টিকাকরণে তো খামতি নেই। কোভিড টিকা দেওয়ার কাজ রীতিমতো জোরকদমে চলছে গত এক বছর ধরে। ভারত-সহ বিশ্বজুড়ে। তবু কেন সংক্রমণের ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব?
একই ছবি কলকাতা-সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গের। এ রাজ্য কোভিড টিকাকরণে যথেষ্টই এগিয়ে রয়েছে। এ সপ্তাহ থেকে কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে শুরু হয়েছে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের টিকাদানও।
তবু কেন করোনা সংক্রমণের ধাক্কায় ফের বেসামাল অবস্থা? কেন সংক্রমণের ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ গোটা বিশ্বই?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এর একটি কারণ অবশ্যই ওমিক্রন। করোনাভাইরাসের এই রূপটি এত বার নিজেকে বদলেছে আর তার ফলে এত বেশি সংক্রামক হয়ে উঠেছে, যা আলফা, বিটা বা ডেল্টার মতো অন্য রূপগুলির পক্ষে সম্ভব হয়নি। অক্টোবরের শেষ থেকে গত তিন মাসে ওমিক্রন দেখিয়ে দিয়েছে, সে যতটা সংক্রামক হয়ে উঠতে পারছে কোভিডকে ভয়াবহ পর্যায়ে কিন্তু ততটা পৌঁছে দিতে পারছে না। ফলে, ওমিক্রন সংক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা করোনার অন্য রূপগুলির তুলনায় কম ঘটছে।
বিশেষজ্ঞরা এও জানিয়েছেন, যে সময়ে ওমিক্রনের সংক্রমণ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে ঠিক সেই সময়টা গোটা বিশ্বেই ছুটি বা অবকাশযাপনের সময়। যাকে বলা হয় ‘হলিডে সিজ্ন’। মানুষ যখন ছুটির আনন্দে বিভোর, জমায়েতের উপর আর তেমন কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, ঠিক তখনই ওমিক্রন সংক্রমিত হতে শুরু করেছে।
অনেকেরই বিষয়টি ভাবনাচিন্তার বাইরে ছিল। কারণ, অনেকেরই বদ্ধমূল ধারণা ছিল, আছেও— কোভিড টিকার সবক’টি পর্ব নেওয়া থাকলে কোভিড আর ধারেকাছে আসার সাহস পাবে না!
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এটিই সবচেয়ে ভুল ধারণা। এই ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে থাকার জন্যই ওমিক্রন সংক্রমণের উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আমাদের হতাশ হয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে।
আদত কথা হল, কোভিড টিকা কখনওই করোনা সংক্রমণকে পুরোপুরি রুখে দেবে না। রুখে দিতে পারবে না। সেই লক্ষ্য নিয়ে কোভিড টিকা বানানোও হয়নি। কোভিড টিকার এক ও একমাত্র উদ্দেশ্য, সংক্রমণ যাতে কিছুতেই ভয়াবহ না হয়ে ওঠে। তা যেন মৃত্যুর কারণ হয়ে না ওঠে। সে জন্য শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলা। প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি করা আর তাকে যতটা সম্ভব বেশি দিন স্থায়ী করে তোলা।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বাজারে চালু সবক’টি কোভিড টিকাই সেই কাজ ঠিকঠাক ভাবে করে চলেছে। যে টিকাগুলির সঙ্গে বুস্টার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে তারা এই কাজটি আরও ভাল ভাবে করতে পারছে।
ফাইজার, মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকাগুলির ক্ষেত্রে এ কথা যেমন সত্যি, তেমনই তা সত্যি কোভিশিল্ড বা কোভ্যাক্সিন বা স্পুটনিকের ক্ষেত্রেও।
কোভি়ড টিকা মানবদেহে যে ভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জাগিয়ে তুলতে পেরেছে, তাতে শুধু ওমিক্রন কেন, এর পরেও করোনাভাইরাসের আরও সংক্রামক রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটলে সেগুলিও এই টিকার জন্যই আর ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারবে না। এমনই জানাচ্ছেন টিকা বিশেষজ্ঞরা।