(বাঁ দিকে) মহম্মদ হেদায়েতুল্লাহ মীর এবং শামীম খান। —ফাইল চিত্র।
কলাকোষের চক্রব্যূহ পেরিয়ে, সুস্থ কোষগুলিকে ব্যস্ত না করে, শরীরের ভিতরে ক্ষতস্থানে পৌঁছে যাচ্ছে ওষুধ! কিংবা মানুষের স্পর্শ ছাড়াই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সেরে ফেলছে কঠিন অস্ত্রোপচার! কেমন হত, যদি এমন হত। এখনই এমন না হলেও অদূর ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিজ্ঞান এতটাই উন্নত হতে চলেছে। সেই পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ পেরোল একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল, যার নেতৃত্বে রয়েছেন কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের বিজ্ঞানী মহম্মদ হেদায়েতুল্লাহ মীর।
এই গবেষণার দু’টি মূল উপাদান, ক্রিস্টাল ও আলোকরশ্মি। গবেষণাটি হয়েছে জ়িঙ্ক ও ক্যাডমিয়ামের ক্রিস্টাল বা কেলাস নিয়ে। ক্রিস্টাল হল এক ধরনের কঠিন পদার্থ, যার পরমাণুগুলি একটি পুনরাবৃত্তির সজ্জায় সাজানো থাকে। এই বিশেষ সজ্জাকে বলা হয় ক্রিস্টাল সিস্টেম। কোনও খনিজ পদার্থের পরমাণু যদি এ ভাবে সাজানো থাকে, তা হলে খনিজ পদার্থটি ক্রিস্টাল। দ্বিতীয় উপাদান আলোকরশ্মি সম্পর্কে বলা যায়, এটি কোনও অণুকে এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরাতে পারে, বাঁকাতে পারে, জুড়েও দিতে পরে। ১৮৩৪ সালেই একটি গবেষণা মারফত জানা গিয়েছিল, কিছু ক্রিস্টালের ভিতরে আলো-সংবেদী অণু রয়েছে। এদের উপরে যদি সূর্যালোক এসে পড়ে, তা হলে তারা অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ফাটতে শুরু করে, অনেকটা পপকর্নের মতো। বিজ্ঞানীদের ভাবনাচিন্তায় ছিল, যদি কোনও ভাবে এই আলোকরাসায়নিক প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, ক্রিস্টালের লাফিয়ে চলা গতিতে যদি বিনা অঙ্গুলিহেলনে বাগে আনা যায়, সে ক্ষেত্রে আলোর যান্ত্রিক গতিতে রূপান্তরকে চিকিৎসাপ্রযুক্তি হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। এই লক্ষ্য নিয়েই গবেষণাটি শুরু হয়েছিল এবং তাতে সাফল্যও মিলেছে।
আলোয় উদ্দীপিত পদার্থ সূর্যালোককে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করেছে। আণুবীক্ষনিক ক্রিস্টালের আলোক-সংবেদী অণুগুলির বিন্যাসকে ন্যানোস্কেলে নিয়ন্ত্রণ করা ও তার পরে সেটিকে ম্যাক্রোস্কেল যন্ত্রে ভরে নানা ধরনের আধুনিক কর্মকাণ্ড হতে পারে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। এখনও কিছু বাধা রয়েছে। তবে অনেকটা পথই উত্তীর্ণ হয়েছেন মীর ও তাঁর দল। তাঁদের গবেষণাপত্রটি ‘নেচার’ জার্নাল-এর ‘কমিউনিকেশন কেমিস্ট্রি’-তে প্রকাশিত হয়েছে।
মীর জানিয়েছেন, ওষুধ, কৃত্রিম পেশি, মেমরি ডিভাইস তৈরি, ড্রাগ ডেলিভারি (শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া) ও চিকিৎসা প্রযুক্তিতে জ়িঙ্ক ক্রিস্টালের ব্যবহারের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। মীর বলেন, ‘‘সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বা ইউভি রে-কে ‘খারাপ’ ও ‘ক্ষতিকর’ বলা হয়। কিন্তু আমাদের গবেষণা দেখিয়ে দিয়েছে, সূর্যরশ্মিকে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ব্যবহার করে এমন যান্ত্রিক শক্তি তৈরি করা যেতে পারে, যা দৈনন্দিন জীবনে বহু উপকারে লাগবে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বিপর্যয় সামলাতেও এটি দিশা দেখাতে পারে।’’ ক্রিস্টাল নিয়ে গবেষণার জন্য গত বছর ‘আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি’-র জার্নাল ‘ক্রিস্টাল গ্রোথ অ্যান্ড ডিজ়াইন’-এর তরফে ‘ইমার্জিং ইনভেস্টিগেটর অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন মীর।
মীরের গবেষকদলে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের আর এক বিজ্ঞানী শামীম খান। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম বারের মতো, আমরা তত্ত্বগত ভাবে ধাতব যৌগের নিয়ন্ত্রিত বিরল জাম্পিং প্রভাবকে প্রমাণ করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে, ক্রিস্টাল বা কেলাসের এই বিরল চরিত্রকে কাজে লাগিয়ে আমরা মাইক্রো-সোলার প্যানেল তৈরি করতে পারব বা লেজার-নির্দেশিত মাইক্রোমেশিন তৈরি করতে পারব, যা কোনও স্পর্শ ছাড়াই মানুষের শরীরের মধ্য দিয়ে কোনও নির্দিষ্ট স্থানে যেতে পারবে। এটি ভবিষ্যতে শল্যচিকিৎসায় কাজে লাগবে। হৃদ্যন্ত্রে ব্লক থেকে মস্তিষ্কের যে কোনও সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচার করা যাবে অনায়াসে।’’ শামীম জানিয়েছেন, তাঁদের গবেষণায় যুক্ত রয়েছেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসুদেব দত্ত (বর্তমানে জাপানে গবেষণারত) এবং সানোবর নাজ। এ ছাড়াও রয়েছেন আইআইটি ভিলাইয়ের বিজ্ঞানী মেডি শেট্টি এবং আয়ারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব লিমেরিক-এর বিজ্ঞানী সারা গুরিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy