শুরু হয়েছে কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) আর পেট্রোল ডিজেলের কাজিয়া – কোনটায় দূষণ বেশি, কোনটায় কম? কী এই সিএনজি? উচ্চ চাপে জমানো মিথেন গ্যাস, যা জ্বালানি হিসেবে পেট্রোলিয়াম, ডিজেল বা এলপিজি-র পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতে পারে। মিথেন প্রাকৃতিক গ্যাস। তাই দূষণের সম্ভাবনাও কম। কিন্তু সত্যিই কি তাই? ১৫ বছর আগে দিল্লিতে শুরু হয়েছিল সিএনজি-র ব্যবহার। কিন্তু দিল্লির গ্রিন জোনেও বায়ু দূষণ মারাত্মক। অবশ্যই যানবাহন ছাড়াও এর অন্য কারণ রয়েছে। তবে যানবাহনের একটা মুখ্য ভূমিকা তো রয়েইছে।
সিএনজি ব্যবহারে দূষণের মাত্রা কিন্তু শূন্য হয়ে যায় না। দেখা যাচ্ছে, বায়ুদূষণকারী গ্যাসগুলির মধ্যে শুধুমাত্র সালফার ডাই-অক্সাইডের পরিমাণই শূন্যের কাছাকাছি। বাকি কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন সবই কিন্তু বর্তমান; যদিও মাত্রা কিছুটা কম। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব পেট্রোলিয়াম-এর গবেষণায় উঠে এসেছে এক নতুন তথ্য। সিএনজি-র দহনে তৈরি হয় কার্বনের ন্যানো কণা; যার থেকে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়অর্ডার এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা হলে উপায়?
আশার আলো দেখাচ্ছে ব্যাটারি-চালিত গাড়ি। পেট্রোলিয়াম-জাত জ্বালানি দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আর পরিবেশ-দূষণ— এ দুইয়ের মিশেলে ব্যাটারি-চালিত গাড়ির ভাবনা শুধুমাত্র আজকের নয়, এ ভাবনা মাথা চাড়া দিয়েছিল উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। তখন রাস্তায় চলত বাষ্প-চালিত আর গ্যাসোলিনের গাড়ি। গ্যাসোলিনের গাড়িতে হ্যান্ড ক্র্যাঙ্ক না ঘোরালে তার যাত্রা শুরুই করা যেত না। তার ওপর ছিল গিয়ার পাল্টানোর সমস্যা। এ দুটি কাজের জন্য কুস্তিগীরের মতো ক্ষমতার প্রয়োজন হত। বাষ্প-চালিত গাড়িতে অবশ্য গিয়ার পাল্টানোর ঝামেলা না থাকলেও, ইচ্ছে করলেই কিন্তু তাকে সচল করা যেত না; এর জন্য প্রায় এক ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হত। কারণ জল গরম হবে, বাষ্প তৈরি হবে, তার পরে গাড়ি চলবে। আবার রাস্তার মাঝে জল ফুরিয়ে গেলে বয়লারে বারবার জলও ভরতে হত। আর সেখান থেকেই শুরু ব্যাটারি-চালিত গাড়ির ভাবনা।
তখনও রিচার্জেবল ব্যাটারির সে রকম উন্নতি হয়নি। তাই প্রথম দিকে ব্যাটারি-চালিত গাড়িতে এক বার ব্যবহার করা যায়, এমন ব্যাটারিই চলত; বার বার সেগুলোকে চার্জ করা যেত না; ফলে একটানা লম্বা দূরত্ব পাড়ি দেওয়াটা বেশ জটিল সমস্যা ছিল। শহরের মধ্যে সীমিত কিছু এলাকাতেই মাত্র এ জাতীয় গাড়ির গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত ছিল। পরে অবশ্য এর একটি বিকল্প ব্যবস্থাও প্রচলিত হয়— সেটি হল ব্যাটারি-বদল। ব্যাটারি-চালিত গাড়িকে সে যুগে তথাকথিত উঁচু শ্রেণির মানুষজনের যান বলেই ভাবা হত।
ইতিমধ্যেই আবিষ্কার হল বৈদ্যুতিক স্টার্টার; ক্র্যাঙ্ক শ্যাফ্টের আর প্রয়োজন রইল না; এল গাড়ির শব্দ কমানোর নতুন প্রযুক্তি— সাইলেন্সার। হদিশ পাওয়া গেল নতুন পেট্রোলিয়াম ভাণ্ডারের। আবিষ্কার হল অন্তর্দহন ইঞ্জিন; আর মানুষও ভুলতে বসল ব্যাটারি-চালিত গাড়িকে। ১৯২০ সাল নাগাদ বন্ধই হয়ে গেল ব্যাটারি-চালিত গাড়ি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জ্বালানিতে টান পড়তেই ব্যাটারি-চালিত গাড়ির ভাবনাটা আবার নতুন করে জেগে উঠল। শ্লথ গতির সমস্যা এড়াতে এ বার ব্যাটারি-চালিত গাড়িতে ব্যবহার করা হল ৩৬ ভোল্ট বা ৭২ ভোল্টের ব্যাটারি। ৭২ ভোল্টে চালিত গাড়ির গতিবেগ পৌঁছল প্রায় ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়; এই ব্যাটারি এক বার চার্জ করে নিলে এই গাড়িগুলো টানা এক ঘণ্টা চলার ক্ষমতা রাখত। কিন্তু অত্যধিক দামের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে সে ভাবে জনপ্রিয় হল না এ গাড়িও। ব্যাটারি-চালিত গাড়ির দুনিয়ায় এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটল কোল্ড ওয়ার জমানায়। ১৯৭১য় চাঁদের মাটিতে চলল ব্যাটারি-চালিত গাড়ি। এই ঘটনা মানুষকে উৎসাহিত করল ব্যাটারি-চালিত গাড়িতে।
সত্তরের দশকের শেষভাগ থেকেই জীবাশ্ম জ্বালানির সঙ্কট আর পেট্রোলিয়ামের দহন থেকে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ বিজ্ঞানীদের ভাবাতে শুরু করেছিল— ফলে বিকল্প জ্বালানির সন্ধান শুরু হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং ঘুরে ফিরে আবার সেই ব্যাটারি-চালিত গাড়ির কথাই ভাবতে হল; কারণ ব্যাটারি-চালিত গাড়িতে দূষণের সম্ভাবনা প্রায় নেই।
ভারত সরকার ব্যাটারি-চালিত গাড়ি নিয়ে গভীর ভাবনাচিন্তা শুরু করে ২০১৩ সালে। জ্বালানি-সংরক্ষণ আর পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের সমন্বয় ঘটানোর জন্য সে বছর প্রণীত হয় ‘ন্যাশনাল ইলেকট্রিক মোবিলিটি মিশন প্ল্যান ২০২০’। লক্ষ্য, ২০৩০-এর মধ্যে শুধুমাত্র ব্যাটারি-চালিত গাড়ি বাজারে আনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy