প্রতীকী ছবি। -শাটারস্টকের সৌজন্যে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মানুষের বীর্যে (‘সিমেন’) শুক্রাণুর সংখ্যা (‘স্পার্ম কাউন্ট’) অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। শুক্রাণুর সংখ্যা শূন্যেও নামিয়ে আনতে পারে। ইটালির ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা এই উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-গবেষণা পত্রিকা ‘হিউম্যান রিপ্রোডাকশান’-এ। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
সংক্রমণ মুক্ত হয়ে ওঠার এক মাস পর কোভিড রোগীদের বীর্য পরীক্ষা করে দেখেছিলেন গবেষকরা। যাঁদের বীর্য পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাঁদের বয়স ৩০ বছর থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে।
এই বয়সি ৪৩ জনের বীর্যের নমুনা পরীক্ষা করে গবেষকরা দেখেছেন, অন্তত ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে কমে গিয়েছে কোভিড সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার মাসখানেক পরে।
কম করে ২০ শতাংশের বীর্যের নমুনায় কোনও শুক্রাণুই পাওয়া যায়নি। গবেষকদের ধারণা, কোভিড সংক্রমণের ফলে তাঁদের বীর্যে শুক্রাণু পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বীর্যে কোনও শুক্রাণু না থাকলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় সেই রোগটিকে বলা হয় ‘অ্যাজুস্পার্মিয়া’। গোটা বিশ্বেই অ্যাজুস্পার্মিয়া রোগীদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা দেখিয়েছে, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশই ভোগেন এই রোগে।
এর আগে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাড়ি বা আশপাশে প্লাস্টিক ও কীটনাশকের খুব বেশি ব্যবহার, কোনও যৌন রোগ বা সংক্রমণ, মানসিক চাপ, অবসাদ, শরীরের স্থূলতা, নিদ্রাহীনতা অথবা খুব বেশি সময় ধরে টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে মজে থাকলে মানুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা যথেষ্টই কমে যায়।
গবেষকরা দেখেছেন, সংক্রমণ মুক্ত হয়ে ওঠার মাসখানেক পর অন্তত ২০ শতাংশ কোভিড রোগী অ্যাজুস্পার্মিয়ার শিকার হয়েছেন। গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, যাঁদের সংক্রমণ অল্প হয়েছিল তাঁদের বীর্যে শুক্রাণু পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা তেমন ঘটেনি। কিন্তু যাঁদের সংক্রমণ খুব বেশি হয়েছিল, হাসপাতালে বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে যাঁদের বেশ কয়েক দিন কাটাতে হয়েছিল সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার জন্য, তাঁদের অনেকেই অ্যাজুস্পার্মিয়ার শিকার হয়েছেন।
তবে গবেষকরা অবশ্য জোর দিয়ে বলেননি কোভিড সংক্রমণের জন্যই মানুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গিয়েছে। আসলে তাঁরা এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেননি। কারণ, সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার পর যাঁদের বীর্যের নমুনা তাঁরা পরীক্ষা করে দেখেছিলেন, সংক্রমণের আগে তাঁদের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কত ছিল সেই তথ্যাদি তাঁরা পাননি। তবে এটা তাঁরা দেখেছেন, সুস্থ, সবল মানুষের বীর্যে স্বাভাবিক অবস্থায় যতগুলি শুক্রাণু থাকা উচিত, সদ্য কোভিড সংক্রমণ মুক্ত হওয়া রোগীদের অনেকেরই বীর্যে সেই সংখ্যায় শুক্রাণু ছিল না। আর কিছু দিন আগেও তাঁরা বাবা হয়েছেন। ফলে কিছু দিন আগেও যে তাঁদের বীর্যে কোনও শুক্রাণুই ছিল না, তা কিন্তু নয়। এর থেকে গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, এই কোভিড রোগীরা আগে অ্যাজুস্পার্মিয়ার শিকার হননি। হলে, তাঁরা সন্তানের জন্ম দিতে পারতেন না। কিন্তু কোভিড সংক্রমণ মুক্ত হয়ে ওঠার এক মাস পরেই তাঁদের বীর্যে কোনও শুক্রাণুর খোঁজ মেলেনি।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, যে কোনও শারীরিক দুর্বলতার পরিণতিতেই মানুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যেতে পারে। কমে যায়ও। কোভিড সংক্রমণের ক্ষেত্রেও তা হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণই মানুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমায় বা শূন্য করে দেয়, এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত হতে গেলে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy