জেমস পিব্লস, মাইকেল মেয়া ও ডিডিয়ে কেলজ়।
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল এ বার সৃষ্টিরহস্যের তত্ত্ব ও সৌরজগতের বাইরের গ্রহ আবিষ্কারের জন্য। পেলেন তিন জন। কানাডিয়ান-আমেরিকান কসমোলজিস্ট তথা সৃষ্টিতত্ত্ব বিজ্ঞানী জেমস পিব্লস এবং দুই সুইস জ্যোতির্বিজ্ঞানী, মাইকেল মেয়া ও ডিডিয়ে কেলজ়।
‘বিগ ব্যাং’ তথা মহাবিস্ফোরণের পরে কী ভাবে এই বিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে, তা বুঝতে বিশেষ সাহায্য করেছে পিব্লসের আবিষ্কৃত তত্ত্ব। তিনি পাবেন নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্যের অর্ধেক। বাকি অর্ধেক ভাগ করে নেবেন মেয়া ও কেলজ়, ১৯৯৫ সালে প্রথম এক্সোপ্ল্যানেটের সন্ধান দেওয়ার জন্য। সৌর জগতের বাইরে অন্য কোনও তারাকে ঘিরে পাক খায় যে সব গ্রহ, তাদের বলা হয় এক্সোপ্ল্যানেট। এগুলিকে সাধারণ ভাবে দেখা শক্ত। যে তারাকে ঘিরে এরা ঘোরে, তার উজ্জ্বলতার কারণে।
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করতে গিয়ে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের মহাসচিব অধ্যাপক গোরান হানসন আজ বলেন, ‘‘বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণাটাই চিরতরে বদলে দিয়েছেন এই তিন জন।’’ অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের তত্ত্বের ভিতে দাঁড়িয়ে পিব্লস অঙ্ক কষে দেখিয়েছেন, বিগ ব্যাং-এর পরে যে বিকিরণ ছড়িয়ে পড়েছিল, তার তাপমাত্রা ও পদার্থের পরিমাণের মধ্যে সম্পর্কটি কেমন। পিব্লসের তত্ত্ব থেকেই আমরা জানতে পেরেছি, আমাদের এই মহাবিশ্বে বস্তুর পরিমাণ সামান্যই। মাত্র ৫ শতাংশ। বাকি ৯৫ ভাগই ‘ডার্ক ম্যাটার’ ও ‘ডার্ক এনার্জি’। নোবেলপ্রাপ্তির পরে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ‘অ্যালবার্ট আইনস্টাইন প্রফেসর’ পিব্লস বলেছেন, ‘‘তত্ত্বটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। তবে আমাদের স্বীকার করতে হচ্ছে, এই আঁধার বস্তু বা আঁধার শক্তি আসলে কী ও কেমন, তা এখনও রহস্যে মোড়া।’’ পুরস্কৃত হওয়াটা ‘মধুর’ বলে মন্তব্য করলেও নবীনদের প্রতি ৮৪ বছর বয়সি এই বিজ্ঞানীর পরামর্শ, ‘‘তোমরা বিজ্ঞানের চর্চায় এসো বিজ্ঞানকে ভালবেসে।’’ তাঁর নোবেল প্রাপ্তিতে উচ্ছ্বসিত ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (পুণে)-এর ডিরেক্টর সোমক রায়চৌধুরী। পিব্লসকে ‘সৃষ্টিতত্ত্ব বিজ্ঞানের ঠাকুর্দা’ আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, ‘‘পদার্থবিজ্ঞানে ২০১৯-এর নোবেল বিজয়াদশমীর উপহার।’’ পিব্লসে সঙ্গে বেশ কয়েক বার যোগাযোগ হয়েছে তাঁর। তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে অনুজের সঙ্গে দীর্ঘ বিতর্কে পিব্লস কতটা অক্লান্ত, তা-ও উল্লেখ করেছেন তিনি।
৭৭ বছর বয়সি মেয়া ও ৫৩ বছর বয়সি কেলজ়, দু’জনেই জেনিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। কেলজ় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও যুক্ত। দক্ষিণ ফ্রান্সে এক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে নিজেদের মতো করে গড়েপিটে নেওয়া যন্ত্রের সাহায্যে আকাশে নজর রাখতেন তাঁরা। ১৯৯৫-এ অক্টোবরের এক রাতে দেখতে পান, সূর্য থেকে প্রায় ৫০ আলোকবর্ষ দূরে একটি তারাকে ঘিরে পাক খাচ্ছে গ্যাসের বলের মতো বস্তু। আয়তনে বৃহস্পতি গ্রহের মতো। পদার্থবিজ্ঞানের ‘ডপলার এফেক্ট’-এ তরঙ্গের কম্পাঙ্ক বা আলোর রং বদল থেকে বোঝা যায় এর উৎস কাছে আসছে বা দূরে যাচ্ছে। সেই ‘ডপলার এফেক্ট’-কে কাজে লাগিয়ে মেয়া ও কেলজ় দেখেন, গ্যাসপিণ্ডটি একটি তারাকে পরিক্রমা করছে। সৌর জগতের বাইরে সেই প্রথম গ্রহের সন্ধান মিলল। নাম রাখা হল ‘ফিফটি ওয়ান প্যাগেসাস বি’। নোবেল জুরিদের মতে, ‘‘এটা ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী ঘটনা।’’ এর পর থেকে আমাদের ছায়াপথে এ পর্যন্ত ৪১১৮টি এক্সোপ্ল্যানেটের সন্ধান মিলেছে। সবচেয়ে কাছেরটির হদিস মিলেছে ২০১৬ সালে— ‘প্রক্সিমা সেন্টরি বি’।
নোবেলপ্রাপ্তির খবর পেয়ে মেয়া ও কেলজ় বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘এক কথায় অসাধারণ ব্যাপার। আমাদের কর্মজীবনে সবচেয়ে উত্তেজনাময় ছিল ওই আবিষ্কারটি।’’ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্টিন রিসের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মনে হচ্ছে নোবেল পুরস্কারের পরিসরটা এ বার একটু বড় হল। এত দিন পদার্থবিজ্ঞানের নতুন কোনও তত্ত্বের হদিশ দিলে, তবেই মূলত জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্র থেকে কাউকে নোবেল দেওয়া হত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy