জার্মানির ভার্লটে-তে চালু বিশ্বের প্রথম পরিবেশবান্ধব কেরোসিন তৈরির কারখানা। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।
অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম থেকে নয়। কৃত্রিম ভাবে বানানো হবে এই কেরোসিন। যা কোনও ধরনের গ্রিনহাউস গ্যাসেরই নির্গমন ঘটাবে না। আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠবে একশো শতাংশ পরিবেশবান্ধব কেরোসিন।
বাণিজ্যিক ভাবে সেই পরিবেশবান্ধব কেরোসিন উৎপাদনের জন্য বিশ্বের প্রথম কারখানা (প্ল্যান্ট) চালু হল নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে জার্মানির উত্তর-পশ্চিম সীমান্তঘেঁষা শহর ভার্লটে-তে। সোমবার জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রকের তরফে একটি প্রেস বিবৃতিতে এই খবর দেওয়া হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, আগামী দিনে এই কেরোসিনই হয়ে উঠবে বিমান পরিবহণে ব্যবহৃত পরিবেশবান্ধব জ্বালানিগুলির অন্যতম। যার ব্যবহার শুরু হবে বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশে, দেশে।
কেন জরুরি এই কারখানা
প্যারিস জলবায়ু চুক্তির যে খসড়া রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে গত অগস্টে তাতে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার একেবারেই বন্ধ করে দিতে হবে বিশ্বজুড়ে। না হলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নির্গমনের মাত্রা এতটাই বেড়ে যাবে যে ২১০০ সালে পৌঁছনোর আগেই বিশ্বের গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। যা সভ্যতার পক্ষে সমূহ বিপদের কারণ হবে। কারণ উষ্ণায়নের হার অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার জন্য উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বরফের পুরু চাঙরগুলির বেশির ভাগই ভেঙে গলতে শুরু করবে উদ্বেগজনক ভাবে। গলবে বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গের হিমবাহগুলি। তাতে মহাসাগরগুলির জলস্তর অস্বাভাবিক ভাবে উপরে উঠে আসবে। জলের তলায় তলিয়ে যাবে বিশ্বের বহু দেশ।
সেই ভয়াবহ ভবিষ্যতকে রোখার জন্য আর এক দশকের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করতে বলা হয়েছে। বাধ্যতামূলক ভাবে। যাতে আর ৭৯ বছরের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা-বৃদ্ধিকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখা সম্ভব হয়।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সর্বশেষ খসড়া রিপোর্টই জানিয়েছে, উষ্ণায়নের জন্য দায়ী যে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি তার মধ্যে প্রধান গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইড বিশ্বে ফিবছর যে পরিমাণে নির্গত হয় পরিবেশে তার অন্তত আড়াই শতাংশ আসে বিমানের জ্বালানি থেকে।
বিমানের জ্বালানি থেকে প্রচুর বিষ মেশে পরিবেশে
জার্মানির সরকারের দাবি, ভার্লটে-তে চালু হওয়া বিশ্বের প্রথম পরিবেশবান্ধব কেরোসিন উৎপাদনের কারখানা প্রাথমিক ভাবে বিমানের জ্বালানি থেকে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে বড় ভূমিকা নেবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার উত্তরোত্তর যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে ইতিমধ্যেই বিশ্বের নানা প্রান্তে বৈদ্যুতিক গাড়ির চলাচল চালু হয়েছে। আরও হবে। কিন্তু বিশাল ব্যাটারি দিয়ে বিমান ওড়ানোর অনেক সমস্যা রয়েছে। ঝুঁকি রয়েছে আরও বেশি। তাই বিমানে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কী ভাবে কমানো যায় তা নিয়ে উদ্বেগ সর্বত্রই। অথচ, বিমান ও বিমানযাত্রীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে সর্বত্র। আরও বাড়বে আগামী দিনে।
পথ দেখাল ভার্লটে-র কারখানা: জার্মানির পরিবেশমন্ত্রক
সোমবার ভার্লটে-তে বিশ্বের প্রথম পরিবেশবান্ধব কেরোসিন তৈরির কারখানার উদ্বোধন করতে গিয়ে জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রী ভেন্জা শ্যুলজ্ বলেছেন, ‘‘কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর দিন খুব দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। কিন্তু আকাশে ওড়ার নেশা মানুষের বেড়েই চলেছে। পৃথিবীর সর্বত্রই। এই পরিস্থিতিতে বিমানের জন্য বাণিজ্যিক ভাবে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তৈরির প্রয়োজন খুব জরুরি হয়ে উঠেছিল। ভার্লটে-র কারখানা সেই সমস্যা মেটানোর পথ দেখাল।’’
কী ভাবে বানানো হবে পরিবেশবান্ধব কেরোসিন?
জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে চারটি কেন্দ্র রয়েছে ভার্লটে-র কাছেপিঠে, সেখান থেকেই জল ও বিদ্যুৎ নিয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপাদন করা হবে। তার পর সেই হাইড্রোজেনের সঙ্গে বাতাসের কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের বিক্রিয়া ঘটিয়ে বানানো হবে অপরিশোধিত তেল। যা পরিশোধন করে উৎপাদন করা হবে পরিবেশবান্ধব কেরোসিন। বিমানের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি।
কৃত্রিম ভাবে বানানো এই কেরোসিন পোড়ানো হলেও বাতাসে এসে মিশবে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস। কিন্তু সেই গ্যাসই আবার কাজে লাগানো হবে হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে অপরিশোধিত তেল উৎপাদনে। ফলে এই কার্বন ডাই-অক্সাইড আর পরিবেশের পক্ষে বাড়তি বোঝার কারণ হয়ে উঠবে না। পাশাপাশি বাতাস থেকে টেনেও নিতে পারবে বাড়তি কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy