আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। -ফাইল ছবি।
পার্থিব প্রাণের অজানা অচেনা ৩টি রূপের হদিশ মিলল মহাকাশে। এই প্রথম। একেবারে নতুন ৩টি রূপে (‘স্ট্রেন’) দেখা গেল একটি অণুজীব (‘মাইক্রোব্স’)-কে। পৃথিবীতে এত দিন অণুজীবের এই রূপগুলির খোঁজ মেলেনি।
অণুজীবের সেই নতুন ৩টি রূপের হদিশ মিলেছে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৭০ কিলোমিটার উপরে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ভিতরে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকা ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন মাইক্রোবায়োলজি’-তে।
গবেষকদলে ৩ ভারতীয় বংশোদ্ভূত
এই আবিষ্কারের সঙ্গে মহাকাশে উড়ল ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের বিজয়পতাকাও। কারণ, আবিষ্কারকদের দলের নেতৃত্বে রয়েছেন সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় বংশোদ্ভূত জিনতত্ত্ববিদ স্বাতী বিজলানি। রয়েছেন নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরি (জেপিএল)-র দুই ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী কস্তুরী ভেঙ্কটেশ্বরণ ও নিতিনকুমার সিংহ। নাসা ও আমেরিকার বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যাঁরা কাজ করছেন যৌথ ভাবে।
নতুন ৩টি রূপই একটি বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার। যাদের ‘দূরের আত্মীয়’রা রয়েছে পৃথিবীতে। কিন্তু এই নতুন ৪টি রূপের দেখা এর আগে মেলেনি পৃথিবীতে। যাদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আইএফ৭এসডব্লিউ-বি২টি’, ‘আইআইএফ১এসডব্লিউ-বি৫’ এবং ‘আইআইএফ৪এসডব্লিউ-বি৫’।
মহাকাশ স্টেশনের কোথায় মিলেছে এদের হদিশ?
‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’-এর পাঠানো প্রশ্নের ই-মেল জবাবে আবিষ্কারক দলের নেত্রী স্বাতী বিজলানি জানিয়েছেন, অণুজীবের এই রূপগুলির হদিশ মহাকাশ স্টেশনে মিলেছে বিভিন্ন সময়ে। মহাকাশ স্টেশনের বিভিন্ন জায়গায়। মহাকাশ স্টেশনের গবেষণাগারের উপর ওভারহেড প্যানেলে মিলেছে অণুজীবের নতুন একটি রূপ। দ্বিতীয় নতুন রূপটি পাওয়া গিয়েছে মহাকাশ স্টেশনে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)-র বানানো অবজারভেটরি ‘কুপোলা’ থেকে। অণুজীবের নতুন তৃতীয় রূপের সন্ধান মিলেছে মহাকাশ স্টেশনের ডাইনিং টেব্লের উপর।
স্বাতীর কথায়, ‘‘অণুজীবের এই তিনটি রূপের কথা এত দিন বিজ্ঞানেরই অজানা ছিল। এই তিনটি রূপের কথা বিজ্ঞানীদের নজরে প্রথম আসে ২০১৫-২০১৬ সালে। অণুজীবের আর একটি রূপের সন্ধান অবশ্য মিলেছিল আরও ৪-৫ বছর আগে। ২০১১-য়। মহাকাশ স্টেশন থেকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা বহু পুরনো ‘হাই-এফিসিয়েন্সি পার্টিকুলেট এয়ার (হেপা)’ ফিল্টারে। তবে এই রূপটির কথা আমাদের আগে জানা ছিল।’’
মহাকাশে গাছ বাঁচাতে এদের কাজে লাগতে পারে
গবেষকদলের সদস্য আরও দুই ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী কস্তুরী ভেঙ্কটেশ্বরণ ও নিতিনকুমার সিংহ জানিয়েছেন, সবক’টি রূপেরই দূরের আত্মীয় ব্যাকটেরিয়ারা রয়েছে পৃথিবীতে। মাটিতে, পরিষ্কার জলে। মানুষের পক্ষে এরা উপকারী ব্যাকটেরিয়া। গাছের পক্ষেও। এরা মাটিতে নাইট্রোজেন সঞ্চয়ে বড় ভূমিকা নেয়। যা গাছের খুবই কাজে লাগে। গাছের বৃদ্ধিতেও এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গাছকে নানা ধরনের কীটের হানাদারি থেকেও বাঁচায় এরা।
‘মহাকাশচারীদের খাদ্যাভ্যাস এদের জন্ম দিতে পারে’
স্বাতী অবশ্য এ-ও বলছেন, ‘‘পার্থিব অণুজীবের এই নতুন ৩টি রূপের হদিশ মহাকাশ স্টেশনে মেলার কারণ হতেই পারে মহাকাশচারীদের খাদ্যাভ্যাস। তাঁরা মহাকাশ স্টেশনে তাঁদের খাদ্যের প্রয়োজনে নানা ধরনের শাকসব্জির গাছ লাগান, তাদের বড় করে তোলেন। সম্ভবত সেই ভাবেই মহাকাশ স্টেশনে এদের উৎপত্তি হয়েছে। আর নতুন ৩টি রূপ হয়েছে প্রায় শূন্য অভিকর্ষ বল (‘মাইক্রোগ্র্যাভিটি’) যেখানে সেই পরিবেশে মানিয়ে নিতে গিয়ে তাদের মিউটেশনের জন্য।’’
স্বাতী জানিয়েছেন, এই নতুন ৩টি রূপের একটিতে (আইএফ৭এসডব্লিউ-বি২টি) এমন কয়েকটি জিন মিলেছে যা গাছেদের বাড়-বৃদ্ধিতে খুব সাহায্য করে। আরও একটি জিন মিলেছে, যা গাছের মূলের কোষ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় সাইটোকাইনাইন তৈরি করতে উৎসেচকের কাজ করে।
স্বাতী, কস্তুরী, নিতিন তিন জনই জানিয়েছেন, অণুজীবের এই নতুন ৩টি রূপ নিয়ে আরও গবেষণা চালানো হবে যাতে আগামী দিনে মঙ্গলে মহাকাশচারীদের মহাকাশচারী বা সভ্যতার দ্বিতীয় উপনিবেশের প্রয়োজনে নানা ধরনের গাছের জন্ম ও তাদের দ্রুত বাড়িয়ে তোলা যায় মহাকাশে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy