Advertisement
১০ জানুয়ারি ২০২৫
World Chess Championship

গুকেশ-লিরেনের আরও এক ম্যাচ ড্র! জিততে কি ভুলেই গিয়েছেন দাবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন

দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আরও একটি ম্যাচ ড্র হল। সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলেও ভারতের ডি গুকেশের বিরুদ্ধে জিততে পারলেন না চিনের ডিং লিরেন। জিততে কি ভুলেই গিয়েছেন দাবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন?

sports

ডিং লিরেনের বিরুদ্ধে চাল দিচ্ছেন ডি গুকেশ। শনিবার, দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৯
Share: Save:

দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আরও একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। এই নিয়ে টানা সাতটি ম্যাচ ড্র করলেন ভারতের ডি গুকেশ ও চিনের ডিং লিরেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে ম্যাড়মেড়ে ম্যাচ খেললেন দুই প্রতিযোগী। মাত্র ৩৬ চালের পরেই ড্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। লিরেনের খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছে, ক্লাসিক্যাল দাবায় জেতার চেষ্টা করছেন না তিনি। প্রতিযোগিতা টাইব্রেকারে নিয়ে যেতে চাইছেন তিনি। কিন্তু কেন এমনটা করতে চাইছেন লিরেন। জিততে কি ভুলেই গিয়েছেন দাবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন?

দাবায় পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেন নিজের চ্যাম্পিয়নশিপ ছেড়ে দেওয়ার পর লড়াই হয়েছিল লিরেন ও রাশিয়ার ইয়ান নেপমনিয়াচির মধ্যে। সেই সময় নিজের সেরা ফর্মে ছিলেন লিরেন। ক্যান্ডিডেটসে দুর্দান্ত খেলেন। ফলে ফাইনালে সুযোগ পান। সেখানে হারান রাশিয়ার গ্র্যান্ডমাস্টারকে। চিনের প্রথম দাবাড়ু হিসাবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হন তিনি। কিন্তু তার পরেই কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলেন লিরেন।

২০২৩ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার সময় লিরেনের র‌্যাঙ্কিং ছিল ২। গত মাসে তিনি যখন গুকেশের বিরুদ্ধে খেলতে নামছেন তখন তাঁর র‌্যাঙ্কিং ২৩। মাঝের ৩০৪ দিনে এতটাই পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। এই ৩০৪ দিন একটিও ক্লাসিক্যাল ম্যাচ জিততে পারেননি লিরেন। হেরেছেন ২৮টি ম্যাচ। এমন এমন দাবাড়ুর কাছে তিনি হেরেছেন যাঁরা ক্রমতালিকায় তাঁর থেকে অনেক পিছনে।

লিরেনের খেলা দেখে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন কার্লসেনও। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, বিশ্বের ৫ নম্বর গুকেশের বিরুদ্ধে নিজের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখার মতো মানসিক পরিস্থিতিতে লিরেন রয়েছেন কি না। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হওয়ার আগে লিরেনও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি বলেছিলেন, “আমি হারার ভয় পাচ্ছি। আশা করছি এ বার আর হারব না।”

লিরেনের এই পিছিয়ে পড়ার কারণ ছিল মানসিক ক্লান্তি। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে নামার আগে এক জন দাবাড়ুকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। প্রতিটি ম্যাচের জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়। প্রতিপক্ষের চাল দেখে সেই অনুযায়ী নিজের চাল তৈরি করতে হয়। আর এ সবই হয় সুপার কম্পিউটরের সঙ্গে খেলে। লিরেন নিজেও জানিয়েছিলেন, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আর খেলার মানসিকতায় নেই তিনি। চিনের দাবাড়ু বলেছিলেন, “আমার আর খেলতে ভাল লাগছে না। আগের মতো আর ইচ্ছা হচ্ছে না। কয়েক দিন বিশ্রাম নিতে চাই।” সেই কয়েক দিন গিয়ে পৌঁছয় সাত মাসে। তার পরেও যখন লিরেন খেলতে নামেন, তখন একের পর এক ম্যাচ হারছিলেন।

লিরেনের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁর পক্ষে গুকেশের মোকাবিলা করা কঠিন। কিন্তু বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচেই চমক দেন লিরেন। ফ্রেঞ্চ ডিফেন্সে খেলা শুরু করেন তিনি। কালো ঘুঁটি নিয়ে তিনি এই লড়াইয়ে জিতবেন তা আশা করেননি ধারাভাষ্যকারেরাও। কিন্তু লিরেন তা করে দেখান। ৩০৪ দিন পর আবার ক্লাসিক্যাল দাবায় জেতেন তিনি। প্রথম ম্যাচ জেতার পর অবশ্য লিরেনের মধ্যে সেই জেতার চেষ্টা আর দেখা যায়নি। বেশির ভাগ ম্যাচেই গুকেশ ঝুঁকি নিচ্ছেন। জেতার চেষ্টা করছেন, কিন্তু লিরেন রক্ষণাত্মক খেলছেন। একটি ম্যাচে তো ৩০ চালের মধ্যেই গুকেশকে ড্রয়ের প্রস্তাব দেন লিরেন।

শনিবার দশম রাউন্ডের ম্যাচেও সেই ছবি দেখা গিয়েছে। সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলা শুরু করেন লিরেন। ফলে তাঁর সুবিধা বেশি ছিল। লন্ডন সিস্টেমে কুইন্স পন গেমে খেলা শুরু করেন তিনি। প্রথম চাল দেওয়ার আগে দেখা যায়, কপালে হাত দিয়ে কিছু ভাবছেন লিরেন। হয়তো প্রথম চাল কী দেবেন, সেটাই ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। ধারাভাষ্যকারদের হাসাহাসি করতেও দেখা যায়। প্রথম ২০ চালে দুই প্রতিযোগী বেশি সময় নেননি।

২১তম চালে প্রায় ২২ মিনিট সময় নেন গুকেশ। মনে হচ্ছিল তিনি পিছিয়ে পড়বেন। কিন্তু পরের চাল দেওয়ার জন্য ২৫ মিনিট সময় নেন লিরেনও। সেই সময় বোর্ড থেকে উঠে নিজের ঘরে সময় কাটাতে দেখা যায় গুকেশকে। খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছিল, জেতার চেষ্টা দু’জনের কারও নেই। খেলা ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছিল। ৩০ চালের পরও দুই প্রতিযোগীর ঘড়িতে ১ ঘণ্টা করে সময় বাকি ছিল, যা আগের ন’টি ম্যাচে দেখা যায়নি।

শেষ পর্যন্ত ৩৬ চালের পর দুই প্রতিযোগী ড্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ৪০ চাল পর্যন্তও খেলতে চাননি তাঁরা। সাদা ঘুঁটি নিয়ে লিরেন যে এতটা রক্ষণাত্মক খেলবেন তা ভাবতে পারছেন না বিশেষজ্ঞেরা। তাঁর খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছে, এখনও আত্মবিশ্বাস পাননি লিরেন। ২০২৩ সালে নেপমনিয়াচির বিরুদ্ধে যে লিরেনকে দেখা যাচ্ছিল, তার ধারেকাছেও এ বার নেই তিনি। অবশ্য সেটা লিরেনের পরিকল্পনাও হতে পারে। তিনি হয়তো ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। খেলা টাইব্রেকারে নিয়ে যেতে চাইছেন। কারণ, তাঁর অভিজ্ঞতা গুকেশের থেকে বেশি। ফলে টাইব্রেকার বাজিমাত করার সুযোগ রয়েছে তাঁর। গত বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে কেঁদেছিলেন লিরেন। এ বার হাসতে চান তিনি। কিন্তু যে ভাবে তিনি খেলছেন তাতে নিশ্চিত নয় যে তিনিই শেষ হাসি হাসবেন। গুকেশও কিন্তু চমক দিতে পারেন লিরেনকে। যদি তেমনটা হয় তা হলে ‘ওয়ান টাইম ওয়ান্ডার’ হয়েই না থেকে যেতে হয় চিনের লিরেনকে।

অন্য বিষয়গুলি:

World Chess Championship D Gukesh Ding Liren
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy