Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘ঐতিহাসিক ভুল’ আর নজিরবিহীন বার্তা ছিটকে দিল ইস্টবেঙ্গলকে

আর্মান্দো কোলাসোর দুর্দশার কথা শুনে অস্ট্রেলিয়ায় বসে নিশ্চয়ই পুরনো স্মৃতি মনে পড়ছে ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের। প্রাক্তন যদি দু’একদিনের মধ্যে ‘বন্ধু তোমারও একই দশা হল’-র মতো কোনও এসএমএস পাঠান বর্তমান লাল-হলুদ কোচকে, তা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু—ব্রিটিশ এবং গোয়ান, দুই ইস্টবেঙ্গল কোচকেই যে পথে বসিয়ে ছেড়েছেন! ‘ঐতিহাসিক ভুল’ করে! শেষ দু’বছর মর্গ্যানের আই লিগ জয়ের স্বপ্নের সলিল সমাধি হয়েছিল মোহালির এই একগুঁয়ে স্বভাবের বেপরোয়া কিপারের জন্য।

হতাশা দুই শিবিরেই। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার।

হতাশা দুই শিবিরেই। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৪ ০৭:৫৬
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল: ১ (মোগা)

মোহনবাগান: ১ (সাবিথ)

আর্মান্দো কোলাসোর দুর্দশার কথা শুনে অস্ট্রেলিয়ায় বসে নিশ্চয়ই পুরনো স্মৃতি মনে পড়ছে ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের। প্রাক্তন যদি দু’একদিনের মধ্যে ‘বন্ধু তোমারও একই দশা হল’-র মতো কোনও এসএমএস পাঠান বর্তমান লাল-হলুদ কোচকে, তা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু—ব্রিটিশ এবং গোয়ান, দুই ইস্টবেঙ্গল কোচকেই যে পথে বসিয়ে ছেড়েছেন! ‘ঐতিহাসিক ভুল’ করে!

শেষ দু’বছর মর্গ্যানের আই লিগ জয়ের স্বপ্নের সলিল সমাধি হয়েছিল মোহালির এই একগুঁয়ে স্বভাবের বেপরোয়া কিপারের জন্য। দু’বারই ইউনাইটেড স্পোর্টসের কাছে এমন দুটো গোল হজম করেছিলেন গুরপ্রীত, যা ছিল ক্ষমার অযোগ্য। একবার গোল করতে উঠে গিয়ে ডুবিয়েছিলেন দলকে। অন্য বার দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে কার্লোস হার্নান্ডেজের নিরীহ শট গলিয়ে দিয়েছিলেন। মর্গ্যান হা-হুতাশ করেছিলেন তখন, “আর হল না। খেতাব হাতছাড়া হয়ে গেল।” শনিবারের ম্যাচের পর আর্মান্দোর সব হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে “আর হবে না, আর হবে না, অসম্ভব হয়ে গেল খেতাবের দৌড়ে থাকা’ বলা মুখটা হুবহু যেন মর্গ্যানের ফটো কপি।

কিপারের জায়গাটা অনেকটা ‘ডু অর ডাই’-এর মতো। হয় বাঁচো, নয় মরো। গোল বাঁচালে হিরো হও, না পারলে জিরো। মুহূর্তের ভুল সিদ্ধান্ত কত গোলকিপারকেই যে অন্ধকারের গর্ভে নিক্ষেপ করেছে তার ইয়ত্তা নেই। বিশ্বের এমন কোনও কিপার নেই যিনি কোনও না কোনও ম্যাচে বিশ্রী গোল খাননি। কিন্তু একই ভুল যদি কোনও কিপার বারবার করেন তাঁকে কী করা উচিত? ম্যাচের পর ইস্টবেঙ্গল কোচ স্বাভাবিক ভাবেই গুরপ্রীতের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বলেও দিয়েছেন, “ওকে কোনও জরিমানা করব না। আমার হাতে আরও গোলকিপার আছে। সমস্যা নেই।” কিন্তু সবার শেষে স্টেডিয়াম ছেড়ে গুরপ্রীত বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে গো ব্যাক শুনতেই হল। দাবি উঠল শাস্তিরও।

লিগ খেতাবের দৌড়ে থাকা দলগুলো পয়েন্ট নষ্ট করতে শুরু করেছে। কলকাতায় এসে শুক্রবার হেরেছে তিন নম্বরে থাকা স্পোর্টিং ক্লুব। শিলংয়ে গিয়ে লিগের লাস্ট বয় রাংদাজিদের কাছে এ দিন হারল শীর্ষে থাকা বেঙ্গালুরু। দু’নম্বরে থাকা পুণে এফসি-ও দু’পয়েন্ট হারিয়ে ফেলল মুম্বই এফসি-র কাছে। সাপ-লুডোর মতো ওলটপালট হতে শুরু করেছে লিগ টেবল। খেতাবের দৌড়ে ফেরার এমন ‘বসন্তদিন’ আর কী হতে পারত? কিন্তু সেই সুযোগটা নিতে পারল না আর্মান্দো ব্রিগেড। গুরপ্রীতের বুক থেকে ছিটকে আসা একটা বল শেষ পর্যন্ত ঘোর অমাবস্যা নামাল ইস্টবেঙ্গলে। ভাগ্যিস ঘরের মাঠের কলকাতা লিগটা এসেছিল। না হলে তো, গঙ্গাপারের ক্লাবের মতো ‘ট্রফিহীন’ বিশেষণটা এ বার বরাদ্দ হত আর্মান্দোর টিমের জন্য।

ম্যাচের আগে কোচকে নজিরবিহীন বার্তা পাঠিয়ে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন এডে চিডি। পেশাদারিত্বের যুগেও এ রকম ‘অপরাধ’ হয়! শুক্রবার সুস্থ। রাতে গোল করার অঙ্গীকার। পরের দিন শনিবার অসুস্থ। তা-ও ডার্বি ম্যাচের দিন সকালে। উগা ওপারা হঠাৎ কোচকে না জানিয়ে দেশে চলে যাচ্ছেন। চিডি বাড়িতে বসে জানাচ্ছেন, ‘খেলব না।’ গুরুত্ব দিচ্ছেন না কোচের কাতর অনুরোধও। এত দিন যা ছিল গর্ব, সেই শৃঙ্খলার ব্যাপারটা কি উঠে গেল ইস্টবেঙ্গল থেকে? ডার্বি ম্যাচের আগে পাশাপাশি বসে দু’দলের কর্তা-কোচ-ফুটবলারদের সাংবাদিক সম্মেলন চলছে নিয়ম করে। বাগানের হাওয়া কি লেগে গেল লাল-হলুদেও? ওকোলি ওডাফা যদি শুধু ‘প্রেজেন্ট প্লিজ’ দিয়ে দু’কোটি টাকা নিয়ে যান, তা হলে উগা-চিডিদের আর দোষ কী?

চিডি হঠাৎ টিম থেকে সরে দাঁড়ানোয় স্ট্র্যাটেজিটাই বদলে ফেলতে হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল কোচকে। মোগার সঙ্গে সুয়োকাকে জুড়তে গিয়ে মাঝমাঠের ছন্দটাই হারিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল থেকে। পাঁচ বারের আই লিগ জয়ী কোচের টিম খেলল ছন্নছাড়া, উদভ্রান্ত ফুটবল। চার ডিফেন্ডার ছাড়া কে কোথায় খেলছেন কেউ জানেন না! মেহতাবের ঘাড়ে উঠে পড়ছেন কেভিন লোবো। উইং থেকে তুলুঙ্গা দৌড়তে দৌড়তে ঢুকে পড়ছেন সেন্টার সার্কেলে। আরে, এরকম তো পাড়ার ফুটবলে হয়! যেখানে বল, সেখানে সবাই। কিন্তু মোগা-রাজুদের হতশ্রী ফুটবলের সুযোগটা নিতে পারলেন না সাবিথ-ক্রিস্টোফাররা। দু’জনেই গোটা তিনেক সহজতম গোলের সুযোগ নষ্ট করলেন। দলকে ডোবানোর আগে কাতসুমির একটা শট রুখলেন গুরপ্রীতও। লিখতে দ্বিধা নেই— বল পজেশন থেকে উইং প্লে, পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে গোলের সুযোগ, সব বিভাগেই আর্মান্দোকে টেক্কা দিয়ে গিয়েছে করিমের টিম।

আর্মান্দো বনাম করিমের লড়াইটা ভাবা গিয়েছিল পরিকল্পনার বারুদে ঠাসা হবে। কিন্তু তা হল না। দু’জনেই জেতার ইচ্ছে সিন্দুকে বন্দি করে ঘর বাঁচানোর খেলায় ব্যস্ত থাকলেন। তবে কাতসুমিকে একটা নতুন জায়গায় ব্যবহার করলেন করিম। ফুলঝুরির মতো বেপরোয়া কখনও কোণাকুনি, কখনও উইং ধরে দৌড়ে অর্ণব-রাজুদের বিভ্রান্ত করলেন জাপানি মিডিও। একটা সময় কাতসুমির দাপটেই আট জন মিলে রক্ষণ সামলাতে হল ইস্টবেঙ্গলকে। মোগাকে অকেজো করে রেখেছিলেন ইচে। দক্ষিণ সুদানের ছেলেটি হাঁফিয়েও উঠেছিলেন। কিন্তু গোলটা মোগা করে গেলেন আইবরের ভুলে। জোয়াকিমের ক্রস যখন মোগার মাথায় এল তখন তাঁর আশেপাশে কেউ নেই। যাঁর তাকে ধরার কথা ছিল সেই লেফটব্যাক আইবর ‘বিশ্রাম’ নিচ্ছেন ছায়ায়। বিরতিতে ১-০, দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি ফল ১-১। গুরপ্রীতের পেট-বুকে লেগে ছিটকে বেরোনো বলটা থেকে সাবিথের গোল।

আই লিগ ইস্টবেঙ্গলের হাতছাড়া, অবনমনের আতঙ্কে মোহনবাগান। আর্মান্দো আটে। করিম নয়ে। ডার্বিও শাপমোচন ঘটাতে পারল না। ভরা বসন্তেও যেন ঐতিহ্যের দুই ক্লাবের আকাশে গুমোট কালো মেঘ। কান্না আর কান্না। হতাশা আর হা-হুতাশ।

ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, খাবরা, রাজু, অর্ণব, সৌমিক, তুলুঙ্গা, লোবো (ডিকা), মেহতাব, জোয়াকিম, সুয়োকা, মোগা।

মোহনবাগান: শিল্টন, প্রীতম (শৌভিক), ইচে, কিংশুক (রোইলসন), আইবর, রাম (মণীশ), কাতসুমি, ডেনসন, পঙ্কজ, সাবিথ, ক্রিস্টোফার।

১) বেঙ্গালুরু এফসি ম্যাচ ১৭, জয় ৯, ড্র ৪, হার ৪, পয়েন্ট ৩১

২) পুণে এফসি ম্যাচ ১৭, জয় ৮, ড্র ৫, হার ৪, পয়েন্ট ২৯

৩) স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া ম্যাচ ১৬, জয় ৮, ড্র ৪, হার ৪, পয়েন্ট ২৮

৮) ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ ১৪, জয় ৫, ড্র ৫, হার ৪, পয়েন্ট ২০

৯) মোহনবাগান ম্যাচ ১৮, জয় ৪, ড্র ৮, হার ৬, পয়েন্ট ২০

হার সুনীলদের

দিনের পর দিন ইউনাইটেড স্পোর্টসে খেলে যা করে দেখাতে পারেননি, সেটা রাংদাজিদের হয়ে প্রথম ম্যাচেই করে দেখালেন র্যান্টি মার্টিন্স। নাইজিরিয়ান গোলমেশিনের সৌজন্যে বেঙ্গালুরু এফসি ২-৩ হারল রাংদাজিদের কাছে। স্টিভন ডায়াসের গোলে শুরুতেই এগিয়ে যায় পাহাড়ের দলটি। বিরতির আগে ২-০ লালনুনপুইয়ার গোলে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে বেঙ্গালুরু ২-২ করে ফেলে সুনীল ছেত্রী ও রুনির গোলে। ম্যাচ শেষ হওয়ার পনেরো মিনিট আগে র্যান্টি তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করেন।

অন্য বিষয়গুলি:

derby match
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy