সাইবার যুদ্ধ কেন ভয়ঙ্কর পরমাণু যুদ্ধের চেয়েও? -প্রতীকী ছবি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হানাদারির ঘটনায় ফের প্রমাণ মিলল আগামী দিনে পরমাণু যুদ্ধের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে চলেছে সাইবার যুদ্ধ। আধুনিক বিশ্বে সাইবার যুদ্ধের আশঙ্কা পরমাণু যুদ্ধের চেয়ে বেশি। কারণ, পরমাণ যুদ্ধ ঠেকানোর জন্য নানা রকমের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে আধুনিক বিশ্বের। কিন্তু সাইবার যুদ্ধ যা কিছুটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পদ্ধতি দিয়ে রোখা সম্ভব বলে এতদিন মনে করা হচ্ছিল, তা পুরোপুরি ঠিক নয়। সাইবার যুদ্ধ রোখার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বহু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর তা খুব অল্প সময়ে দূর হবে, এমন আশাও দূর অস্তই।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এমনই জানিয়েছেন নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের গবেষণাপত্রটি সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন সম্মেলনে পেশ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার।
গবেষকরা জানিয়েছেন, পদাতিক সেনা, ট্যাঙ্ক, ক্ষেপণাস্ত্র, বিমানবহর ও নৌবহর ব্যবহারের পাশাপাশি এখন শত্রু দেশের সাইবারস্পেস-কেও তাদের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু করে তুলেছে হানাদাররা। ইউক্রেনে রাশিয়াও সেটাই করেছে। তারা সে দেশের ইন্টারনেটের ব্যবস্থাকে জ্যাম করে দেয়। তার পর স্পেস এক্স-এর স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট ব্যবস্থার সুযোগ যাতে ইউক্রেনের সরকার ও জনগণ নিতে না পারেন, সেই লক্ষ্যে ওই ইন্টারনেট ব্যবস্থাও রুশ সেনার প্রাথমিক ভাবে জ্যাম করে দিতে সমর্থ হয়েছিল বলে স্পেস এক্স-এর কর্ণধার এলন মাস্ক জানিয়েছেন।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এখন হানাদারদের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য থাকে শত্রু দেশে ঢুকে তার যাবতীয় বিদ্যুৎ সংযোগ ও ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেওয়া। তার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় পরিকাঠামো ভেঙে দেওয়া।
এর প্রমাণ মিলেছে ইউক্রেন যুদ্ধে। রুশ সেনারা সে দেশে ঢুকে সরকারি কাজকর্ম, প্রতিরক্ষা ও ব্যাঙ্কের কাজকর্ম ভেস্তে দেওয়ার লক্ষ্যে সাইবার হানা শুরু করে। আমেরিকাও অভিযোগ করেছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রুশ সাইবার হানাদাররা ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন অস্ত্র কেনাবেচার কনট্রাক্টরদের অন্তর্জাল-ঠিকানায়। তাদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেছে। শত্রুপক্ষের অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরির প্রযুক্তি-প্রকৌশলগুলির খবর নিতে। ২০১৫ সালেও অভিযোগ উঠেছিল রুশ গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ-এর সামরিক হ্যাকারদের হানাদারিতে ইউক্রেন জুড়ে চরম বি়দ্যুৎ সঙ্কট দেখা দিয়েছিল।
অন্যতম গবেষক নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর সাইবার সিকিওরিটি-র অধিকর্তা অধ্যাপক সঞ্জয় ঝা বলেছেন, ‘‘এই ডিজিটাল বিশ্বে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে, এমন কম্পিউটার সার্ভারে হানা দিলে গোটা বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থাকেই পঙ্গু করে দেওয়া যায়। তার ফলে কোনও দেশের অর্থনীতিকে প্রায় পঙ্গুই করে দেওয়া যায় পুরোপুরি।’’
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, সাইবার নিরাপত্তার মূলত তিনটি বিষয় থাকে। গোপনীয়তা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সকলে যাতে সেই সুযোগ পায় তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। হ্যাকাররা প্রথমেই টার্গেট করে যাতে সকলে সাইবার নিরাপত্তা রক্ষার সুযোগ না পায়। সাইবার হানাদাররা এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে একই সঙ্গে কোনও কম্পিউটার সার্ভারের ২০, ৫০, ১০০ বা ২০০টি কপি তৈরি করে ফেলতে পারে। তার ফলে লহমায় যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যেতে পারে। লন্ডভন্ড করে দেওয়া সম্ভব কয়েকটি মূহূর্তে। হ্যাকারদের সব সময়েই লক্ষ্য থাকে, কত কম সময়ে এই ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কত বেশি সংখ্যক কম্পিউটার সার্ভারের কপি করে নিয়ে তাদের মধ্যে ঢুকে পড়া যায়। শুধু যে কম্পিউটারেরই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায় হ্যাকাররা তা-ই নয়; যাঁরা সেই কম্পিউটারগুলি ব্যবহার করে তাঁদের পক্ষেও খুব বিপজ্জনক হয়ে ওঠে হ্যাকাররা। ফিশিং-এর মাধ্যমে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের গোপন তথ্যাদি জেনে নিয়েও তাঁদের মুশকিলে ফেলতে পারে হ্যাকাররা। বড় সমস্যা হল, কম্পিউটার প্রোগ্রামের কোন ছিদ্রপথ ধরে হ্যাকাররা ঢুকে পড়েছে সেটা খুব সহজে খুঁজে বার করা সম্ভব হয় না।
গবেষকদের বক্তব্য, এই সব সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করার চেষ্টা বহু দিন ধরেই চালিয়ে যাচ্ছেন কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে চটজলদি এই সমস্যার সুরাহা হবে বলে মনে করছেন না গবেষকবর্গ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy