জয়ী ৪ অধ্যাপক। সুরজিৎ ধাড়া, ( বাঁ দিক থেকে) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, রজতশুভ্র হাজরা ও জ্যোতির্ময়ী দাস। -গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দেশের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান সম্মান ‘শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার’ জয়ীদের তালিকায় এ বছর জয়জয়কার বাঙালিরই। সাতটি বিভাগে মোট ১৪ জন পুরস্কারজয়ীর মধ্যে ৬ জনই বাঙালি। আর এক জনের কাজের জায়গা বরাবরই কলকাতা। বিবাহসূত্রেও তিনি বাঙালি পরিবারের।
শনিবার দিল্লির ‘বিজ্ঞান ভবন’-এ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)’-এর ৭৯তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে এ বছরের ভাটনগর পুরস্কারজয়ীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রতিটি বিভাগেই এ বার পুরস্কার ভাগাভাগি হয়েছে দু’জনের মধ্যে।
নাম ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের আওতায় থাকা সিএসআইআর-এর ডিরেক্টর জেনারেল শেখর মান্ডে বলেছেন, ‘‘ভারতে এই পুরস্কারকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সর্বোচ্চ সম্মানের মর্যাদা দেওয়া হয়।’’
বাঙালি: ঘরে ও বাইরে
পুরস্কারজয়ী ৬ জন বাঙালির মধ্যে ২ জন পশ্চিমবঙ্গের। আর এক জনের জন্ম ওড়িশায় হলেও কর্ম ও বিবাহসূত্রে তিনি কলকাতারই।
গণিতে পুরস্কারজয়ী বরাহনগরের ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই)’-এর অধ্যাপক রজতশুভ্র হাজরা। রসায়নে কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্সেস (আইএসিএস)’-এর অধ্যাপক জ্যোতির্ময়ী দাস। আর ভূবিজ্ঞানে খড়্গপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি' (আইআইটি খড়্গপুর)-র অধ্যাপক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।
পুরস্কারজয়ীদের বাকি চার জনই কর্মসূত্রে বাংলার বাইরে থাকা বাঙালি। এঁদের মধ্যে রয়েছেন পদার্থবিজ্ঞানে জয়ী সুরজিৎ ধাড়া। তিনি হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। রয়েছেন মুম্বইয়ের ‘ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার (বার্ক)’-এর অধ্যাপক কিংশুক দাশগুপ্ত। তিনিও সম্মান পেয়েছেন পদার্থবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিতেই।
জীববিজ্ঞানে দুই পুরস্কারজয়ীর অন্যতম শুভদীপ চট্টোপাধ্যায় হায়দরাবাদের ‘সেন্টার ফর ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং অ্যান্ড ডায়াগনিস্টিক্স (সিডিএফডি)’-র অধ্যাপক। আর ভূবিজ্ঞানে যিনি আর এক বাঙালি অভিজিতের সঙ্গে পুরস্কার ভাগাভাগি করেছেন, তিনি মুম্বইয়ের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি বোম্বে)’-র অধ্যাপক সুর্যেন্দু দত্ত।
এ বার যেমন চিকিৎসা বিজ্ঞানে ও ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্সে পুরস্কারজয়ীদের মধ্যে নেই কোনও বাঙালির নাম, তেমনই পদার্থবিজ্ঞান ও ভূবিজ্ঞানে পুরস্কারজয়ী ৪ জনই বাঙালি।
অধ্যাপক সুরজিৎ ধাড়া
পদার্থবিজ্ঞানে দুই পুরস্কারজয়ীর অন্যতম হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুরজিৎ ধাড়ার বাড়ি তারকেশ্বরের দেউলপাড়ার কাছে একটি গ্রামে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে বেঙ্গালুরুর রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউটে পিএইচডি ও বিদেশে পোস্ট ডক্টরালের পর তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র হয়ে ওঠে তরল কেলাস। ‘লিকুইড ক্রিস্টাল’।
‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে বললেন, ‘‘এলইডি টেলিভিশন, মোবাইল, ল্যাপটপের ছবি আরও ঝকঝকে করে তুলতেই আমার হাতিয়ার তরল কেলাস। এর আরও নানা ধরনের প্রয়োগ হতে পারে।’’
অধ্যাপক জ্যোতির্ময়ী দাশ
রসায়নে পুরস্কারজয়ীদের অন্যতম কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্সেস (আইএসিএস)’-এর অধ্যাপক জ্যোতির্ময়ী দাশের জন্ম ওড়িশার জগৎসিংহপুরে। কানপুর আইআইটি থেকে পিএইচডি করার পর জ্যোতির্ময়ী পোস্ট ডক্টরাল করেন জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনে। তবে তার পর তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গেই। মোহনপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার কলকাতা)’-এ। সেখানে বেশ কয়েক বছর কাটিয়ে যোগ দেন যাদবপুরের আইএসিএস-এ। বিবাহসূত্রেও জ্যোতির্ময়ী বাঙালি পরিবারের।
জ্যোতির্ময়ী জানালেন, তাঁর কাজের ক্ষেত্র ডিএনএ এবং আরএনএ-র গঠনকাঠামো (‘স্ট্রাকচার’) ও তাদের কাজকর্ম (‘ফাংশন’) নিয়ে। তার জন্য তাঁরা অভিনব একটি উপায় উদ্ভাবন করেছেন। যার প্রয়োগে আগামী দিনে আরও কার্যকরী ক্যানসারের ওষুধ বানানো যেতে পারে।
অধ্যাপক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়
ভূবিজ্ঞানে দুই বাঙালি পুরস্কারজয়ীর অন্যতম খড়্গপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি খড়্গপুর)-র অধ্যাপক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় কালিঘাটের ছেলে। সাউথ পয়েন্ট স্কুল থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে তিনি পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরালের জন্য চলে যান আমেরিকায়। তার পর কিছু দিন চাকরিও করেন কানাডায়। আইআইটি-তে এসেছেন ১০ বছর আগে।
অভিজিৎ বললেন, ‘‘আমার কাজের ক্ষেত্র ভূগর্ভস্থ জল নিয়ে। জলের আর্সেনিক তার একটি দিক। গঙ্গার উত্তরোত্তর শুকিয়ে যাওয়া নিয়েও আমার গবেষণা রয়েছে।’’
অধ্যাপক রজতশুভ্র হাজরা
বরাহনগরের ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই)’-এর অধ্যাপক রজতশুভ্র হাজরা এ বছর গণিতে পুরস্কারজয়ী দু’জনের এক জন।
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর আইএসআই-তে পিএইচডি করেন রজতশুভ্র। তার পর পোস্ট ডক্টরাল সুইট্জারল্যান্ডের জুরিখে।
বললেন, ‘‘আমি বিভিন্ন গাণিতিক মডেল বানিয়েছি প্রোবাবিলিটি নিয়ে। যা আগামী দিনে সোশ্যাল মিডিয়ার মতো বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ককে আরও ভাল ভাবে বোঝার সহায়ক হবে।’’
গণিতে আইএসআইয়েরই ট্র্যাডিশন: অধ্যাপক সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়
‘‘গণিতে এর আগের বছরও ভাটনগর পুরস্কার পান আইএসআই-এর অধ্যাপক নীনা গুপ্তা। তার আগেও গণিতে অনেকেই ভাটনগর পেয়েছেন আইএসআই থেকে। আমি পেয়েছিলাম আরও আগে ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্সে। সে দিক থেকে বলব, গণিতে আইআএসআই থেকে ভাটনগর পুরস্কার পাওয়াটা যেন ট্র্যাডিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে’’, বললেন আইএসআই-এর পূর্বতন অধিকর্তা মেশিন ইন্টেলিজেন্স বিভাগের অধ্যাপক সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy