দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত গ্রামে বাঘের আক্রমণে ডান কাঁধ থেকে মাংস খুবলে হাত প্রায় খুলে বেরিয়ে এসেছিল যুবকের। ঝুলতে থাকা সেই হাত নিয়ে কলকাতার তিন সরকারি হাসপাতালে ভর্তির জন্য ঘুরে বেড়াতে হয়েছে তাঁকে। শেষে প্রায় ৩২ ঘণ্টা পরে অস্ত্রোপচার হয়েছে অজয় কয়াল নামে ৩৮ বছরের ওই যুবকের। কিন্তু অস্ত্রোপচারের এক সপ্তাহ পরেও সাড় ফেরেনি ডান হাতে। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, অস্ত্রোপচারে দেরির জেরে নষ্ট হতে বসেছে তাঁর ওই হাত।
শুক্রবার স্বাস্থ্যভবনে এই অভিযোগ জানিয়ে অজয়বাবুর স্ত্রী অনুমতি কয়াল স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে জানতে চেয়েছেন ‘‘কলকাতা থেকে দূরের কোনও গ্রামে কারও যদি জরুরি ভিত্তিতে এমন অস্ত্রোপচারের দরকার পড়ে, তা হলে কি তাঁর একই পরিণতি হবে? এ ছাড়া, চাষবাস করে দিন গুজরান করা অজয়বাবু পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। তাঁর ডান হাত নষ্ট হওয়ায় এ বার গোটা পরিবারের পেটই বা চলবে কী করে?’’
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বিগ্ন মন্তব্য, “হাসপাতালের চিকিৎসকদের কখনও কড়া কথায়, কখনও ভাল কথায় বোঝানোর চেষ্টা করছি। তা-ও যদি তাঁরা এত গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ভর্তি নিতে গড়িমসি করেন, তা হলে কী হবে বোধগম্য হচ্ছে না। কর্মসংস্কৃতিটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” যে হাসপাতালে অজয়বাবুর অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেই এসএসকেএমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র বলেন, “মারাত্মক আহত এই রোগীর তো অন্তত ঘটনার ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে ভাস্কুলার সার্জারি করা দরকার ছিল। তা না হলে সার্জারিতে কাজ হবে না। কেন এত দেরি হল আমরা তদন্ত করছি।”
কী ভাবে আহত হলেন অজয়বাবু? কেন একাধিক সরকারি হাসপাতাল তাঁকে ভর্তি নিতে আপত্তি করল? এসএসকেএমের কার্ডিওথোরাসিক ভবনের দোতলার ৩৫ নম্বর শয্যায় বাঘে খোবলানো শরীর নিয়ে বসে অজয়বাবু জানালেন, গত ২৯ নভেম্বর, শনিবার সকালে কুলতলির কাঁটামারি গ্রামে নিজের খেতে ধান কাটছিলেন। পাশের খেতে কাজ করছিলেন বন্ধু চিত্তরঞ্জন সরকার। কিন্তু ধানগাছের আড়ালেই যে বাঘ লুকিয়ে রয়েছে, টের পাননি তাঁরা। আচমকা বিদ্যুতের মতো কালো-হলুদ ডোরা কাটা জন্তুটা প্রথমে চিত্তরঞ্জনবাবুর উপরে ঝাঁপায়। পড়ে যান তিনি। অজয়বাবু পালানোর আগেই বাঘটি লাফিয়ে পড়ে তাঁর ডান কাঁধে। জ্ঞান হারান তিনি। যখন জ্ঞান আসে, তখন তাঁরা দু’জনই জয়নগর গ্রামীণ হাসপাতালে। দুপুর পেরিয়ে গিয়েছে। শুধু ক্ষতস্থানে সেলাই দিয়ে ব্যান্ডেজ করা। সেখান থেকে দু’জনকে আনা হয় এমআর বাঙুরে।
বাঙুর হাসপাতালের সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “ওঁরা হাসপাতালে এসে পৌঁছন শনিবার সন্ধ্যায়। চিত্তরঞ্জনবাবুর অবস্থা কিছুটা ভাল ছিল। অস্ত্রোপচার দরকার ছিল না। ওঁকে আমরা ভর্তি করি। কিন্তু অজয়বাবুর হাতটা কাঁধ থেকে আলগা হয়ে ঝুলছিল। দ্রুত ভাস্কুলার সার্জারি দরকার ছিল। আমাদের জেলা হাসপাতালে ওই সার্জারির ব্যবস্থা নেই। তাই ওঁকে রেফার করতে হয়। হাতে প্রেসার ব্যান্ডেজ করে স্যালাইন দিয়ে হাসপাতালের মাতৃযানে করেই পাঠিয়ে দিই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু ওঁরা যে রোগীকে ফিরিয়ে দেবে, ভাবতে পারিনি।”
রোগীর বাড়ির লোক ও বাঙুর হাসপাতালের কর্মীদের অভিযোগ, যন্ত্রণায় বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন অজয়বাবু। ওই অবস্থায় ন্যাশনালের চিকিৎসকেরা ইমার্জেন্সিতে রাত একটা পর্যন্ত রোগীকে অপেক্ষায় রাখেন, তার পরে জানিয়ে দেন, ভাস্কুলার সার্জন বাড়ি চলে গিয়েছেন, রোগীকে ভর্তি নেওয়া যাবে না। ন্যাশনালের সুপার পীতবরণ চক্রবর্তীর যুক্তি, “২৯ তারিখের কথা জানি না। তবে ন্যাশনালে এক জন মাত্র ভাস্কুলার সার্জন, তাই কোনও ইমার্জেন্সি ভাস্কুলার সার্জারি করা হয় না।”
ন্যাশনাল অজয়বাবুকে ভর্তি না করায় ওই মাতৃযানেই রোগীকে বাঙুরে ফেরত আনা হয়। তাঁকে পাঠানো হয় এসএসকেএমে। অভিযোগ, তারাও অত রাতে রোগী ভর্তি নিতে চায়নি। বহু টালবাহানার পরে ভোরে ভর্তি নেওয়া হয় অজয়বাবুকে। কিন্তু তার পরে রবিবার সারা দিন তাঁর হাতে অস্ত্রোপচার হয়নি। হয় রবিবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ। তার পর থেকে আর হাতে সাড় ফেরেনি অজয়বাবুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy