হিমালয়ের কোলে উত্তর সিকিমের প্রাকৃতিক হ্রদ ‘গুরুদোংমার লেক’। ছবি-শাটারস্টক।
যে কোনও মুহূর্তে ভেসে যেতে পারে হিমালয়ের অন্তত ৫ হাজার হ্রদ। আর সেই বরফ গলা জলে টইটম্বুর হ্রদগুলি ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে হিমালয়ের কোলে থাকা গ্রাম ও জনপদগুলিকে। ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে গঙ্গা-সহ হিমালয় পর্বতমালা থেকে বেরিয়ে আসা নদীর অববাহিকাগুলিকে। এই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটতে পারে এই দশকেই।
‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে শনিবার এই খবর দিয়েছেন ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যান্টার্কটিক অ্যান্ড ওশ্ন রিসার্চ (এনসিএওআর)’-এর অধিকর্তা মুথালাগু রবিচন্দ্রন।
তিনি জানিয়েছেন, এই ভয়াবহ ভবিষ্যতের অশনি সংকেত দেওয়া হয়েছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে। যা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (পিএনএএস বা পিনাস)’-এ।
হিমালয়ের কোলে পূর্ব সিকিমের প্রাকৃতিক হ্রদ ‘ছাঙ্গু লেক’। ছবি- শৌভিক দেবনাথ।
পূর্ব হিমালয়ে ভয়াল বন্যার আশঙ্কা অন্য প্রান্তের ৩ গুণ!
গবেষকদের অন্যতম জার্মানির পোস্টড্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক জর্জ ভেহ্ ও অলিভার কোরুপ ই-মেলে ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে জানিয়েছেন, হিমালয় পর্বতমালার অন্যান্য অংশের চেয়ে এই ভয়াল বন্যার আশঙ্কা সিকিম হিমালয়-সহ গোটা পূর্ব হিমালয়ে অন্তত ৩ গুণ বেশি।
পূর্ব হিমালয়ের এই অংশেরই হ্রদ ভেসে গিয়ে ঘটাবে ভয়াল প্লাবন।
পরিবেশ দূষণের ফলে যে ভাবে উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে উষ্ণায়ন, তাতে গত দু’-তিন দশক ধরেই দ্রুত হারে গলতে শুরু করেছে হিমালয় পর্বতমালার ‘গ্লেসিয়ার’ বা হিমবাহগুলি। হিমবাহের বরফ গলা জলের স্রোতই আশপাশের মাটি ও নুড়ি, পাথরগুলিকে ভাসিয়ে নিয়ে এসে হিমালয়ের কোলে ওই প্রাকৃতিক হ্রদগুলি তৈরি করেছে।
যে ভাবে হিমালয়ের হিমবাহ গলে গিয়ে সুবিশাল হ্রদের জন্ম দিচ্ছে, ভিডিয়ো
উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়ের হিমবাহগুলি এত বেশি সংখ্যায় এত দ্রুত গলতে শুরু করেছে যে সেই প্রাকৃতিক হ্রদগুলি হয়ে পড়েছে বিশাল। শুধুই চেহারার নিরিখে নয়, হিমালয়ের কোলের সেই প্রাকৃতিক হ্রদগুলির গভীরতাও কম নয়।
গত দশকে সিকিম হিমালয়েই এমন হ্রদ হয়েছে ৮৫টি
আগের একটি গবেষণা জানিয়েছিল, এই দশকেই হিমালয়ের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ হিমবাহের বরফের বেশির ভাগটাই গলে যাবে।
রবিচন্দ্রনের কথায়, ‘‘হিমালয়ের হিমবাহগুলির বরফ গলে যাওয়ার ফলে শুধু সিকিম হিমালয়েই ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে ৮৫টি সুবিশাল হ্রদের জন্ম হয়েছে।’’
কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন, হিমবাহগুলি উষ্ণায়নের জেরে যে ভাবে গলতে শুরু করেছে, তাতে বরফ গলা জলের তোড়ে হ্রদগুলির জলকে ঘিরে থাকা মাটি ও নুড়ি-পাথরের দেওয়ালগুলি ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, ‘মোরেন’।
ভয়াল বন্যা এই দশকেই!
অন্যতম গবেষক আরিয়েন ভাল্জ ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে ই-মেলে লিখেছেন, ‘‘এর ফলে, এই দশকেই হিমালয় পর্বতমালার একটি বড় অংশে হতে চলেছে ভয়াল বন্যা। যাকে ভূতত্ত্ববিদ্যার পরিভাষায় বলা হয়, গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড (জিএলওএফ বা গ্লফ)।’’
হিমালয়ের হিমবাহের বরফ গলে যাওয়ার ফলে গত দু’দশকে এমন ভয়াল বন্যা ওই এলাকা ও তার সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে হয়েছে বেশ কয়েক বার।
রবিচন্দ্রন জানাচ্ছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য হিমালয়ের হিমবাহগুলির বরফ দ্রুত হারে গলে যাওয়ার ফলে কী ভয়াবহ ভবিষ্যত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, তা বুঝতে আর তার ভিত্তিতে পূর্বাভাস দিতে হিমবাহগুলির সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে যতগুলি ‘মডেল’ রয়েছে, সবক’টি নিয়েই কম্পিউটারে সিম্যুলেশন করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকরা। গবেষণায় তাঁরা বিভিন্ন উপগ্রহের পাঠানো তথ্যাদিরও সাহাষ্য নিয়েছেন।
মূল গবেষক জর্জ ভেহ্ বলেছেন, ‘‘হিমালয়ের কোলে যে হ্রদগুলি বেশি গভীর, যে হ্রদগুলিতে বরফ গলা জল রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে, মূলত সেই হ্রদগুলির দেওয়ালই ভেসে গিয়ে ভয়াল বন্যার (‘গ্লফ’) কারণ হবে। আর সেই আশঙ্কাটা হিমালয় পর্বতমালার অন্যান্য অংশের তুলনায় পূর্ব হিমালয়েই বেশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy