উদ্ধার হওয়া পাখির দেহ। ছবি টুইটার থেকে।
গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বিষয়টি নজরে এসেছিল মার্থা ডেসমন্ডের। নিউ মেক্সিকো স্টেট ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানের এই অধ্যাপিকা দেখছিলেন, মাঝে মধ্যেই আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে মরা পাখি। এক দিন নিজের বাড়ি থেকে মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে ডজনখানেক মৃত পাখি উদ্ধার করেছিলেন মার্থা। কোনওটা ফ্লাইক্যাচার, কোনওটা ওয়ার্বলার বা কোথাও সোয়ালো। রাস্তাজুড়ে মৃত পরিযায়ী পাখির ভিড় দেখে আঁতকে
উঠেছিলেন মার্থা।
আমেরিকার পশ্চিমাংশ জুড়ে তখন সদ্য শুরু হয়েছে বিধ্বংসী দাবানল। কিছু দিনের মধ্যেই মার্থা বুঝতে পারেন, সর্বগ্রাসী সেই আগুনের জন্যই পাখিগুলো এ ভাবে মাঝরাস্তায় মরে পড়ে থাকছে। শুধুমাত্র নিউ মেক্সিকো-ই নয়, টেক্সাস ও তার আশপাশের কিছু প্রদেশ থেকেও একই ভাবে পরিযায়ী পাখিদের মৃত্যুর খবর আসতে শুরু করেছে তত দিনে। দিনে দিনে সংখ্যাটা বাড়তে থাকে।
সম্প্রতি এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই অধ্যাপিকা জানিয়েছেন, এ ভাবে হাজারো পাখির মৃত্যু খুব শীঘ্রই বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে চলেছে। আর এর একমাত্র কারণ হল জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়ন। ‘‘এটা বাস্তুতন্ত্রের জন্য একটা ভয়ঙ্কর বিপর্যয়,’’ বলছেন মার্থা।
আরও পড়ুন: সত্যিই এত বড়, চোখ খুলে গিনেস রেকর্ড
প্রতি বছরই কানাডা আর আলাস্কার প্রবল ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে পরিযায়ী পাখিদের দল পাড়ি দেয় মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তীর্ণ এলাকায়। তবে সেটা আর একটু বেশি শীত পড়লে। এ বছর পরিযায়ীদের এত তাড়াতাড়ি আসার কারণও জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন বলে জানালেন মার্থা। সফরকালে একটানা ওড়ে না এই পাখিরা। কোথাও একটু বিশ্রাম নেয়। খাবার আর জলের জোগান নিয়ে ফের রওনা দেয়। কিন্তু যে সব পাখির মৃতদেহ মিলছে, সেগুলি জল আর খাবার না পেয়ে একেবারে শুকিয়ে যাওয়া পাখি বলে জানিয়েছেন মার্থার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল পড়ুয়া। তাঁদের কথায়, ‘‘ঠিক যেন মনে হচ্ছে আগুন আর ভয়ঙ্কর খরা থেকে বাঁচতে ওরা যতটা পেরেছে উড়েছে। না-পেরে মরে ঝরে পড়েছে।’’
অর্থাৎ দাবানলে যখন দেশের পশ্চিমাংশ দাউদাউ করে জ্বলছে, এই পাখিরা খাবারের জন্য কোথাও দাঁড়াতে পারেনি। উল্টে বিষাক্ত বাতাস তাদের ঠেলে নিয়ে গিয়েছে নিউ মেক্সিকোর রুক্ষ-শুষ্ক প্রান্তরে, যেখানে খরার আধিক্য। শেষমেশ আর না পেরে মাঝরাস্তাতেই মরে যাচ্ছে হাজার-হাজার পরিযায়ী।
নিউ মেক্সিকো ইউনিভার্সিটিরই কিছু ছাত্রছাত্রী এই পাখিগুলির দেহ নিয়ে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছেন। ‘‘উষ্ণায়নের ফল কতটা মারাত্মক হতে চলেছে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ এই পাখিগুলির দেহ,’’ বললেন অ্যালিসন সালাস নামে এক ছাত্রী। তিনি আরও বললেন, ‘‘এখনই যদি আমরা জলবায়ু নিয়ে না ভাবি, এমন অনেক প্রজাতিকে অচিরেই হারিয়ে ফেলব।’’
এ দিকে পশ্চিম আমেরিকায় দাবানলের প্রকোপ তো কমেইনি, উল্টে আগুনের প্রভাবে বিষাক্ত হতে শুরু করেছে ইউরোপের বাতাসও। ক্যালিফর্নিয়া থেকে প্রায় আট হাজার কিলোমিটার দূরে উত্তর ইউরোপের আকাশও গত কাল ঢেকে থাকতে দেখা গিয়েছে কালো ধোঁয়ায়।
আমেরিকায় বর্তমানে ৭৯টি জায়গায় বড় দাবানলের উপস্থিতি রয়েছে। শুধু ক্যালিফর্নিয়াতেই ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে আগুন সংক্রান্ত নানা ঘটনায়। ওরেগনে মৃতের সংখ্যা ১০ ছাড়িয়েছে। গত কাল ওরেগন আর ওয়াশিংটনের কিছু এলাকায় বৃষ্টি সামান্য স্বস্তি দিলেও উত্তর ক্যালিফর্নিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার আগুন চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy