মুথায়া বনিতা, রীতু কারিঢাল, চন্দ্রকান্ত কুমার।
রকেট লঞ্চপ্যাডে পৌঁছে গিয়েছে। চন্দ্রযানও প্রস্তুত। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা!
সব ঠিকঠাক থাকলে, আজ, রবিবার গভীর রাতে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে জিএসএলভি রকেটে চন্দ্রযান ২ চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেবে।
দ্বিতীয় যে চন্দ্রাভিযানের সূত্রে মহাকাশ বিজ্ঞানে নতুন শিখর ছুঁতে চাইছে ভারত, তার কান্ডারি দুই মহিলা—মুথায়া বনিতা এবং রীতু কারিঢাল। বনিতা এই অভিযানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর। রীতু উৎক্ষেপণের মিশন ডিরেক্টর। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) অন্দরে বনিতাই একমাত্র মহিলা প্রজেক্ট ডিরেক্টর।
ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার বনিতা এই গোটা অভিযানের মাথায়। ইসরোর অন্দরের খবর, রাশি রাশি তথ্য বিশ্লেষণের দায়িত্ব ঠান্ডা মাথায় ও হাসিমুখে সামলান এই দক্ষিণী মহিলা। ২০১৯ সালে ‘নেচার’ পত্রিকার সেরা বিজ্ঞানী পুরস্কারও পেয়েছেন। তার আগে ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থারও পুরস্কার পেয়েছিলেন। ইসরোর সূত্র বলছে, বনিতা নিভৃতচারিণী। কোনও দিনই সে ভাবে প্রকাশ্যে আসেন না।
এই অভিযানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করা এবং উৎক্ষেপণের দায়িত্ব রীতুর। লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার প্রাক্তন ছাত্রী এবং পরবর্তী কালে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই প্রাক্তনীকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা একবাক্যে বলেন, শান্তশিষ্ট স্বভাবের রীতু কাজের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ‘পারফেকশনিস্ট’। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নাগাড়ে কাজ করে যেতে পারেন। প্রথম চন্দ্রাভিযানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর এম আন্নাদুরাই এক বার বলেছিলেন, “রীতু কোনও দিনই ১০টা-৫টার চাকরি চায়নি।” দুই সন্তানের মা রীতু কিন্তু ছোটবেলার সহপাঠীদের কাছে আবেগপ্রবণ বলেই পরিচিত। ইসরোর অভ্যন্তরে ‘রকেট-মানবী’ বলে পরিচিত রীতু স্কুল ছেড়ে যাওয়ার সময়ে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেছিলেন।
দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের অনেকটাই এ বার সামলাচ্ছেন প্রমীলা বাহিনী। সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় ত্রিশের কাছাকাছি হবে। ছেলেরাও পিছিয়ে নেই। সেই পুরুষ বাহিনীতে রয়েছেন এক বঙ্গসন্তান— হুগলির চন্দ্রকান্ত কুমার।
ইসরো জানিয়েছে, এই চন্দ্রযানের তিনটি অংশ— অরবাইটার, ল্যান্ডার (এটি চাঁদের মাটিতে নামবে। ইসরোর প্রাণপুরুষ বিক্রম সারাভাইকে সম্মান জানিয়ে এর নাম রাখা হয়েছে বিক্রম) এবং রোভার (স্বয়ংক্রিয় গাড়ি। নাম প্রজ্ঞান)। এই তিনটি অংশে মোট তেরোটি যন্ত্র রয়েছে। চাঁদের ভূমিরূপ, আবহাওয়া, ভূকম্প, মাটি ও বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করবে এবং সেই তথ্য পাঠিয়ে দেবে ইসরোর বিজ্ঞানীদের কাছে। যে তথ্য আসবে এবং ইসরোর নির্দেশ যে ভাবে চন্দ্রযানে পৌঁছবে, তার যাবতীয় প্রযুক্তির সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন চন্দ্রকান্ত। এই প্রকল্পের অন্যতম ডেপুটি ডিরেক্টর পদে রয়েছেন তিনি।
‘নজরদার’
অরবাইটারের চোখ
• টেরেন ম্যাপিং ক্যামেরা
• লার্জ এরিয়া সফট এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার
• সোলার এক্স-রে মনিটর
• অরবাইটার হাই রেজ়োলিউশন ক্যামেরা
• ইমেজিং ইনফ্রা রেড স্পেকট্রোমিটার
• ডুয়াল ফ্রিকোয়েন্সি সিন্থেটিক অ্যাপারচার রেডার
• অ্যাটমস্ফেরিক কম্পোজ়িশনাল এক্সপ্লোরার ২
• ডুয়াল ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়ো সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট
বিক্রমের চোখ
• রেডিয়ো অ্যানাটমি অব মুন বোর্ড হাইপারসেন্সিটিভ আয়নোস্ফিয়ার অ্যান্ড অ্যাটমস্ফিয়ার (রম্ভা)
• সারফেস থার্মো-ফিজ়িক্যাল এক্সপেরিমেন্ট
• ইন্সট্রুমেন্ট ফর লুনার সিসমিক অ্যাকটিভিটি
প্রজ্ঞানের চোখ
• আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার
• লেজ়ার ইনডিউজড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ
বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী চন্দ্রকান্ত ২০০১ সাল থেকে ইসরোয় রয়েছেন। প্রথম চন্দ্রাভিযানেও তিনি যুক্ত ছিলেন। চন্দ্রযান এবং ভারতের মাটিতে বসানো যে অ্যান্টেনা, তা নির্মাণদলের প্রধান তিনি। এই অ্যান্টেনা এবং চন্দ্রযানে বসানো রিসিভার ও ট্রান্সমিটারের মধ্যেই রেডিয়ো তরঙ্গ মারফত নির্দেশ ও তথ্য আদানপ্রদান হয়। অর্থাৎ চন্দ্রযান-২ প্রকল্পের স্নায়ুতন্ত্র চন্দ্রেরই হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy