সেই অভিনব মাইক্রোনিড্ল। ছবি সৌজন্যে: খড়্গপুর আইআইটি।
কোভিড টিকা নিতে যাতে কোনও ব্যথাই না লাগে, সে জন্য এই প্রথম মাইক্রোনিড্ল বানিয়ে ফেলা সম্ভব হল ভারতে। যা আমাদের চুলের চেয়েও সরু। এত সূক্ষ্ণ মাইক্রোনিড্ল এর আগে আমাদের দেশে বানানো যায়নি। এর ফলে, ইঞ্জেকশনের জন্য আর সিরিঞ্জ লাগবে না।
আর ব্যথাহীন ভাবে সেই মাইক্রোনিড্লের মাধ্যমে যাতে ওষুধ ঠেলে আমাদের শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তার জন্য বানানো হল মাইক্রোপাম্পও।
আক্ষরিক অর্থেই অভিনব এই দু’টি উদ্ভাবন করেছে খড়্গপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি)’-র ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’ এবং ‘আইইইই’-তে। গবেষণাটি হয়েছে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের আর্থিক সহায়তায়।
ইঞ্জেকশনের সূচ দেখলেই ভয়!
আমরা ডাক্তারকে জানিয়ে বা না জানিয়ে টপাটপ ট্যাবলেট, সিরাপ খেতে ভালবাসি। কিন্তু যতই বয়স বাড়ুক না কেন, টিকা নেওয়া বা কোনও ওষুধ শরীরে ঢোকানোর প্রয়োজনে ডাক্তার, নার্সদের হাতে ইঞ্জেকশনের সূচ দেখলেই ভয়ে আমাদের চোখ আর দম বন্ধ হয়ে আসে। অসম্ভব যন্ত্রণার আশঙ্কায়। সূচ ফোটানোর মুহূর্তটুকু কেটে যাওয়ার পরেও যন্ত্রণা সইতে হয়ে আমাদের বেশি ডোজ আর বড় অণুর (‘লার্জ মলিকিউল’) ওষুধ আমাদের শরীরে ঢোকানো হলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম- ‘ট্রান্সডার্মাল ড্রাগ ডেলিভারি’।
মূল গবেষক অধ্যাপক তরুণকান্তি ভট্টাচার্য।
শরীরের যে জায়গা দিয়ে সেই ওষুধ ঢোকানো হল, নার্সরা ডলে ডলে সেই জায়গাটিকে স্বাভাবিক করে তুলতে তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর তত ক্ষণ ধরেই আমাদের যন্ত্রণা সহ্য করে যেতে হয় প্রায় দম বন্ধ করে।
আইআইটি-র গবেষকদের কাজের অভিনবত্ব
ইঞ্জেকশন নেওয়ার সেই ভয় দূর করতে গত কয়েক দশক ধরেই গবেষণা চলেছে আমেরিকা-সহ পৃথিবীর নানা দেশে। ‘পেইনলেস ইঞ্জেকশন ডিভাইস’ আমেরিকাতে চালুও হয়েছে। চালু হয়েছে আরও কয়েকটি দেশে। ভারতেও গত কয়েক বছরে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে তা সর্বজনীন করা সম্ভব হয়নি। ইঞ্জেকশন দেওয়ার প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি যন্ত্রণাহীন করাও সম্ভব হয়নি, প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অপ্রতুলতায়।
আরও পড়ুন- মঙ্গলের আকাশ ভরে যাবে ড্রোনে-কপ্টারে, জানাল নাসা
আরও পড়ুন- সূর্যের করোনার প্রথম মানচিত্র আঁকলেন দুই বাঙালি
খড়্গপুরের আইআইটি-র গবেষকদের অভিনবত্ব এখানেই। তাঁরা শুধুই যে সেই সূচের ব্যাস অপ্রত্যাশিত ভাবে কমিয়ে চুলের চেয়েও সরু করে তুলতে পেরেছেন, তাই নয়; সূচ যাতে পল্কা না হয়, তার জন্য তার শক্তিও বাড়িয়ে দিতে পেরেছেন কয়েক গুণ। ফলে, ত্বকের নীচে ঢোকানোর সময় সেই সূচ ভেঙেও যাবে না।
নার্ভ ছোঁবেই না, ভাঙবেও না...
মূল গবেষক খড়্গপুর আইআইটি-র ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক তরুণকান্তি ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘একটা চুলের চেয়েও সরু হওয়ায় এই মাইক্রোনিড্ল শরীরে ফোটানো হলে বিন্দুমাত্র যন্ত্রণা অনুভূত হবে না। কারণ, এই সূচ আকারে এতই ছোট আর সরু যে তা আমাদের শরীরের স্নায়ুগুলিকে (‘নার্ভ’) ছুঁতেই পারবে না। আর সেগুলি খুব মজবুত করে বানাতে পেরেছি আমরা। তাই ত্বকের নীচে ঢোকানোর সময় সেই সূচ ভেঙেও যাবে না।’’
মাইক্রোনিড্ল ও মাইক্রোপাম্প। সদ্য উদ্ভাবিত ডিভাইসের থ্রিডি-প্রিন্টেড ছবি।
তরুণ জানিয়েছেন, মাইক্রোনিড্লগুলির বাইরের ব্যাস মাত্র ৫৫ মাইক্রোমিটার। আর ভিতরের ব্যাস সাকুল্যে ৩৫ মাইক্রোমিটার। বাজারে চালু মাইক্রোনিড্লগুলির চেয়ে ৮ গুণ মজুবত করে এই সূচগুলি বানানো হয়েছে। যার ‘স্টিফনেস’ প্রায় ৫ গুণ (৪.৮ গুণ)। ত্বকে ভেদন-শক্তি ৪১৮ গুণ বেশি। ইল্যাস্টিকের মতো প্রয়োজনে নিজেকে বাঁকিয়েচুরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বাজারে চালু মাইক্রোনিড্লের চেয়ে ৩৬৩ গুণ বেশি এই সূচের। এই সূচের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ০.০১২ মাইক্রোলিটার তরল শরীরে ঢোকানো যাবে। সোনার পাত বসানো যে মাইক্রোপাম্পটি বানানো হয়েছে, তার মাধ্যমে প্রতি মিনিটে ৩০ মাইক্রোলিটার করে ওষুধ ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে মাইক্রোনিড্লের মধ্যে থাকা ‘রিজার্ভার’-এ।
কোভিডের টিকা যখন আর কয়েক মাসের মধ্যেই বাজারে আসতে চলেছে, আর সেই টিকা যখন আমাদের সকলকেই নিতে হবে কোনও না কোনও দিন, তখন কোনও যন্ত্রণা ছাড়াই তা নেওয়ার আলো দেখালেন খড়্গপুর আইআইটি-র গবেষকরা।
ছবি সৌজন্যে: খড়্গপুর আইআইটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy