক বার আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। সেরা মুহূর্ত কোনটা? প্রীতমের কথায়, ‘‘সব ট্রফি জয়ই আমার কাছে স্মরণীয়। তবে তেরো বছর পরে মোহনবাগানের আই লিগের জয়ে সাক্ষী থাকার অনুভূতিটাই আলাদা।’’ এটিকে তারকা যোগ করলেন, ‘‘আগের দু’টো মরসুম আমার একেবারেই ভাল যায়নি। এটিকে-কে ট্রফি দিতে না পারার যন্ত্রণা ক্ষতবিক্ষত করছিল মনকে। অবশেষে স্বস্তি। এটিকে কর্তারা আমার উপরে যে আস্থা রেখেছিলেন, তার মর্যাদা দিতে পেরে দারুণ আনন্দ হচ্ছে।’’ মোহনবাগানকে আই লিগ জেতার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে প্রীতম যোগ করেন, ‘‘পরের মরসুমে এটিকে ও মোহনবাগান একসঙ্গে আইএসএলে খেলবে। ফুটবলপ্রেমীদের অনুরোধ করব আমাদের খেলা দেখতে মাঠে আসার জন্য। সমর্থকেরাই তো আমাদের প্রেরণা’’
করোনা-আতঙ্কে দর্শক শূন্য স্টেডিয়ামে ফাইনাল খেলা কতটা যন্ত্রণার ছিল? প্রীতম বলছিলেন, ‘‘দর্শক শূন্য স্টেডিয়ামে খেলাটা সত্যই কঠিন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কিছু করার নেই।’’
এ বারের আইএসএল প্রবীরের কাছেও ছিল নিজেকে প্রমাণ করার। চোটের কারণে গত মরসুমে একটাও ম্যাচ খেলতে পারেননি। ব্যক্তিগত সমস্যাতেও জর্জরিত হয়েছিলেন তিনি। প্রবীর বলছিলেন, ‘‘গত মরসুমে মাঠে এবং মাঠের বাইরে নানা ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কখনও হাল ছাড়িনি। ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই চালিয়ে গিয়েছি। কারণ, জবাব আমাকে দিতে হবে মাঠে নেমেই।’’
প্রবীরের প্রত্যাবর্তনে উচ্ছ্বসিত প্রীতমও। বলছিলেন, ‘‘প্রবীরের জন্য দারুণ আনন্দ হচ্ছে। কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে ওকে যেতে হয়েছিল। ২০১৬ সালেও আমরা এটিকের হয়ে আইএসএল জিতেছিলাম। চার বছর পরে আবার একসঙ্গে আইএসএল জিতলাম। অসাধারণ অনুভূতি।’’
দু’বার আইএসএল জিতলেও জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন এখনও পূরণ হয়নি প্রবীরের। যদিও তা নিয়ে হতাশ হতে রাজি নন তিনি। বলছিলেন, ‘‘জাতীয় দলের কোচ যদি আমাকে ডাকেন, তখন তা নিয়ে ভাবব। এই মুহূর্তে এই জয়টা উপভোগ করতে চাই।’’ শনিবার ম্যাচের পরেই ড্রেসিংরুমে ফিরে সতীর্থদের সঙ্গে ‘বালা ডান্স’ করেছেন। এ বার তাঁর লক্ষ্য করোনাভাইরাস রুখতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। বলছিলেন, ‘‘পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই। কী ভাবে করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হবে, তা বোঝাতে চাই সকলকে।’’
ফাইনাল খেলতে গোয়া রওনা হওয়ার আগে প্রবীর বলেছিলেন, ঘরের মাঠে চেন্নাইয়িনের কাছে হেরেছিলেন দলগত ফুটবল খেলতে না পারায়। এ ছাড়া কিছুটা আত্মতুষ্টও হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। দাবি করেছিলেন, ফাইনাল একেবারেই আলাদা। গ্রুপ পর্বের হারের কোনও প্রভাব পড়বে না। শনিবার রাতে ফুটবলপ্রেমীরা সাক্ষী থাকলেন এটিকের ফুটবলারদের দুরন্ত লড়াইয়ের। ম্যাচের ৪০ মিনিটে রয় কৃষ্ণ উঠে যাওয়া সত্ত্বেও ছবিটা বদলায়নি। প্রবীর বলছিলেন, ‘‘আমাদের রণনীতি ছিল, রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে গোলের জন্য ঝাঁপানো। পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেই
চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy