সুমিত অন্তিল: ২০১৫ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হাঁটুর নিচ থেকে বাঁ-পা বাদ দিতে হয়। বিশ্বরেকর্ড গড়ে জ্যাভলিনে জিতলেন সোনা। ছবি রয়টার্স।
এক বার, দু’বার নয়। টোকিয়োয় সোনা জয়ের পথে পাঁচ-পাঁচ বার নিজের বিশ্বরেকর্ডের চেয়ে বেশি দূরত্বে জ্যাভলিন ছুড়েছেন তিনি। তার পরেও সুমিত অন্তিল মনে করেন, সেরাটা এখনও দেখাতে পারেননি!
সোমবার জ্যাভলিনে (পুরুষদের এফ ৬৪ বিভাগ) সুমিতের কীর্তি দেখতে দেখতে রিয়ো প্যারালিম্পিক্সে রুপোজয়ী দীপা মালিক উত্তেজিত হয়ে বলছিলেন, ‘‘কী কাণ্ড ঘটাচ্ছে সুমিত। এ তো অসম্ভবকে সম্ভব করে দিচ্ছে।’’ শেষ পর্যন্ত ৬৮.৫৫ মিটার ছুড়ে জ্যাভলিনে সোনা পেলেন ২৩ বছর বয়সি সুমিত। টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্স থেকে যা ভারতের দ্বিতীয় সোনা। যার পরে সুমিতের মন্তব্য, ‘‘এটা আমার সেরা থ্রো নয়। তবে বিশ্বরেকর্ড করতে পেরে অবশ্যই আমি খুশি।’’
জ্যাভলিনে আসার আগে কুস্তিগির ছিলেন সুমিত। কিন্তু একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা তাঁর জীবনকে ধাক্কা দিয়ে যায়। বাঁ-পা অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয়। কিন্তু থেমে যাননি সুমিত। এর পরে বেছে নেন জ্যাভলিনকে। টোকিয়োয় সোনা জেতার পরে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি কুস্তিগির হিসেবে সে রকম ভাল ছিলাম না।’’ হরিয়ানার ছেলে যোগ করেন, ‘‘আমি যেখানে বড় হয়ে উঠেছি, সেখানে সব পরিবারই চায় সন্তান যেন ভাল কুস্তিগির হয়! তাই কুস্তিতে গিয়েছিলাম।’’ নিজের কুস্তি-জীবন নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি সাত-আট বছর বয়সে কুস্তি শুরু করেছিলাম। বছর ১২-১৩ পর্যন্ত চালাই। তবে নিয়মিত নয়। আমি সে রকম ভাল কুস্তিগির ছিলাম না।’’
সুমিত যে বিভাগে টোকিয়োয় নেমেছেন, তাকে বলা হয় ‘এফ ৬৪’। এই বিভাগে তাঁরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন, যাঁদের একটা পা অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং যাঁরা কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে দাঁড়াতে পারেন। হরিয়ানার সোনপতের এই তরুণ আগেই বিশ্বরেকর্ডের (৬২.৮৮) মালিক ছিলেন। এ দিন পাঁচ বার নিজের রেকর্ডের চেয়ে বেশি দূরত্বে জ্যাভলিন ছোড়েন তিনি। তাঁর এ দিনের ‘থ্রো’গুলো যথাক্রমে, ৬৬.৯৫, ৬৮.০৮, ৬৫.২৭, ৬৬.৭১ এবং ৬৮.৫৫ মিটার।
দুর্ঘটনার পরে কী ভাবে ঘুরে গিয়েছিল তাঁর জীবন? সুমিতের কথায়, ‘‘পা বাদ যাওয়ার পরে আমার জীবনটাই বদলে যায়। ২০১৫ সালে আমি স্টেডিয়ামে যেতাম শুধু সবার সঙ্গে দেখা করতে। তখন প্যারা-অ্যাথলিটদের দেখা পাই। ওরা আমাকে বলেছিল, ‘তোমার উচ্চতা ভাল, শরীরের গঠন ভাল। কে বলতে পারে, তুমি পরের প্যারালিম্পিক্সে যাবে না?’ তখন কে ভেবেছিল, আমি চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাব!’’
সেটাই হলেন সুমিত। কী রকম অনুভূতি হচ্ছে? বিশ্বসেরার কথায়, ‘‘এটা আমার প্রথম প্যারালিম্পিক্স ছিল। সত্যি বলতে কী, একটু চাপে ছিলাম। আমার প্রতিদ্বন্দ্বীরা সবাই খুব ভাল মানের। আমি চেয়েছিলাম, ৭০ মিটারের উপরে ছুড়তে। আমার মনে হয়, ৭৫ মিটারের উপরেও ছুড়তে পারব। এটা আমার সেরা থ্রো নয়।’’
আরও কতটা দূরত্বে ছুড়তে পারার ক্ষমতা রাখেন তিনি? সুমিতের জবাব, ‘‘প্রস্তুতিতে আমি অনেক বারই ৭১ মিটার, ৭২ মিটার ছুড়েছি। জানি না, প্রতিযোগিতায় কী হল।’’ একটা শপথ কিন্তু করছেন নীরজ চোপড়ার পরে বিশ্বমঞ্চ থেকে জ্যাভলিনে ভারতকে সোনা এনে দেওয়া এই তরুণ। ‘‘ভবিষ্যতে কিন্তু আমি আরও বেশি দূরে ছুড়ব,’’ বলছেন নতুন নায়ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy