Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

বৃষ্টিবিঘ্নিত ফতুল্লায় প্রাপ্তি বলতে শুধুই পুরনো ভাজ্জি

টেস্ট দলে হরভজন সিংহের প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে একটা টুইট করেছিলাম। তাতে এক নেটচারী বিদ্যুৎগতির তৎপরতায় তেড়েফুঁড়ে উঠে পাল্টা তুলে ধরে যে, প্রথম শ্রেণির তিনটে ম্যাচে হরভজনের শিকারের সংখ্যা মাত্র ৬। একদম ঠিক কথা। এ নিয়ে বিতর্কের সত্যিই কোনও জায়গা নেই। স্রেফ ম্যাচ আর উইকেটের নিক্তিতে মাপলে হরভজনকে দলে ফেরানো নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

মোমিনুলের উইকেট নিয়ে হরভজন। ছবি: এএফপি।

মোমিনুলের উইকেট নিয়ে হরভজন। ছবি: এএফপি।

দীপ দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৫ ১৮:২৯
Share: Save:

টেস্ট দলে হরভজন সিংহের প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে একটা টুইট করেছিলাম। তাতে এক নেটচারী বিদ্যুৎগতির তৎপরতায় তেড়েফুঁড়ে উঠে পাল্টা তুলে ধরে যে, প্রথম শ্রেণির তিনটে ম্যাচে হরভজনের শিকারের সংখ্যা মাত্র ৬।

একদম ঠিক কথা। এ নিয়ে বিতর্কের সত্যিই কোনও জায়গা নেই। স্রেফ ম্যাচ আর উইকেটের নিক্তিতে মাপলে হরভজনকে দলে ফেরানো নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল, ক্রিকেট টিম নির্বাচনটা শুধুই সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবনিকাশ? তা হলে তো কাজটা কম্পিউটার দিয়ে করিয়ে নিলেই হয়। নির্বাচকদের দায়িত্ব দেওয়ার প্রয়োজন কী?

নির্বাচকেরা স্ট্যাটিসটিক্স নয়, হরভজনের বর্তমান বোলিং ফর্ম দেখে ওকে টিমে নিয়েছে। আর সে জন্য আমি সত্যিই খুব খুশি। কিছু দিন আগেও হরভজনের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগটা ছিল যে, ও একটা নেগেটিভ লাইন বেছে নিয়ে বল করছে এবং অপ্রয়োজনীয় রকমের জোরে বল করার চেষ্টা করছে। দুইয়ের যোগফলে ও আগের মতো টার্ন বা বাউন্স কোনওটাই পাচ্ছিল না।

আমি এমনিতে টি-টোয়েন্টি ফর্মের বিচারে কোনও ক্রিকেটারকে টেস্ট দলে নেওয়ার পক্ষপাতী নই। তবে হরভজনের ক্ষেত্রে সেটা করা ভুল হয়নি। টি-টোয়েন্টিতে ও ইদানীং যে ভাবে বল করেছে তা থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল, বোলিং নিয়ে নিজের মানসিকতায় পরিবর্তন আমদানি করেছে ও। ফ্লাইট করিয়ে মার খেতে ভয় পাচ্ছে না। গতিও কমিয়েছে, ফলে টার্ন পাচ্ছে বেশি। আর অফ স্টাম্পের ঠিক বাইরে বলটা রেখে ব্যাটসম্যানকে আক্রমণ করছে। টি-টোয়েন্টিতেই যেখানে এতটা আক্রমণাত্মক বোলিং করছে, টেস্টে তো ভাল করবেই। সবচেয়ে বড় কথা যে লোকটার সংগ্রহে চারশোর বেশি টেস্ট উইকেট রয়েছে, তার নতুন করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের বা জাত চেনানোর কোনও দরকারই নেই।

তবে হ্যাঁ, টিমের বাকিদের মতোই মাঠে নেমে ওকে নিজের ফর্মের প্রমাণ দিতে হবে। যাতে নির্বাচকদের বোঝাতে পারে যে, ওর প্রতি আস্থা দেখিয়ে তাঁরা কোনও ভুল করেননি। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি হরভজনকে দলে ফেরানোটা দারুণ ভাল সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে আগামী এক বছরে ভারত যেখানে বেশির ভাগটাই ঘরের মাঠে, ঘূর্ণি পিচে খেলবে। প্রজ্ঞান ওঝার অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর থেকে ও এখনও নিজের পুরনো ছন্দটাই ফিরে পায়নি। সব মিলিয়ে ওঝাকে দেখে আর আগের সেই উইকেট টেকার মনে হচ্ছে না। এই অবস্থায় আমাদের এমন আর এক জন স্পিনার চাই যে উইকেট নেবে। আর হরভজন এই মুহূর্তে যে ফর্মে বোলিং করছে, তাতে এই কাজটার জন্য ওর চেয়ে সেরা লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। দশ বছর আগের ‘টার্বুনেটর’-এর তুলনায় আজকের হরভজন যদি পঁচাত্তর শতাংশও হয়, তা হলেও বিশ্বাস করুন, প্রতিপক্ষকে নাকাল করে কালঘাম ছুটিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

হরভজনকে নিয়ে আর একটা বড় সমালোচনা হল, অনিল কুম্বলের অবসরের পর ও ভারতীয় বোলিংকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ। সত্যি বলতে কি, তার পর থেকে হরভজন নিজেও এমন কোনও পারফরম্যান্স করে দেখায়নি যাতে এই সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করা যায়। অবশ্য উল্টো দিকে অনিলের না থাকাটাও এর পিছনে একটা কারণ। একটা ব্যাপার আমার বরাবরই মনে হয়েছে এবং টিমের সদস্য হিসাবে সেটা খুব কাছ থেকেও দেখেছি যে, কী ভাবে অনিল আর হরভজন একে অপরকে তাতাত। উল্টো দিকে অনিল থাকলে হরভজন বল করাটা বেশি উপভোগ করত কারণ দু’জনের মধ্যে একটা খুব সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। এক জন সর্বক্ষণ অন্য জনের চেয়ে বেশি ভাল বোলিং করার চেষ্টায় থাকত। এতে ওরা দু’জনে তো বটেই, টিমও লাভবান হত।

আমার মনে হয় অনিল সরে যাওয়ার পর মাঝে কিছু বছর উল্টো দিকে এমন তাতিয়ে তোলার লোকের অভাবেই হরভজনকে সে ভাবে জ্বলে উঠতে দেখা যায়নি। কিন্তু এই সিরিজে অশ্বিনের মতো এক জনকে ও পেয়েছে টক্কর দেওয়ার জন্য। আর তাতেই দেখুন, দুই স্পিনারের সেই বন্ধুত্ব, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর বোঝাপড়াটা আবার দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

অবশ্য ক্যাপ্টেনের ভূমিকাও এখানে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাপ্টেন তার স্পিনারদের কী ভাবে ব্যবহার করছে, তার উপর কিন্তু অনেক কিছুই নির্ভর করে। আমি মনে করি এক জন স্পিনার ঠিক ততটাই কার্যকর যতটা আস্থা দেখিয়ে ক্যাপ্টেন তাকে কাজে লাগায়।

ভারতের জার্সিতে মাঠে নামার চাপটা এক জন প্লেয়ারের উপর ঠিক কতটা তীব্র থাকে, সেটা হরভজনকে দেখে বোঝা গেল। ওর মতো পোড় খাওয়া সিনিয়রকেও প্রত্যাবর্তনের টেস্ট ম্যাচে শুরুর দিকে দেখে বল হাতে বেশ নার্ভাসই মনে হচ্ছিল! তবে খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ম্যাচে জাঁকিয়ে বসল। সবচেয়ে বড় কথা, প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে প্রথমেই মোমিনুল হকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলল।

অশ্বিন-হরভজন প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা এর মধ্যেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এটাকে বিরাট কোহলি যদি ঠিকটাক ব্যবহার করতে পারে, তা হলে আখেরে টিমেরই ফায়দা। সামনের দিনগুলোয় এই নতুন স্পিন জুটির কাছে আরও প্রত্যাশা রইল!

অন্য বিষয়গুলি:

bd deep dasgupta india bangladesh rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy