Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Science News

চার বছরের মধ্যেই চাঁদের পাড়ায় ‘বাড়ি’ বানাচ্ছে নাসা!

চাঁদের পিঠ (লুনার সারফেস) থেকে বড়জোর ৩০০ কী ৪০০ কিলোমিটার উপরে। ইচ্ছে করলেই সেই ‘ফ্ল্যাট’ থেকে বেরিয়ে ঝুপ্‌ করে নেমে পড়া যাবে চাঁদের বুকে। চাঁদের মাটি, পাথর পরীক্ষাটরিক্ষা করার জন্য কিছু ক্ষণ থাকা যাবে। তার পর কাজ শেষ হলেই ফিরে আসা যাবে চাঁদের পাড়ার সেই ফ্ল্যাটে। চাঁদের কক্ষপথে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ১৬:৩৫
Share: Save:

একেবারে চাঁদের পাড়াতেই দুই বা তিন বেডরুমের ‘বাড়ি’! বেডরুম দু’টি বা তিনটি হলেও, চাঁদ মুলুকের সেই ‘আশ্রয়’-এ জায়গা থাকবে যথেষ্টই। এখন বিশ্বকাপ ফুটবল হয় যে চেহারার মাঠে, লম্বায় তার প্রায় অর্ধেক হবে সেই ‘বাড়ি’। একেবারে ঝকঝকে তকতকে। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস নেই। নেই কোনও জীবাণুর হামলার ভয়। মহাকাশের যাবতীয় বিকিরণের হাত থেকে বাঁচার সব রকমের ‘রক্ষাকবচে’ই তা মুড়ে রাখা থাকবে।

চাঁদের পিঠ (লুনার সারফেস) থেকে বড়জোর ৩০০ কী ৪০০ কিলোমিটার উপরে। ইচ্ছে করলেই সেই ‘বাড়ি’ থেকে বেরিয়ে ঝুপ্‌ করে নেমে পড়া যাবে চাঁদের বুকে। চাঁদের মাটি, পাথর পরীক্ষাটরিক্ষা করার জন্য কিছু ক্ষণ থাকা যাবে। তার পর কাজ শেষ হলেই ফিরে আসা যাবে চাঁদের পাড়ার সেই ‘বাড়ি’তে। চাঁদের কক্ষপথে। ফিরে আসা যাবে পৃথিবীতে আরও গভীরতর পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য।

গেটওয়ে টু মুন!

হ্যাঁ, চাঁদের পাড়ায় এ বার এমনই একটি মহাকাশ স্টেশন বানাচ্ছে নাসা। প্রথম ‘লুনার স্পেস স্টেশন’। নাসার ওই প্রকল্পের নাম- ‘গেটওয়ে টু মুন’ বা ‘আর্টেমিস’। পাসাডেনা থেকে ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির (জেপিএল) ‘ইউরোপা’ (বৃহস্পতির চাঁদ) মিশনের টিম লিডার সিনিয়র সায়েন্টিস্ট গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

চাঁদেই রকেটের লঞ্চপ্যাড!

নাসার ভাবনা আরও বড়। প্রাণে বাঁচতে পৃথিবী থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সভ্যতাকে চলে যেতে হবে ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলে। টানা সাত মাসের পথ। যাওয়ার হ্যাপাও কম নয়। জ্বালানির খরচও বেশি পৃথিবীর জোরালো অভিকর্ষ বলের মায়া কাটিয়ে বেরিয়ে পড়ার জন্য। চাঁদের অভিকর্ষ বল পৃথিবীর ৬ ভাগের এক ভাগ। তাই পৃথিবীর চেয়ে সেই ‘মায়া’র টানটাও অনেকটাই কম চাঁদের। ফলে, মঙ্গল, শুক্র, বৃহস্পতি, শনি, নেপচুন-সহ সৌরমণ্ডলের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে যতটা কম খরচে সম্ভব যেতে চাঁদকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে নাসার।

পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরিতে ‘ইউরোপা মিশনে’র টিম লিডার গৌতম চট্টোপাধ্যায়

গৌতমের কথায়, ‘‘নাসার ভাবনা, এখন যেমন পৃথিবী থেকে নানা ধরনের রকেটের পিঠে চাপিয়ে মহাকাশযানগুলির উৎক্ষেপণ হয়, এক দিন সেটা আর করতে হবে না। সেই কাজটাই করা হবে চাঁদ থেকে। চাঁদ হয়ে উঠবে সৌরমণ্ডলের বিভিন্ন গ্রহে যাওয়ার জন্য আমাদের এক ও একমাত্র ‘ট্রান্সপোর্টেশন হাব’। তাতে জ্বালানির সাশ্রয় হবে অনেকটাই, চাঁদের অভিকর্ষ বলের টান পৃথিবীর তুলনায় বেশ হাল্কা বলে। তার জন্য অবশ্য সুবিশাল লঞ্চপ্যাড বানাতে হবে চাঁদের বুকে। তার মালমশলা বার বার পৃথিবী থেকে নিয়ে যাওয়ার ঝক্কিটাতো কম নয়। খরচও অনেক। সেই কাজটাই চাঁদের কক্ষপথে থাকা লুনার স্পেস স্টেশন থেকে করার ভাবনা রয়েছে নাসার।’’

আরও পড়ুন- হুগলির চন্দ্রকান্তের তৈরি অ্যান্টেনার ভরসায় ফের চাঁদের কক্ষপথে ঢুকছে ইসরো​

আরও পড়ুন- স্বপ্ন ছিল কালামের, খনিজ খুঁজতে চলল চন্দ্রযান-২

তবে আপাতত, তা দূরের ভাবনা। তার আগে দরকার চাঁদের কক্ষপথে স্পেস স্টেশনটাকে বানিয়ে ফেলা। মানে চাঁদে পৌঁছনোর ‘গেটওয়ে’টাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বানিয়ে ফেলা।

কী কী হবে নাসার ‘গেটওয়ে টু মুন’ প্রকল্পের প্রথম দফায়? বোঝাচ্ছেন নাসার প্রধান জিম ব্রিড্‌নস্টাইন

লুনার স্পেস স্টেশনের ‘ফেজ-ওয়ান’ ২০২২/’২৩-এর মধ্যেই

গৌতম ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে জানিয়েছেন, তার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন আমরা স্পেস স্টেশন বলতে যা বুঝি, সেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) রয়েছে পৃথিবী থেকে বড়জোর ৩৭০ কিলোমিটার উপরে। আর লুনার স্পেস স্টেশনটা নাসাকে বানাতে হচ্ছে পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার কিলোমিটার দূরে।

২০১৯ থেকে ২০২৪: লুনার স্পেস স্টেশনের কাজ যে ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে নাসা

গৌতমের কথায়, ‘‘কাজটা খুব দ্রুত শেষ করে ফেলতে চাইছে নাসা। চাইছে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হোক ২০২২/’২৩ সালের মধ্যেই। আর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে ‘ফেজ-টু’ বা শেষ পর্যায়ের কাজটা ২০২৮-এর মধ্যেই হয়ে যাক। মানে, মার্কিন প্রশাসন যা চাইছে, কাজগুলি ঠিক সেই ভাবে এগিয়ে গেলে ২০২৮ সালের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে লুনার স্পেস স্টেশন।’’

সেই ‘বাড়ি’র স্পেস ফুটবল মাঠের অর্ধেক

পৃথিবীর মহাকাশ স্টেশনের মতো অত বড় চেহারার হবে না লুনার স্পেস স্টেশন। বলা ভাল, হবে তার অর্ধেক। পৃথিবীর মহাকাশ স্টেশনে রয়েছে ৬টি বেডরুম। মানে, এক সঙ্গে ৬ জন মহাকাশচারী গিয়ে সেখানে থাকতে পারেন অনায়াসে। কিন্তু গৌতম জানাচ্ছেন, লুনার স্পেস স্টেশনে বেডরুমের সংখ্যা হবে বড়জোর দু’টি। বা তিনটি। দু’জনের বেশি মহাকাশচারীকে সেখানে এক সঙ্গে রাখার পরিকল্পনা নেই নাসার। বাকি জায়গাটায় থাকবে খুব বড় বড় সোলার প্যানেল। লুনার স্পেস স্টেশনের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎশক্তির চাহিদা মেটাতে।

নাসার ভাবনা। চাঁদের বুকে সভ্যতার সর্বাধুনিক প্রযুক্তির পদচিহ্ন।

প্রস্তুতি কতটা এগিয়েছে নাসার?

গৌতম বলছেন, ‘‘অনেকটাই। যার পিঠে চাপিয়ে চাঁদের কক্ষপথে লুনার স্পেস স্টেশন গড়ে তোলার জন্য পাঠানো হবে ক্যাপসুল, সেই ‘এসএলএক্স রকেট’ ইতিমধ্যেই বানানো হয়েছে। বানানো হয়ে গিয়েছে ‘ওরায়ন-২’ ক্যাপসুলও। রকেট আর ক্যাপসুলটিকে নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরুর কথা ছিল গত জুনে। তা হয়নি, পূর্ণাঙ্গ বাজেট-বরাদ্দের প্রস্তাব এখনও মার্কিন কংগ্রেসে পাশ হয়নি বলে। তবে এই বছরেই তা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যথেষ্টই। কারণ, তা না হলে, লুনার স্টেশন গড়ে তোলার জন্য প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০২২/’২৩ সালের মধ্যে শেষ করে ফেলা যাবে না।’’

আরও পড়ুন- চাঁদে যেতে সঙ্গে নিন মাটি, পকোড়া...​

আরও দেখুন- ভারতই প্রথম! চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামবে চন্দ্রযান-২, দেখুন এর খুঁটিনাটি​

আর ৯ বছরেই বসবাস শুরু চাঁদ-মুলুকে!

হাতে সময় আর মাত্র তিনটি বছর। চাঁদের পাড়ায় সেই তিন বেডরুমের ‘বাড়ি’র পয়লা দফার কাজ শেষ হওয়ার জন্য। আর ৯ বছরের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে সেই ‘বাড়ি’তে মহাকাশচারীদের বসবাসও!

ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: জেট প্রোপালসাল ল্যাবরেটরি, নাসা

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy