Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Stephen Hawking

কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে হকিংয়ের তত্ত্ব সঠিক, প্রমাণ মিলল প্রায় অর্ধশতাব্দী পর

সাতের দশকের একেবারে গোড়ার দিকে হকিং বলেছিলেন রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলের চেহারা উত্তরোত্তর বাড়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কিছুতেই কমে যেতে পারে না। এটাই হকিংয়ের ‘ব্ল্যাক হোলস’ এরিয়া থিয়োরেম’।

স্টিফেন হকিং। -ফাইল ছবি।

স্টিফেন হকিং। -ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২১ ১৩:০৮
Share: Save:

ঠিকই বলেছিলেন স্টিফেন হকিং। প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী হকিংয়ের একটি পূর্বাভাসকে সঠিক প্রমাণ করল ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। ৫০ বছরের মাথায়।

আর সেটা সম্ভব হল ব্রহ্মাণ্ডের সুদূরতম প্রান্ত থেকে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীতে পৌঁছনো মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মাধ্যমে। যা পৃথিবীতে এই বার্তা পৌঁছে দিল যে, কোনও ব্ল্যাক হোলের ভবিষ্যতের চেহারাটা কেমন হতে পারে তা নিয়ে হকিংয়ের পূর্বাভাসে কোনও ভুলচুক ছিল না।

কোনও পুকুরের মাঝখানে ঢিল ফেললে যেমন জলে তরঙ্গের জন্ম হয় আর তা ধীরে ধীরে আরও বড় আকার নিয়ে যেমন পাড়ে পৌঁছয়, ঠিক তেমনই ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও কোনও ঘটনা বা দুই মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে সংঘর্ষের ফলেও তৈরি হয় মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। যা কয়েকশো কোটি বছরের পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীতে পৌঁছলে জানা যায় সেই সুদূর অতীতে ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল।

গত শতাব্দীর সাতের দশকের একেবারে গোড়ার দিকে হকিং বলেছিলেন, রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলের চেহারা উত্তরোত্তর বাড়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কিছুতেই কমে যেতে পারে না। এটাই হকিংয়ের ‘ব্ল্যাক হোলস’ এরিয়া থিয়োরেম’।

ব্ল্যাক হোলের চেহারা বলতে বোঝায় সেই ‘খাবারের থালা’ যার কানাটার নাম ‘ইভেন্ট হরাইজন’। এই ইভেন্ট হরাইজনের সীমানা পেরিয়ে কোনও ব্ল্যাক হোলের আশপাশে থাকা গ্যাসের মেঘ বা নক্ষত্ররা ঢুকে পড়লে অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বলের টান এড়িয়ে তারা আর বেরিয়ে আসতে পারে না। বেরিয়ে আসতে পারে না এমনকি আলোও। তাই সে কৃষ্ণগহ্বর।

ব্ল্যাক হোলের মধ্যে কোনও কিছু ছুড়ে দেওয়া হলে সেটা গোগ্রাসে খেয়ে নেয় ব্ল্যাক হোল। তাতে তার ওজন বাড়ে। বাড়ে সেই ‘থালা’র আকারও। কিন্তু এটাও ঘটনা, যারা এসে পড়ছে ব্ল্যাক হোলের জ্বালামুখে, তারা এক ধরনের ঘূর্ণির জন্ম দেয় রাক্ষসের দেহে। যার জেরে সেই ‘থালা’র আকার ছোট হতে পারে। কিন্তু সাতের দশকে হকিংই প্রথম তাঁর তত্ত্বে বলেছিলেন, ছোট হয়ে যাওয়ার থালার আকার বৃদ্ধির পরিমাণই বেশি। তাই গোগ্রাসে খেতে খেতে উত্তরোত্তর ব্ল্যাক হোলের আকার বাড়ে। তা কিছুতেই আকারে ছোট হয়ে যেতে পারে না।

হকিংয়ের সেই তত্ত্বকেই এ বার পরীক্ষামূলক ভাবে প্রমাণ করলেন ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-র একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী। ৬ বছর আগে আমেরিকার ‘লাইগো’ অবজারভেটরিতে প্রথম ধরা পড়া কোনও মহাকর্ষীয় তরঙ্গের বয়ে আনা বার্তা বিশ্লেষণ করে। যে বার্তাটি ছিল কয়েকশো কোটি বছর আগে ব্রহ্মাণ্ডের দূরপ্রান্তে দুটি ব্ল্যাক হোলের মধ্যে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষের। সেই ধাক্কাধাক্কিতে দু’টি ব্ল্যাক হোল একটিতে পরিণত হয়েছিল। তার ফলে যে প্রচণ্ড আলোড়ন হয়েছিল ব্রহ্মাণ্ডে কয়েকশো কোটি বছর পর তারই বার্তা বয়ে এনেছিল ৬ বছর আগে পৃথিবীতে পৌঁছনো মহাকর্ষীয় তরঙ্গ।

এমআইটি-র গবেষকরা দেখেছেন, সেই সংঘর্ষের পর নতুন যে ব্ল্যাক হোলটি তৈরি হয়েছিল তার চেহারা ধাক্কাধাক্কি করা দু’টি ব্ল্যাক হোলের চেয়ে বড়। এতেই প্রমাণ হল, ৫০ বছর আগে হকিংয়ের তত্ত্ব ছিল একেবারেই সঠিক।

যা এটাও প্রমাণ করল, এই ব্রহ্মাণ্ড উত্তরোত্তর এগিয়ে চলেছে আরও বেশি বিশৃঙ্খলার দিকে। বিজ্ঞানের পরিভাষায়, যার নাম ‘এনট্রপি’।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy