Advertisement
E-Paper

নিজের বিয়ে আটকে নাবালিকাদের পাশে সাইনুর

উত্তর ২৪ পরগনার উত্তর গোবিন্দহাটি গ্রামে বাড়ি সাইনুরের। মেধাবী এই ছাত্রী টিউশন ছাড়াই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক থেকে স্নাতক, সব স্তরেই ভাল ফল করেছিলেন।

সাইনুর তরফদার। নিজস্ব চিত্র

সাইনুর তরফদার। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৯ ০৬:০০
Share
Save

বিয়ে করতে না চেয়ে তিনি ঘর ছেড়েছিলেন। নাবালিকা বিয়ের খবর পেলে এখনও ছুটে যান তিনি। ব্যবস্থা করেন বিয়ে আটকানোর। শুধু নাবালিকা বিয়ে রোখাই নয়, স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে অসুস্থ শিশুদের তুলে এনে পরিচর্যা থেকে হোমে ঠাঁই পাওয়া মেয়েদের হাতের কাজ শেখানো— সব ব্যাপারেই অক্লান্ত সাইনুর তরফদার।

উত্তর ২৪ পরগনার উত্তর গোবিন্দহাটি গ্রামে বাড়ি সাইনুরের। মেধাবী এই ছাত্রী টিউশন ছাড়াই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক থেকে স্নাতক, সব স্তরেই ভাল ফল করেছিলেন। দরিদ্র পরিবার থেকে যখন বড় কিছু করার স্বপ্নে তিনি মশগুল, সেই সময়েই তাঁর বিয়ে ঠিক করেন পরিজনেরা। কিন্তু বেঁকে বসেন তিনি। জানিয়ে দেন, স্নাতকোত্তরের পরে সাহিত্যে গবেষণা করাই তাঁর পরিকল্পনা। কিন্তু পরিবারের সদস্যেরাও নাছোড়। সাইনুর জানান, এই সঙ্কট থেকে রেহাই পেতে শেষে তিনি দুর্গাপুরের বান্ধবী অমিতা মুখোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হন। তাঁর কথায়, ‘‘এক দিন সকালে কাউকে কিছু না বলে সোজা অমিতার বাড়িতে চলে আসি। সব শোনার পরে ওঁরা কয়েকদিন আমাকে আশ্রয় দিলেন। তার পরে আসানসোলের এই হোমের ঠিকানা পেয়ে এখানে এসে উঠি।’’

সেটা ২০১৩ সাল। সাইনুর জানান, হোমে ঠাঁই পাওয়াও সহজ ছিল না। হোমের কর্ণধার সাহারা মণ্ডল তাঁকে জানান, তাঁর এলাকার বিধায়কের শংসাপত্র লাগবে। এলাকায় ফিরে স্থানীয় বিধায়কের কাছে গিয়ে সব খুলে বলার পরে শংসাপত্র লিখে দেন তিনি। আসানসোলে পৌঁছনোর ব্যবস্থাও করে দেন। সেই শুরু হল নতুন করে পথ চলা। হোমের দুই কর্ণধার সাহারা ও সেরিনা মণ্ডলের সহায়তায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকোত্তর পাশ করেন। সেই সঙ্গে হোমে আশ্রয় নেওয়া মেয়েদের পড়াশোনা ও হাতের কাজ শেখানোও শুরু করেন।

এখন সাইনুর পশ্চিম বর্ধমান জেলা চাইল্ডলাইনে কর্মরত। রাতবিরেতে পুলিশের কাছে খবর পেয়ে বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন বা ফুটপাথ থেকে অনাথ শিশুদের তুলে নিয়ে পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি রাত ২টো নাগাদ রানিগঞ্জ স্টেশন লাগোয়া এলাকা থেকে অসুস্থ এক নাবালককে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। কয়েক দিন আগে কাঁকসার একটি গ্রামে নাবালিকার বিয়ে আটকাতে ছুটে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, মেয়েটির পরিজন ও পাত্রপক্ষের লোকজনকে বুঝিয়ে বিয়ে রুখেছেন। সাইনুর বলেন, ‘‘আমি নিজে ভুক্তভোগী। তাই এই রকম কোনও খবর পাওয়া মাত্র ছুটে যাই। এই কাজ চালিয়ে যাব।’’

সম্প্রতি হোমের কর্ণধার সাহারার এক আত্মীয়ের সঙ্গে সাইনুরের বিয়ে হয়েছে। সাহারা বলেন, ‘‘সাইনুরের চেয়ে ভাল পাত্রী আর কে হতে পারে!’’ সাইনুরের লড়াইকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন হায়দরাবাদে এক বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত স্বামী আজাহার মণ্ডলও। পশ্চিম বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জনকল্যাণ) কস্তুরী বিশ্বাস বলেন, ‘‘মেয়েটি যে ধরনের কাজ করছে তা অন্যদের কাছে অনুপ্রেরণার বিষয়।’’ জেলা জনকল্যাণ আধিকারিক অসীম রায়ের কথায়, ‘‘সাইনুর যা করছেন, তা আমাদের কাছে গর্বের।’’

Sainur Tarafdar Minor Marriage

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।