Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Chandrayaan-3 and Luna-25

রাশিয়ার লুনা-২৫ ভেঙে পড়ল চাঁদে, বুধে অবতরণ করবে ভারতের চন্দ্রযান-৩, সময় ঘোষণা করল ইসরো

চন্দ্রযান-৩ ইসরোর কাছে এক অগ্নিপরীক্ষাই বটে। ইতিমধ্যেই চাঁদের শেষ কক্ষে পৌঁছে গিয়েছে ল্যান্ডার বিক্রম। রাশিয়ার আশাভঙ্গের খবর প্রকাশ্যে আসার কিছু ক্ষণ আগেই সে কথা টুইট করেছিল ইসরো।

—ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৩ ২১:১৬
Share: Save:

চাঁদের অদেখা দক্ষিণ মেরু আর সেখানে পৌঁছনোর জন্য দু’দেশের ‘প্রতিযোগিতা’— রবিবার দুপুরের (ভারতীয় সময়ের হিসাবে) আগে পর্যন্ত এটাই ছিল আলোচনার বিষয়। কিন্তু দুপুরের পর সেই আলোচনা হঠাৎ বদলে গেল। মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে, চন্দ্রাভিযানের ইতিহাসে এ বার একটা 'মাইলফলক' রাখতে চলেছে ভারত। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ভারতের তৃতীয় চন্দ্রযানের ল্যান্ডার অবতরণ করবে চাঁদের অনাবিষ্কৃত এবং রহস্যে ঢাকা দক্ষিণ মেরুতে। ইসরোর বিজ্ঞানীদের এখন একটাই লক্ষ্য, দ্বিতীয় চন্দ্রযানের ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি যেন না-হয়।

কেন গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ মেরু?

চাঁদের এই অদেখা এলাকায় আজ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি আমেরিকা, চিন কিংবা রাশিয়া। অথচ এই সব দেশের হাতে চাঁদে মানুষ পাঠানো, চাঁদের মাটি সংগ্রহ করে ফিরে আসার মত কৃতিত্ব রয়েছে। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অনুমান সত্য হলে চাঁদের এই অদেখা অংশেই জলের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। বাস্তব যা-ই হোক বিজ্ঞানীরা অন্তত তেমনই স্বপ্নে বিভোর। তাঁদের অনুমান মিললে, চাঁদের এই দক্ষিণ মেরুরই বিভিন্ন অংশে মাটির নীচে থাকতে পারে জলীয় বরফ। যা পৃথিবীর বাইরে জলের সন্ধান পাওয়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিক ভাবেই তাই মহাকাশ বিজ্ঞানে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। ফলে বিজ্ঞান উৎসাহী ভারতীয়রা উত্তেজিত। তাঁদের আলোচনার বিষয় একটিই— অচেনা অজানা চাঁদের ওই অংশে কি তবে ইতিহাস তৈরি করবে ভারতই?

কী হয়েছিল রবিবার দুপুরে

চাঁদের পানে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটছিল রাশিয়ার লুনা-২৫। রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস জানিয়েছিল, ১০ দিনের মধ্যেই চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ফেলবে রাশিয়ার চন্দ্রযান। কিন্তু রবিবার দুপুরে দেখা গেল প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ার সেই সাধের চন্দ্রঅভিযান ব্যর্থ। তীরে এসে ডুবেছে তরী। হিসাবের ভুলে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গিয়েছে রাশিয়ার লুনা-২৫। অন্য দিকে, ধীরে হলেও নিজস্ব গতিতে চাঁদের দিকে এগিয়ে চলেছে চন্দ্রযান ৩। এখনও সে টিকে রয়েছে ‘প্রতিযোগিতা’য় । তবে এই প্রতিযোগিতা নিজের সঙ্গে নিজেরই। কারণ নিকটবর্তী প্রতিযোগীক আর অস্তিত্বই নেই এখন।

কেন এই পরিণতি লুনা-২৫-এর?

চাঁদের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল রাশিয়ার লুনা-২৫। আর এক ধাপ পেরোলেই চাঁদের সবচেয়ে কাছের কক্ষপথে পৌঁছে যেত মহাকাশযানটি। কিন্তু তার আগেই বাধে বিপত্তি। শনিবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের আগে শেষ কক্ষপথটিতে পৌঁছনোর কথা ছিল লুনা-২৫-এর। কিন্তু সেটি নির্ধারিত কক্ষপথের থেকে কিছুটা এগিয়ে যায়। অর্থাৎ চাঁদের যে কক্ষপথে এক পাক ঘোরার পর চাঁদে অবতরণের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ছিল তার, সেই কক্ষপথ ছেড়ে কিছুটা এগিয়ে যায় লুনা-২৫। তার পরেই রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমসের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার। দেশের চন্দ্র অভিযাত্রী যানকে আর কোনও ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি রসকসমস। রবিবার দুপুরেই তারা ঘোষণা করে চাঁদের মাটিতে ভেঙে পড়েছে রাশিয়ার চন্দ্র অভিযাত্রী যান। তবে এইটুকুই। এর চেয়ে বেশি আর কিছু খোলসা করেনি তারা।

কতটা ক্ষতি হল রাশিয়ার

প্রায় পাঁচ দশক পরে চাঁদ ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিল রাশিয়া। শেষ বার রাশিয়া চাঁদে লক্ষ্যভেদ করেছিল ১৯৭৬ সালে। লুনা-২৪ চাঁদে নেমে চাঁদের মাটির নমুনা সংগ্রহ করে এনেছিল। কিন্তু সে ছিল সোভিয়েত রাশিয়ার কৃতিত্ব। পুতিনের রাশিয়া চাঁদে যাওয়ার প্রথম চেষ্টা করে এই ২০২৩ সালেই। গত ২০১০ সালে লুনা-২৫-এর প্রস্তুতি শুরু করে রাশিয়া। বড় কৃতিত্ব দখলের জন্য প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখেনি রাশিয়া সরকার। অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। ১৩ বছর ধরে তিলে তিলে তৈরি হয় লুনা-২৫। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। একে যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার অর্থনীতির হাল খারাপ। তার উপর লুনা-২৫ চন্দ্রাভিযানের জন্য এ যাবৎ দেশের কোষাগার থেকে খরচ হয়ছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের রাশিয়ান রুবল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় কৃতিত্ব পেতে বহু বছরে এই প্রথম ক্ষমতার বাইরে গিয়ে এমন একটি প্রকল্পের অনুমতি দিয়েছিল রাশিয়া। তবু অভীষ্ট সাধন হল না।

ইতিহাসের দোরগোড়ায় ভারত

তবে রাশিয়া ব্যর্থ হওয়ায় ভারতের সামনে খুলে গিয়েছে বড় সম্ভাবনা। সব ঠিক থাকলে বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামবে ভারতের চন্দ্রযান ৩। যেহেতু চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এর আগে কোনও দেশের মহাকাশযান সফল অবতরণ করতে পারেনি এবং রবিবার রাশিয়ার লুনা-২৫ এই অভিযানে ব্যর্থ হল, তাই বুধবার চন্দ্রযান-৩ যদি চাঁদের মাটিতে নামতে পারে তবে ভারতই হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ।

দিন ক্ষণ ঘোষণা করল ইসরো

ভবিষ্যৎ কী হবে তা তো ভবিষ্যতেই জানা যাবে। তার আগে চাঁদে অবতরণের দিন ক্ষণ ঘোষণা করে দিয়েছে ইসরো। রবিবার দুপুর ২টো ১২ মিনিটে ইসরোর পক্ষ থেকে টুইট করে জানানো হয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে নামবে ভারতীয় মহাকাশযান। ইসরোর ওয়েবসাইট (isro.gov.in), ফেসবুক (facebook.com/ISRO), ইউটিউবে (youtube.com/watch?v=DLA_64yz8Ss…) চন্দ্রযান ৩-এর অবতরণের সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। মাঝে আর মাত্র দুটো দিন। তার পরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

ভারতের অগ্নিপরীক্ষা

চন্দ্রাভিযানে বুধবার ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর কাছে এক অগ্নিপরীক্ষাই বটে। চাঁদের আরও কাছে পৌঁছে গিয়েছে চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। রবিবার রাশিয়ার আশাভঙ্গের খবর প্রকাশ্যে আসার কিছু ক্ষণ আগেই টুইট করে চন্দ্রযান-৩-এর শেষ কক্ষ পথে পৌঁছনোর ঘোষণা করে সে কথা জানিয়েছে ইসরো। তারা লিখেছে, শনিবার রাত ২টো নাগাদ বিক্রমের শেষ কক্ষপথ পরিবর্তন করানো হয়েছে। ইসরো জানিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়েছে বিক্রম। এই মুহূর্তে বিক্রমের সঙ্গে চাঁদের সবচেয়ে কম দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। সবচেয়ে বেশি দূরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার।

কীসের ভয়?

তবে এর পরেই আসল পরীক্ষা। চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান পালকের মতো অবতরণ করতে পারবে কি না তা নিয়েই শুরু হয়েছে আশা-আশঙ্কা। কারণ বারবার সকলেরই মনে পড়ে যাচ্ছে চন্দ্রযান-২-এর স্মৃতি। গত বার ঠিক এই গাঁটেই আটকে গিয়েছিল ইসরোর চন্দ্র অভিযান। আজ লুনা-২৫-এর সঙ্গে যা হয়েছে, সেই একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল ইসরোর। চার বছর আগে সব ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পরেও চাঁদের মাটি ছোঁয়ার আগের মুহূর্তে ল্যান্ডারের সঙ্গে ইসরোর বিজ্ঞানীদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এই পর্যায়টিকে তাই চাঁদের অভিযানের সবচেয়ে কঠিন পর্যায় বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Chandrayaan-3 Luna-25
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy